আপনার শরীরে পানিশূন্যতা ও লবনের ঘাটতি হয় যখন আপনার পাতলা পায়খানা ও বমি হতে থাকে তখন সেই ঘাটতি পূরন করতে ওরস্যালাইন কার্যকারী একটি চিকিৎসা। ব্লাডপ্রেশার সাময়িকভাবে কমে গেলেও ওরস্যালাইন দিয়ে কিছুটা বাড়ানো যায়। এছাড়া আর কোন উপকার নেই। মনে রাখতে হবে এটা কোন পানীয় নয়, একটি ওষুধ তাই প্রয়োজন ছাড়া পান করতে নেই।
স্যালাইন একটি বিশেষ ধরণের লবণযুক্ত জলীয় দ্রবণ, যা শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট এবং তরলের ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত এটি ০.৯% সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) মিশ্রিত জল, যা মানবদেহের ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যের সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি করা হয়। স্যালাইন শরীরের পানিশূন্যতা পূরণে সাহায্য করে।
ডায়রিয়া, বমি, অতিরিক্ত ঘাম বা অন্যান্য কারণে শরীরের পানি কমে গেলে স্যালাইন শরীরে দ্রুত পানি এবং লবণের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে। স্যালাইন শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখা, পানি এবং লবণ ঘাটতি পূরণ করা, ওষুধ বহন করা, এবং প্রাথমিক চিকিৎসা হিসাবে বহুমুখী ভূমিকা পালন করে।
স্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা
স্যালাইন হতে যে সকল উপকারিতা আমরা পেয়ে থাকি তা নিম্নে তুলে ধরা হলো-
১. শরীরের পানির অভাব পূরণে
স্যালাইন পান করলে শরীরে দ্রুত পানি এবং লবণের ভারসাম্য পুনরুদ্ধার হয়।
২. ইলেক্ট্রোলাইট সরবরাহ করে
এতে সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম থাকে যা শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইলেক্ট্রোলাইট।
৩. ডিহাইড্রেশন কমায়
বমি, ডায়রিয়া বা অতিরিক্ত ঘামের ফলে শরীরের পানি কমে গেলে স্যালাইন খেলে দ্রুত উপশম মেলে।
৪. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
শরীরে সঠিক পরিমাণ সোডিয়াম সরবরাহের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
৫. শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে
স্যালাইন খেলে তাৎক্ষণিকভাবে শরীরে এনার্জি ফিরে আসে।
৬. পেশীর খিঁচুনির সমস্যায়
শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের অভাব হলে পেশীতে খিঁচুনি হতে পারে, যা স্যালাইন খেয়ে সমাধান সম্ভব।
৭. মাথা ব্যথা কমায়
ডিহাইড্রেশনজনিত মাথা ব্যথা প্রশমনে স্যালাইন সহায়ক।
৮. অ্যাসিডিটির সমস্যা কমায়
স্যালাইন শরীরের অ্যাসিড-বেস ভারসাম্য রক্ষা করে।
৯. ডায়রিয়ার চিকিৎসায় উপকারী
ডায়রিয়ায় শরীর থেকে ইলেক্ট্রোলাইট বেরিয়ে গেলে স্যালাইন সেই ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে।
১০. কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে
স্যালাইন খেলে কিডনি সহজে টক্সিন এবং বর্জ্য দূর করতে পারে।
স্যালাইনের অপকারিতা
স্যালাইন হতে আমরা যে সকল অপকারিতা পেয়ে থাকি তা নিম্নে তুলে ধরা হলো-
১। পর্যাপ্ত পরিমাণে স্যালাইন খাওয়া শরীরের জন্য ভালো, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত স্যালাইন গ্রহণ থেকে বিরত থাকা উচিত।
২। অতিরিক্ত স্যালাইন খেলে শরীরে সোডিয়াম বাড়তে পারে যা উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
৩। স্যালাইন বেশি খেলে পেট ফাঁপা ও অস্বস্তি হতে পারে।
৪। কিডনি সমস্যা থাকলে স্যালাইন খাওয়া বিপদজনক হতে পারে।
৫। বেশি পরিমাণ স্যালাইন খেলে পাকস্থলীর অ্যাসিডিটি বেড়ে যেতে পারে।
৬। স্যালাইন পান করার ফলে শরীরে পানি জমে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
৭। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে স্যালাইনের উপাদানে অ্যালার্জি হতে পারে।
৮। অতিরিক্ত সোডিয়াম হৃদযন্ত্রের উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলতে পারে।
৯। স্যালাইনে সোডিয়াম থাকার কারণে ব্লাড প্রেশার বেড়ে যেতে পারে।
১০। অতিরিক্ত স্যালাইন লিভারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
১১। দীর্ঘদিন অতিরিক্ত স্যালাইন গ্রহণ করলে পেশীর কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
১২। নিয়মিত বেশি স্যালাইন খেলে শরীর স্বাভাবিক পানির চাহিদা কমিয়ে ফেলতে পারে।
১৩। অতিরিক্ত স্যালাইন খেলে মাথা ঘোরানো বা বমি হতে পারে।
