ঢাকা সোমবার, ০৯ জুন, ২০২৫

কেন সিঙ্গাপুরই ‘পালানোর’ গন্তব্য হাসিনার চাচার?

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৯, ২০২৫, ১১:৪৪ এএম
শেখ হাসিনার চাচা শেখ কবির। ছবি-সংগৃহীত

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা শেখ কবির হোসেন এবার সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমিয়েছেন। রোববার (৮ জুন) সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে একটি ফ্লাইটে তিনি দেশত্যাগ করেন। অনেকটা গোপনে দেশের বাইরে যাওয়ার এ তথ্য সোমবার (৯ জুন) সকালে ইমিগ্রেশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, শেখ কবির হোসেনের বিরুদ্ধে অর্থপাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে দীর্ঘদিন দখলদারি রাখার অভিযোগ রয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রভাবশালী একটি মহলের সহায়তায় তিনি নির্বিঘ্নে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন শেখ কবির হোসেন ছিলেন অর্থ ও বীমা খাতসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে। তিনি ২০১১ সাল থেকে একটানা বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি ছিলেন। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হওয়ায় তার অধীনে বিআইএর কোনো নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ছাড়া তিনি ছিলেন—বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সদস্য, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের গভর্নিংবডির সদস্য, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে জড়িত, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)-এর চেয়ারম্যান।

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, দেশত্যাগের আগে কোনো উচ্চপর্যায়ের বাধার মুখে পড়তে হয়নি শেখ কবিরকে।

ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, রোববার সকালে শেখ কবির হোসেন একটি ফ্লাইটে দেশত্যাগ করেন। অথচ তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তারপরও প্রভাবশালী মহলের চাপের কারণে তাকে বিদেশ যেতে দেওয়া হয় বলে দাবি ওই কর্মকর্তার।

এখন বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রভাব খাটিয়ে নানা অনিয়ম করা শেখ হাসিনার চাচার গন্তব্য কেন সিঙ্গাপুরেই? তিনি কি বয়সজনিত কারণে দেশটিতে চিকিৎসাসেবা নেওয়ার জন্য গিয়েছেন? না কি তার বিরুদ্ধে থাকা একাধিক মামলা থেকে রেহাই পেতে পালিয়েছেন?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ–সিঙ্গাপুরের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি (extradition treaty) নেই, ফলে আইনগতভাবে তাকে ফেরানোর বাধ্যবাধকতা নেই। প্রতিবেশী কোনো দেশে গেলে সহজেই সম্ভাব্য প্রত্যর্পণের মুখোমুখি হতে লাগতে পারে; কিন্তু সিঙ্গাপুরে ঢুকলেই তা কঠিন হয়ে যায়। তাই তিনি হয়তো সিঙ্গাপুরকেই গন্তব্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

এ ছাড়া অনেকের ধারণা, শেখ কবির হোসেনের বয়স অনেক (আনুমানিক ৮২–৯৫ বছর)। এই বয়সে সিঙ্গাপুরে উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের উদ্দেশ্যেই তিনি যেতে পারেন।