সুইজারল্যান্ডের আল্পস পর্বতের চূড়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বখ্যাত ‘জ্যারমাট আলট্রা ম্যারাথন’-এ লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে বাংলাদেশকে গর্বিত করলেন ক্রীড়াবিদ শিব শংকর পাল। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের দৌড়বিদদের মধ্যে অন্যতম এই অ্যাথলেট শনিবার (৫ জুলাই) অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় ৪৯.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দুর্গম পথ পাড়ি দেন।
সুইজারল্যান্ডের গোর্নারগ্রাটের সেন্ট নিকলাস গির্জা থেকে শুরু হয়ে এই ম্যারাথন শেষ হয় রিফেলবার্গ এলাকায়। পথটি ছিল একদিকে রোমাঞ্চকর, অপরদিকে ছিল পাহাড়ি উচ্চতা, খাড়া ঢালু এবং পাথুরে ট্র্যাকের কঠিন বাস্তবতা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অংশ নেওয়া অভিজ্ঞ দৌড়বিদদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে শিব শংকর পাল বাংলাদেশের জন্য গৌরব বয়ে আনেন।
এই অসাধারণ অর্জনের সময় তার পাশে ছিলেন স্ত্রী শিখা শংকর পাল, পরিবার এবং সুইজারল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেকেই। দৌড় শেষে শিব শংকরকে তারা করতালিতে অভিনন্দন জানান, যেটি মুহূর্তেই এক আবেগঘন দৃশ্যে রূপ নেয়।
দৌড় শেষে এক প্রতিক্রিয়ায় শিব শংকর পাল বলেন, ‘এই পাহাড়ি পথে দৌড়ানো সহজ ছিল না। কিন্তু যখন বাংলাদেশের পতাকা হাতে রাখি, তখন মনে হয় আমি একা নই, আমার সঙ্গে আছে পুরো দেশ। সেই শক্তিতেই আমি এগিয়ে যাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বপ্ন, বাংলাদেশেও একদিন আন্তর্জাতিক মানের ম্যারাথন আয়োজন হবে। তখন বিশ্বের হাজারো দৌড়বিদ বাংলাদেশে আসবেন, আমাদের পথ চিনবেন আর আমাদের প্রতিভার স্বীকৃতি দেবে বিশ্ব।’
এই প্রতিযোগিতা ছিল শিব শংকর পালের ১৩৪তম আন্তর্জাতিক ম্যারাথন। তিনি জানান, তার লক্ষ্য ১৫০টি আন্তর্জাতিক ম্যারাথনে বাংলাদেশের পতাকা উড়ানো। শুধু প্রতিযোগিতা নয়, এর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের নাম বিশ্বের কাছে তুলে ধরছেন বারবার।
শিব শংকর পাল একজন স্বশিক্ষিত দৌড়বিদ, যিনি দীর্ঘ বছর ধরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ম্যারাথন, হাফ-ম্যারাথন ও আলট্রা-ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করে নিজেকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
শিব শংকর পালের মতো ক্রীড়াবিদরা প্রমাণ করছেন, বয়স কোনো বাধা নয়, যদি থাকে ইচ্ছা, শ্রম ও দেশপ্রেম। আন্তর্জাতিক এই দৌড়ে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে তিনি শুধু নিজের নয়, বাংলাদেশের ক্রীড়াক্ষেত্রের জন্যও এক অনুপ্রেরণার নাম হয়ে উঠেছেন।
শেষে তিনি বলেন, আমাদের দেশে অসংখ্য সম্ভাবনাময় তরুণ আছে। প্রয়োজন শুধু একটা সুযোগ, একটা আন্তর্জাতিক মঞ্চ। আমি চাই, বাংলাদেশ সরকার ও ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এই দূরপাল্লার দৌড় প্রতিযোগিতার সম্ভাবনা উপলব্ধি করে দেশীয় অ্যাথলেটদের আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরুক।
আপনার মতামত লিখুন :