ঢাকা শুক্রবার, ০৬ জুন, ২০২৫

জলপাই খাওয়ার উপকারিতা-অপকারিতা

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৫, ০২:১৯ পিএম
ক্ষুদ্র ফল জলপাই ছবি: সংগৃহীত

জলপাই হলো ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে উদ্ভূত একটি ছোট ফল। এটি এমন এক ধরণের ফল, যা সে দেশের খাবারে ব্যবহার হয় এবং বিশেষত জলপাই তেল হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। জলপাই সাদা থেকে কালো বিভিন্ন রঙের হয়। এটি স্বাদে তিক্ত ও মিষ্টি মিশ্রিত এবং এটি স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে বিখ্যাত।

১. জলপাইয়ের উপকারিতা

ক. হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক

  • মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট (অলিক অ্যাসিড) কোলেস্টেরল কমায়।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

খ. অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর

  • ভিটামিন ই, পলিফেনল, ফ্ল্যাভনয়েড কোষ রক্ষা করে।

গ. ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক

  • স্তন ও কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।

ঘ. চর্বি কমাতে সহায়তা

  • শরীরের খারাপ চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে।

ঙ. হজমে সহায়ক

  • পাচনতন্ত্র সুস্থ রাখে, গ্যাস্ট্রিক কমায়।

চ. ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী

  • ত্বক নরম ও আর্দ্র রাখে, ব্রণ কমায়।

ছ. হাড় মজবুত করে

  • হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে সাহায্য করে।

জ. মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়

  • স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বাড়ায়।

ঝ. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

  • ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বাড়ায়, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

২. জলপাইয়ের অপকারিতা

  • অতিরিক্ত লবণযুক্ত জলপাই উচ্চ রক্তচাপ বাড়াতে পারে।
  • অতিরিক্ত খেলে গ্যাস্ট্রিক, ডায়রিয়া হতে পারে।
  • সংরক্ষিত জলপাইয়ে রাসায়নিক বা কৃত্রিম রং থাকলে ক্ষতিকর।
  • কারো কারো জন্য অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।
  • বেশি সোডিয়াম কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করে।

৩. গর্ভাবস্থায় জলপাই খাওয়ার উপকারিতা

  • ফোলেট গর্ভস্থ শিশুর স্নায়ুতন্ত্র গঠনে সাহায্য করে।
  • আয়রন ও ক্যালসিয়াম মা ও শিশুর হাড় ও রক্ত তৈরিতে সহায়ক।
  • ওমেগা-৯ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্ক বিকাশে সহায়তা করে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
  • ভিটামিন ই ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • তবে লবণযুক্ত জলপাই এড়ানো উচিত।

৪. জলপাই খাওয়ার নিয়ম

  • প্রতিদিন ৫–৭টি জলপাই খাওয়া নিরাপদ।
  • খাবারের আগে বা সঙ্গে খাওয়া যেতে পারে।
  • কাঁচা জলপাই ধুয়ে খাওয়া উচিত।
  • জলপাই আচার অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত এবং অতিরিক্ত লবণ এড়িয়ে চলা উচিত।
  • খালি পেটে না খাওয়াই ভালো, কারণ গ্যাস্ট্রিক হতে পারে।
  • অন্যান্য ফ্যাট যুক্ত খাবার খেলে জলপাইয়ের পরিমাণ কমানো উচিত।

৫. কাঁচা জলপাই খাওয়ার উপকারিতা

  • ভিটামিন সি বেশি থাকে, ঠান্ডাজনিত অসুস্থতায় সাহায্য করে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কার্যকর থাকে।
  • ওজন কমাতে সহায়ক, কারণ ক্যালোরি কম ও ফাইবার বেশি।
  • হজম শক্তি বাড়ায়।
  • অতিরিক্ত কাঁচা জলপাই খেলে তিক্ততা ও গ্যাস্ট্রিক হতে পারে।

৬. জলপাই আচার এর উপকারিতা

  • দীর্ঘদিন সংরক্ষণযোগ্য।
  • হজমে সহায়ক মসলা থাকে (সরিষা, জিরা ইত্যাদি)।
  • স্বাদে বৈচিত্র্য আনে।
  • বেশি লবণ বা ভিনেগার থাকলে উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

৭. পাকা জলপাই খাওয়ার উপকারিতা

  • ওমেগা-৯ ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি, হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (পলিফেনল, ভিটামিন ই) বেশি থাকে।
  • খাওয়ার স্বাদ ও রুচি বাড়ায়।
  • শরীরকে শক্তি দেয় ও ক্লান্তি কমায়।
  • বেশি তেলে ভাজা বা সংরক্ষিত পাকা জলপাই খেলে ক্যালোরি বেশি হতে পারে।

৮. রাতে জলপাই খাওয়ার সম্ভাব্য উপকারিতা

  • ঘুমের গুণগত মান উন্নত করে।
  • হজমে সহায়তা করে।
  • বেশি লবণযুক্ত জলপাই রাতে খেলে রক্তচাপ বা ঘুমে সমস্যা হতে পারে।
  • খালি পেটে না খাওয়া ভালো।

৯. জলপাই কেন ওজন বাড়ায় না?

  • হেলদি মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা পেট ভরা রাখে।
  • কম ক্যালোরি (প্রতি ১০টি জলপাই এ ৫০-৬০ ক্যালোরি থাকে)।
  • মেটাবলিজম বাড়ায় ও শরীরের চর্বি পোড়ায়।
  • ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে অতিরিক্ত খিদের অনুভূতি কমায়।
  • অতিরিক্ত খেলে বা তেলে ভাজা জলপাই ওজন বাড়াতে পারে।


সবশেষে জলপাই স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী, তবে সঠিক পরিমাণ ও পদ্ধতিতে খাওয়া জরুরি। বিশেষ করে লবণযুক্ত জলপাই ও অতিরিক্ত গ্রহণ এড়ানো উচিত। গর্ভবতী মহিলারা ও হার্ট, ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জলপাই খাওয়া ভালো।