ঢাকা সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫

যে যত বড় ক্ষমতাবানই হোক, আইনের ঊর্ধ্বে নয় : জামায়াত

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২৫, ০৪:৪১ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়া স্বচ্ছ-নিরপেক্ষ ও প্রশ্নাতীতভাবে আন্তর্জাতিক মানের হয়েছে বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বলছে, যে যত বড় ক্ষমতাবানই হোক না কেন, আইনের ঊর্ধ্বে নয় তা এই রায়ে প্রতিষ্ঠিত হলো। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর হয়তো ক্ষতিপূরণ সম্ভব না, তবে আজকের এই রায়ে কিছু স্বস্তি তাদের হৃদয়ে এসেছে। কারণ সুবিচার তারা দেখতে পেল।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিকেল সোয়া ৩টার দিকে পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার রায়ের ওপর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে মগবাজারে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি আইনের শাসন এবং বিচারের ইতিহাসে একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন আজ। কারণ কোনো একজন সরকার প্রধানের সর্বোচ্চ সাজার রায় হলো। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম। এটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। দীর্ঘ সময় ধরে বিচারকরা রায় পড়েছেন সেখানে ফুটে উঠেছে যে অপরাধীরা কি পরিমাণ নিষ্ঠুর-ঘৃণ্য-প্রতিহিংসামূলক অপরাধ করেছে। পত্রপত্রিকা, অডিও-ভিডিও ও তাদের টেলিফোনিক কনভারসেশনের যে সমস্ত তথ্য হুবহু ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়েছে, রায়ের মধ্যে কোট-আনকোট সেগুলো পড়ে শোনানো হয়েছে।

সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, আমরা মনে করি এই বিচারের ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ কারো নেই। কারণ বিচার স্বচ্ছ-নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের হয়েছে। এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের নামে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের বিচার হয়েছে। সেই বিচার নিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা দুনিয়াতে এটা প্রশ্নবিদ্ধ, আন্তর্জাতিক মানের হয়নি। সে বিচারের বাদী সাজানো, এজহার সাজানো, মামলা সাজানো, সাক্ষী সাজানো, বিচারক সাজানো, রায় সাজানো আদালতের চত্বর থেকে সাক্ষীকে গুমের বিষয়গুলো নতুন করে উত্থাপন করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, যাদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে, আয়নাঘরে খুন করে ক্রসফায়ারে বিভিন্নভাবে শেষ করা হয়েছে, পিলখানা-শাপলা চত্বর, আরও বিচার প্রক্রিয়া তো সামনে আছে। এটা প্রথম রায় আমরা পেলাম। সেজন্য আমরা মনে করি সবগুলোরই নিরপেক্ষ স্বচ্ছ বিচার হওয়া উচিত। আজকের রায়ের মধ্য দিয়ে অন্তত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো যারা পিতা হারিয়েছে, স্বামী হারিয়েছে, সন্তান হারিয়েছে তাদের ক্ষতির পূরণ হয়তো কোনোদিন হবে না, কিন্তু কিছুটা স্বস্তি তাদের হৃদয়ে এসেছে। একটা সুবিচার তারা দেখতে পেল। 

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমি মনে করি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের যারা জুডিশিয়ারিতে থাকবেন ম্যাজিস্ট্রেসিতে থাকবেন বিচারের এই বিরাট জিম্মাদারি সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে মানুষের জীবন মৃত্যুর ফয়সালার মতো দুনিয়ার বিচারের দায়িত্ব যারা গ্রহণ করবেন এই রায় থেকে এই বিচারকদের প্রসিকিউশনে যারা ছিলেন তাদের দৃঢ়তা সাহসিকতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। যেন আমাদের দেশে আর কখনো বিচারক হোক প্রশাসক হোক কেউ যেন ফ্যাসিবাদী না হয়ে ওঠেন, কর্তৃত্ববাদী না হয়ে ওঠেন অত্যাচারী না হয়ে ওঠেন।

প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন— জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, ড. এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সেলিম উদ্দিন।