মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’-এর অনিয়ম সংক্রান্ত এক বিতর্কে নাম এসেছে আতিক মোর্শেদের। বলা হচ্ছে, প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বা পিও। কিন্তু আতিক মোর্শেদের এই পরিচয় নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে আরেক বিতর্ক। তিনি আদতে বিশেষ সহকারী ফয়েজ তৈয়্যবের পিও কি না, সে ধরনের কোনো দাপ্তরিক দলিল বা প্রমাণ পাবলিক ডোমেইনে দেখা যাচ্ছে না। সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের পিও হিসেবে আতিক মোর্শেদের দায়িত্ব পালনের দাপ্তরিক দলিল পাওয়া যায়। তবে একজন উপদেষ্টার পিও হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী কোনো ব্যক্তির সরাসরি আরেকজন উপদেষ্টা বা প্রতিমন্ত্রী মর্যাদার কোনো ব্যক্তির পিও হওয়ার সুযোগ নেই।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন দুইটি বিভাগ রয়েছে। এক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ (পিটিডি) এবং দুই, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ। প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ফয়েজ তৈয়্যব একান্ত সহকারী সচিব (এপিএস) এবং দুজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) অথবা ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) পাবেন। রাজনৈতিক বিবেচনায় এই পদে তিনি পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়োগ করতে পারেন।
দ্য মিনিস্টার্স, মিনিস্টার্স অব স্টেট অ্যান্ড ডেপুটি মিনিস্টার্স (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) অ্যাক্ট ১৯৭৩-এর ধারা ১৪(বি) ও (সি) অনুযায়ী, একজন প্রতিমন্ত্রী পে-স্কেলের সহকারী সচিব বা জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তাকে এবং দশম গ্রেডে দুইজন পিও অথবা ১৪তম গ্রেডে দুইজন পিএ মন্ত্রণালয়ের বাইরে থেকে নিয়োগ দিতে পারেন। এটিকে সাধারণভাবে ‘রাজনৈতিক নিয়োগ’ বলা হয়ে থাকে। একই ধারা অনুযায়ী, উভয় পদের নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির মেয়াদ হবে ওই প্রতিমন্ত্রীর (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার) নিজ মেয়াদ অথবা তার অভিপ্রায় অনুযায়ী। সেই হিসেবে, গত মার্চে সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে পিও হিসেবে আতিক মোর্শেদের নিয়োগ বাতিল হয়ে যায়। ভিন্ন কোনো আদেশ ছাড়া প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় বিশেষ সহকারীর ‘পিও’ হওয়া আতিক মোর্শেদের জন্য সম্ভব নয় এবং দায়িত্ব পালন করে গেলেও সে অবৈধ হবে বলে মত জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞদের।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘রাজনৈতিক নিয়োগ হয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এদের নামে। যিনি পিও হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর পিও। এখন সেই মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীই যদি না থাকেন, তাহলে তার পদও বাতিল হয়ে যায়। একই ব্যক্তিকে যদি একই পদেও আরেকজনের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে পৃথক আদেশ হতে হবে।’ এই জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞের সূত্র মতে, গত শুক্রবার এবং গতকাল শনিবার দুই দিন পিটিডি ও আইসিটি বিভাগের ওয়েবসাইটে আতিক মোর্শেদের নিয়োগের কোনো আদেশপত্র দেখা যায়নি। এমনকি দুটি বিভাগের ওয়েবসাইটেও কর্মকর্তাদের ‘সকল’ তালিকা এবং ‘উপদেষ্টার দপ্তর’ তালিকার কোথাও কোনো পদে আতিক মোর্শেদের নাম দেখা যায়নি। পিটিডি ওয়েবসাইটে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বা পিও হিসেবে মুহাম্মদ মনিরুজ্জামানের নাম উল্লেখ আছে। তবে আইসিটি বিভাগের ওয়েবসাইটে কোনো ব্যক্তিগত কর্মকর্তার উল্লেখ নেই। জানা যায়, সাইফ রসুল নামে ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যবের আরও একজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা রয়েছেন। মনিরুজ্জামান এবং সাইফ রসুল দুজনই ফয়েজ তৈয়্যবের পিও হলে, আরেকজন পিও আতিক মোর্শেদ কে?
এ বিষয়ে জানতে আতিক মোর্শেদের নম্বরে (০১৭৬৭.....৯১৬) যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এই নম্বরে থাকা হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। এরপরও আতিক মোর্শেদের ফেসবুক আইডিতে মেসেজ দেওয়া হয়। সূত্র বলছে, ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ হয়েছেন তিনি। আতিক মোর্শেদের নিয়োগের বিভ্রান্তি সম্পর্কে বক্তব্য জানতে গতকাল শনিবার বিকেলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের সঙ্গে। হোয়াটস অ্যাপে ফোন দিলে তিনি কেটে দেন। এরপর যোগাযোগের কারণ, প্রশ্ন এবং আতিক মোর্শেদের নিয়োগের আদেশপত্র চেয়ে বার্তা দেওয়া হয় তাকে। তিনি এই বার্তা শনিবার বিকেলেই দেখেছেন। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ জসীম উদ্দিনকেও বক্তব্য চেয়ে এ বিষয়ে প্রশ্ন পাঠানো হয়। তবে যোগাযোগের সম্ভাব্য সব উপায় অবলম্বনের পরেও গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এই তিন ব্যক্তির কারো থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।