ঢাকা রবিবার, ০১ জুন, ২০২৫

ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায় যেসব রাজনৈতিক দল

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২৫, ১২:১৫ পিএম
নির্বাচন কমিশন ভবন। ছবি- সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কবে- এই প্রশ্নে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা ও মতবিভেদ। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের আশ্বাস দিলেও অধিকাংশ রাজনৈতিক দল তাতে আস্থা রাখতে পারছে না।

বিএনপি স্পষ্টভাবে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দাবি করে আসছে। দলটির হাইকমান্ড থেকেও বলা হয়েছে, এটি এখন আর কৌশলগত নয়, বরং স্পষ্ট অবস্থান। বিএনপির সঙ্গে একই দাবিতে রয়েছে আরও ৫২টি দল। এর মধ্যে নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (বিজেপি), গণঅধিকার পরিষদ, সিপিপি, বাসদ, এনডিএমসহ বেশকিছু নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে।

অন্যদিকে, প্রধান উপদেষ্টা সম্প্রতি জাপান সফরে গিয়ে মন্তব্য করেছেন, সব দল নয়, শুধু একটি রাজনৈতিক দলই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়- যা সরাসরি বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা।

ডিসেম্বরে নির্বাচন চান যারা 

গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা মনে করি ডিসেম্বরে ভোট করা যায়। সরকার চাইলে নির্বাচন করতে পারে। সেটা যুক্তিসংগতও হবে। আর সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি যে প্রত্যাশা ছিল- তা ৯ মাসের পারফরম্যান্সে নেই।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ডিসেম্বর তো বটেই তার আগেও নির্বাচন করা সম্ভব। সরকার অপ্রয়োজনীয় কালক্ষেপণের ধারণা তৈরি করছে। নির্বাচন শুধু বিএনপির দাবি নয়, বরং জনগণের দাবি।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ বলেন, একটি দল নয়, প্রায় সব দলই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। এলডিপিও চায় ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। এ নিয়ে টালবাহানার কোনো সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, আমরা মনে করি, এখন দেশের যে পরিস্থিতি সবকিছু মিলিয়ে ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়াটাই জাতির জন্য মঙ্গলজনক। আরও আগে যদি সম্ভব হয় আরও ভালো। ডিসেম্বর হচ্ছে ডেডলাইন।

জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, আমরা চাই যত শিগগিরই সম্ভব জাতীয় নির্বাচন। ডিসেম্বর তো পরের কথা। যদি অক্টোবরে দিতে পারে তাহলে তা দিক।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে আমরা কোনো সমস্যা দেখি না। যদিও ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক অবস্থা নিয়ে কমফোর্টেবল না বলে জানিয়েছেন।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, শুধু একটি দল শুধু ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চায় এ কথাটি সঠিক নয়। এখন বলাই যায়, নতুন একটি দল তৈরি হওয়ার জন্য তারা নির্বাচন পেছাতে চায়। যারা সরকারের সুবিধা পাচ্ছেন তারা ছাড়া বাকিরা চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায়।

১২ দলীয় জোট, এলডিপি, গণফোরামসহ আরও বেশ কয়েকটি দলও বিবৃতি দিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান বলেছেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন না চাওয়ার অভিযোগটি সঠিক নয়। সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচন দিন।

অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নির্বাচন নিয়ে কিছুটা ভিন্ন মত পোষণ করছে। তারা ডিসেম্বরের ‘তাড়াহুড়ো’ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে রোজার আগে ফেব্রুয়ারি অথবা পরে এপ্রিলের কথা বলছে। ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ বলেছেন, আগে তিন মাসের মধ্যে সংস্কার ও বিচার দৃশ্যমান হোক, তারপর নির্বাচন হোক মার্চ বা এপ্রিলের দিকে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নির্বাচনকে বিচার ও সংস্কারনির্ভর প্রক্রিয়া হিসেবে দেখতে চায়। তারা একটি পরিষ্কার রোডম্যাপ দাবি করেছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি ও জামায়াতসহ নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত ৬৪টি রাজনৈতিক দল। এই নির্বাচনের পরে বিএনপি এপ্রিল মাস থেকে ধারাবাহিক বৈঠকের মাধ্যমে অন্তত ৬০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসে। তাদের অধিকাংশই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত দেয়। এদের মধ্যে প্রায় ৩০টি দল নিবন্ধিত।