ইসলামী শরিয়তে কোরবানির পশু নির্বাচনের ক্ষেত্রে গরুর ওজন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ পশুটির স্বাস্থ্যের উপর ভিত্তি করে তার ওজন নির্ধারণ করা হয়। শরিয়ত কোনো নির্দিষ্ট ওজনের বাধ্যবাধকতা না দিলেও, পশুটি যেন সুস্থ, বলীয়ান ও কোরবানির উপযুক্ত হয় সেটাই প্রধান বিবেচনা।
পশুর ওজন মাপার জন্য সাধারণত গরুর বুকের চারপাশের ঘের ও দৈর্ঘ্য মাপা হয়, যা থেকে আনুমানিক ওজন নির্ণয় করা যায়। এই পদ্ধতি শরিয়তের দৃষ্টিকোণে গ্রহণযোগ্য, কারণ এটি পশুর স্বাস্থ্য ও যথার্থতা যাচাই করতে সাহায্য করে।
শরীয়তে কোরবানির পশুর গুণগত মান ও ওজনের গুরুত্ব
ইসলামে কোরবানির পশু নির্বাচনের ক্ষেত্রে ওজন নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি, তবে পশুটির সুস্থতা, বলীয়ানত্ব এবং যথেষ্ট মাংস থাকার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শরীয়ত অনুসারে, পশুটি যেন এতোটাই ভারী হয় যে, তা থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ মাংস পাওয়া যায়। অতিরিক্ত ক্ষীণ বা অসুস্থ পশু কোরবানির জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। তাই ওজন মাপা মানে শুধুমাত্র সংখ্যা জানা নয়, বরং পশুর স্বাস্থ্য ও সামর্থ্যের নিদর্শন হিসেবেও বিবেচিত হয়।
গরুর ওজন মাপার শরীয়ত সম্মত পদ্ধতি
প্রাচীনকাল থেকে গরুর ওজন মাপার জন্য বিভিন্ন সহজ পদ্ধতি প্রচলিত আছে, যা শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণযোগ্য। আধুনিক সময়েও এসব পদ্ধতি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে যেখানে যন্ত্রপাতি সহজলভ্য নয়।
গায়ের ঘের মাপা: গরুর বুকের সবচেয়ে মোটা অংশের চারপাশে একটি মেজারিং টেপ বা সুতা বেঁধে মাপা হয়।
দৈর্ঘ্য মাপা: গরুর কাঁধ থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত দৈর্ঘ্য মাপা হয়।
এই দুইটি মাপ দিয়ে গরুর আনুমানিক ওজন নির্ধারণ করা হয়। এটি শরীয়ত সম্মত কারণ এতে পশুর সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও ক্ষমতার বিচার হয়, এবং পশু যতটা সুস্থ ও বলীয়ান হবে, ওজন ততটাই বেশি হবে।
ওজন মাপার সময় সততা ও ন্যায়পরায়ণতা
ইসলামে প্রতারণা, মিথ্যা ও ওজন নিয়ে জালিয়াতি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কোরবানির পশুর ওজন অতিরঞ্জিত বা কম দেখানো শরীয়তের বিরুদ্ধ। নবী করিম (সা.) বলেছেন, জাল ও মিথ্যা জিনিসগুলো নিষিদ্ধ।
সুতরাং, ওজন মাপার সময় সততা ও ন্যায়পরায়ণতা অবলম্বন করা ফরজ। এতে কোরবানির ইবাদত আল্লাহর কাছে কবুল হয় এবং মানুষের মাঝে সঠিক মূল্যায়ন প্রতিষ্ঠিত হয়।
পশুর ওজন মাপার আধুনিক ও সহজ উপায়
বর্তমানে বাজারে ওজন মাপার যন্ত্র (লিভার স্কেল) সহজলভ্য হলেও অনেক গ্রামীণ বা প্রান্তিক অঞ্চলে উপরের পদ্ধতি জনপ্রিয়। এ ছাড়া অভিজ্ঞ বিক্রেতারা হাত দিয়ে পশুর মাংসপেশী ও গায়ের অবস্থা দেখে আনুমানিক ওজন বলতে পারেন।
কোরবানির জন্য গরুর ওজন মাপা একটি নৈতিক ও শারীরিক বিষয়, যা শরীয়তের নির্দেশনা মেনে সততা ও শুদ্ধতা বজায় রেখে করা উচিত।