১৪। শরীরে বেশি সোডিয়াম প্রবেশ করলে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে।
১৫। অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণে হাড়ের স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে।
১৬। অনেক বেশি স্যালাইন খেলে হজমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
১৭। বেশি স্যালাইন খেলে শরীরে অতিরিক্ত পানি জমে ফোলাভাব হতে পারে।
১৮। স্যালাইনের অতিরিক্ত সোডিয়াম মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলতে পারে।
খাবার স্যালাইন খাওয়ার নিয়ম
খাবার স্যালাইন খাওয়ার কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম এবং পরিমাণ আছে, যা শরীরের প্রয়োজন ও অবস্থার উপর নির্ভর করে। খাবার স্যালাইন (ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন বা ORS) সাধারণত ডিহাইড্রেশন, ডায়রিয়া বা অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীরে পানির ঘাটতি পূরণের জন্য খাওয়া হয়। প্রথমে একটি প্যাকেট ORS পাউডার ১ লিটার বিশুদ্ধ বা ফুটানো ঠান্ডা পানিতে মিশাতে হবে।
প্যাকেটের নির্দেশনা অনুযায়ী ORS প্রস্তুত করা গুরুত্বপূর্ণ বেশি বা কম পানি ব্যবহার করলে দ্রবণের ঘনত্ব সঠিক হবে না, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বড়দের জন্য: প্রয়োজন অনুযায়ী ১০০-২০০ মিলি (প্রায় আধা থেকে এক কাপ) করে পান করতে পারেন। শিশুদের জন্য: ৫০-১০০ মিলি (প্রায় এক চতুর্থাংশ থেকে আধা কাপ) ORS মিশ্রণ খাওয়ানো যেতে পারে।
ডায়রিয়া বা অতিরিক্ত ঘামের পর, শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ORS ধীরে ধীরে পান করতে থাকুন। খাবার স্যালাইন (ORS) খাওয়ার সময় সঠিক পরিমাণ এবং নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে শরীরে পানিশূন্যতার জন্য এটি উপকারী।
স্যালাইন খেলে কি প্রেসার বাড়ে?
স্যালাইন খেলে কিছু ক্ষেত্রে রক্তচাপ বাড়তে পারে। স্যালাইনে সোডিয়াম থাকে, যা শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হলেও অতিরিক্ত সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়াতে পারে। বিশেষত যারা উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন সমস্যায় ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে স্যালাইন অতিরিক্ত গ্রহণ করলে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে স্বাভাবিক বা সীমিত পরিমাণ স্যালাইন সাধারণত রক্তচাপে বড় পরিবর্তন আনে না। তবে স্বাস্থ্যগত কারণে স্যালাইন গ্রহণের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সর্বদা উত্তম, বিশেষত যদি কোনো হৃদরোগ বা কিডনির সমস্যায় ভোগেন।
হ্যাঁ, স্যালাইন খেলে সাময়িকভাবে ওজন বাড়তে পারে। স্যালাইনে থাকা সোডিয়াম শরীরে পানি ধরে রাখতে সহায়ক, যা শরীরে ফ্লুইড রিটেনশন বা পানি জমার কারণ হতে পারে। এই পানি জমে যাওয়ার ফলে সাময়িকভাবে ওজন কিছুটা বাড়ে, বিশেষত যাদের কিডনি বা হৃদরোগ সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এই প্রভাব বেশি হতে পারে।
তবে, এই ওজন বৃদ্ধি সাধারণত অস্থায়ী এবং শরীরের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় পানি বেরিয়ে গেলে ওজন আবার স্বাভাবিক হয়ে আসে। দীর্ঘমেয়াদি ওজন বাড়ানোর জন্য স্যালাইন সরাসরি কারণ নয়, তবে সঠিক কারণ বুঝতে হলে স্বাস্থ্যগত পরামর্শ নেওয়া উচিত।
স্যালাইন খেলে কি গ্যাস বাড়ে?
সাধারণত স্যালাইন খাওয়ার ফলে সরাসরি গ্যাসের সমস্যা হয় না। তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে স্যালাইনে থাকা সোডিয়াম পাকস্থলীতে সামান্য অস্বস্তি বা ফোলাভাব সৃষ্টি করতে পারে, যা গ্যাসের মতো অনুভূতি দিতে পারে। এই ধরনের অস্বস্তি বা গ্যাস অনুভূতির কারণ হতে পারে। বেশি স্যালাইন খেলে পাকস্থলীতে লবণের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে ফোলাভাবের সৃষ্টি হতে পারে, যা অনেক সময় গ্যাসের মতো অনুভূত হয়।
স্যালাইনের কারণে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য দ্রুত পরিবর্তিত হলে অনেকের ক্ষেত্রে সামান্য হজমে অস্বস্তি হতে পারে। স্যালাইন খেলে শরীর কিছুটা পানি ধরে রাখতে পারে, যা অনেকের ক্ষেত্রে পেটে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। যদি স্যালাইন খাওয়ার পরে গ্যাস বা ফোলাভাবের সমস্যা বাড়ে, তবে কম পরিমাণে স্যালাইন গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উত্তম।