ফজরের নামাজ শুধু দিনের শুরুতেই নয়, বরং একজন মুমিনের আত্মিক জাগরণের চাবিকাঠি। কোরআনে আল্লাহ তাআলা ফজরের গুরুত্বের বিষয়ে শপথ করেছেন—‘শপথ ফজরের।’ (সুরা ফজর: ১)
রাসুলুল্লাহ (সা.) এবং সাহাবিদের জীবনে ফজরের নামাজ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাদিস শরিফে এই নামাজের অসংখ্য ফজিলত ও পুরস্কারের কথা বর্ণিত হয়েছে। নিচে ফজরের নামাজ আদায়ের ১০টি বিশেষ ফজিলতের কথা তুলে ধরা হলো-
১. সারা রাত নামাজ পড়ার সওয়াব
রাসুল (সা.) বলেন- “যে ব্যক্তি জামাতে এশার নামাজ পড়ল, সে যেন অর্ধেক রাত নামাজে কাটাল। আর যে ফজরের নামাজ জামাতে পড়ল, সে যেন পুরো রাত নামাজে কাটাল।” (মুসলিম: ১৩৭৭)
২. দুনিয়া ও তার সবকিছুর চেয়ে উত্তম
নবীজি (সা.) বলেছেন- “ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) নামাজ দুনিয়া ও তার সমস্ত কিছু থেকেও উত্তম।” (মুসলিম: ১৫৭৩)
৩. আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকা
হাদিসে এসেছে- “যে ফজরের নামাজ আদায় করল, সে আল্লাহর জিম্মায় (রক্ষণাবেক্ষণে) থাকে।” (মুসলিম: ১৩৭৯)
৪. জাহান্নাম থেকে নিরাপত্তা
রাসুল (সা.) বলেন- “যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের আগে (ফজর) ও সূর্যাস্তের আগে (আসর) নামাজ আদায় করে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।” (মুসলিম: ১৩২২)
৫. মুনাফিকদের পরীক্ষা
নবীজি (সা.) বলেন- “মুনাফিকদের জন্য সবচেয়ে ভারী নামাজ ফজর ও এশা। যদি তারা জানত এ দুই নামাজে কী ফজিলত, তবে হামাগুড়ি দিয়েও উপস্থিত হতো।” (বুখারি: ৬৫৭)
৬. সর্বোত্তম ‘গণিমত’ অর্জন
এক যুদ্ধ অভিযানের উদাহরণ দিয়ে রাসুল (সা.) বলেন- “তোমাদের বলি, এমন একটি দলের কথা যারা অল্প সময়েই প্রচুর উত্তম গণিমতসহ ফিরে আসে—তারা হল তারা যারা ফজরের নামাজে জামাতে হাজির হয়, তারপর সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর জিকিরে থাকে।” (তিরমিজি: ৩৬৪১)
৭. পূর্ণ নুরের সুসংবাদ
হাদিসে এসেছে- “রাতের অন্ধকারে যারা মসজিদে যাতায়াত করে, তাদের জন্য কিয়ামতের দিনে পূর্ণ নূরের সুসংবাদ দাও।”
(ইবনে মাজাহ: ৭৮১)
৮. ফেরেশতাদের সাক্ষী
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন- “আসর ও ফজরের সময় ফেরেশতারা পালাবদল করে। তারা আল্লাহর দরবারে জানায়—‘আমরা বান্দাদের নামাজরত অবস্থায় পেয়েছি এবং সেই অবস্থাতেই ছেড়ে এসেছি।’” (বুখারি: ৫৫৫)
৯. আল্লাহর দর্শন লাভের প্রতিশ্রুতি
নবীজি (সা.) এক রাতে চাঁদের দিকে ইশারা করে বলেন- “তোমরা যেমন করে চাঁদকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছ, তেমনি কিয়ামতের দিন তোমরা তোমাদের প্রভুকে দেখতে পাবে।” (এই দর্শনের সুসংবাদ ফজরের নামাজ আদায়কারীদের জন্য।)
১০. শয়তানের বন্ধন মুক্ত হয়
নবী (সা.) বলেন- “যখন কেউ ঘুমায়, শয়তান তার ঘাড়ে তিনটি গিঁট লাগায়। জেগে আল্লাহকে স্মরণ করলে একটি, অজু করলে আরেকটি, নামাজ পড়লে তৃতীয় গিঁট খুলে যায়। তখন সে সকালের শুরুটা করে প্রাণবন্ত চিত্তে। আর না জাগলে থাকে উদাসীন ও অলস।” (বুখারি: ১১৪২)
ফজরের নামাজ কেবল দিনের সূচনাই নয়, বরং তা একজন মুমিনের আত্মশুদ্ধির এবং জান্নাতের পথে অগ্রসরণের দৃঢ় পদক্ষেপ। ফজরের নামাজ জামাতে পড়ার মাধ্যমে মুমিন আল্লাহর আশ্রয় লাভ করে, ফেরেশতাদের প্রশংসা পায় এবং পরকালীন জীবনে নূরের আলোয় পথ চলার যোগ্যতা অর্জন করে।
আসুন, আমরা ফজরের এই বরকতময় নামাজের গুরুত্ব উপলব্ধি করে তা যথাযথভাবে আদায় করার অভ্যাস গড়ে তুলি।
আপনার মতামত লিখুন :