বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরাশক্তির খেলা শুরু হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘জুলাই ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সাংবাদিকের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদ সাংবাদিক পরিবারের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।
তিনি বলেন, দিল্লির আধিপত্যবাদের কালো থাবা আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, কূটনীতি এমনকি আসন্ন নির্বাচন পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে ধূলায় মিশিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র এখনও চলছে। যখনই দেশে নির্বাচন ও সরকার পরিবর্তনের সময় আসে, তখনই পরাশক্তির খেলা শুরু হয় এখনও আমরা সেই চিত্র দেখছি।
গোলাম পরওয়ার অভিযোগ করেন, ‘ইনক্লুসিভ নির্বাচন’-এর নামে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় আনার চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, নতুন নতুন তত্ত্ব আনা হচ্ছে, রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ, ইনক্লুসিভ নির্বাচন ইত্যাদির নামে জনগণ ও রাজনৈতিক শক্তিকে ব্যবহার করে চক্রান্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী দুঃশাসন ও ব্যক্তি হাসিনা বিদায় নিলেও স্বস্তির সুযোগ নেই। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো সক্রিয়। ফলে একজন ব্যক্তি বিদায় নিলেও দেশে ফ্যাসিজম এখনো টিকে আছে।

নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ প্রক্রিয়ার পথে বারবার অদৃশ্য শক্তি বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন জামায়াত নেতা। যখনই নিরপেক্ষ নির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরি হয়, তখনই কেউ না কেউ সেটিকে ব্যাহত করার চেষ্টা করে। যারা সামনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ আটকে দিতে চাইবে, তাদের ফ্যাসিবাদী উত্থান প্রতিহত করা হবে।
তিনি জানান, জামায়াত সরকারঘোষিত নির্বাচনের সময়সীমার প্রতি আস্থাশীল। তবে এই নির্বাচন যেন আওয়ামী লীগ আমলের মতো না হয়, সে নিশ্চয়তাও প্রয়োজন।
ঐকমত্য কমিশন নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যুক্তি-তর্ক চলছে। মতপার্থক্য থাকলেও তা যেন বিভেদে রূপ না নেয়।
জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে এখনো সময় শেষ হয়নি। নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে এখনই মৌলিক বিষয়গুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।
গোলাম পরওয়ার অভিযোগ করেন, কিছু কিছু গণমাধ্যম ও কর্পোরেট হাউজ রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ভূমিকা রাখছে। একটি কথা এমনভাবে পরিবেশন করা হয়, যা জাতিকে বিভ্রান্ত করে। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিইউজে সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম। আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই সিকদার, দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, সহসভাপতি এ কে এম মহসিন, প্রবাসী সাংবাদিক ইমরান আনসারী, ডিইউজের সহসভাপতি রাশেদুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক এম সাইদ খান, কোষাধ্যক্ষ খন্দকার আলমগীর হোসেন প্রমুখ।
আপনার মতামত লিখুন :