ফুটবল মাঠে তার পায়ের জাদু যেমন দর্শকদের মুগ্ধ করেছে তেমনি মাঠের বাইরে একজন দায়িত্বশীল পিতা এবং ভালোবাসার প্রতীক হিসেবেও তিনি ছিলেন উজ্জ্বল। তিনি আর কেউ নন, সবার প্রিয় ‘জোতা’। এক নামেই পরিচিত এই তারকা ফুটবলার শুধুমাত্র তার খেলার জন্যই নন, তার মানবিক গুণাবলির জন্যও ছিলেন সবার প্রিয়।
২০২৬ সালের ইউরোতে খেলার স্বপ্ন আর পূরণ হলো না দিয়োগো জোতার। ২৮ বছর বয়সী এই পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড, যিনি মাঠে নিজের নিবেদন, সাহস ও শ্রম দিয়ে লিভারপুলের সমর্থকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন। এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন জোতা।
গত বৃহস্পতিবার সকালে স্পেনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় জোতা ও তার ভাই আন্দ্রে সিলভা দুজনেই নিহত হন।
তাদের এই অকাল মৃত্যু শুধু একটি প্রতিভাবান ফুটবলারের হারানো নয়, বরং এক তরুণ পিতা, সদ্যবিবাহিত স্বামী ও এক পরিবারের ভরসার মানুষকে হারানোর বেদনার ইতিহাস।
এক লড়াকু যোদ্ধার গল্প
ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে একটি চোট হয়তো তাকে কিছু সময় মাঠের বাইরে পাঠিয়েছিল, কিন্তু চোট এড়াতে নিজের খেলা থেকে পিছু হঠা—তা কখনোই জোতার চরিত্রে ছিল না।
সে সবসময় বলের পেছনে দৌড়াতো, জায়গা খুঁজে বেড়াতো। শক্তি আর সাহসে ভরা ছিল ওর খেলা বলছিলেন দ্য আনফিল্ডের প্রধান নির্বাহী ও সঞ্চালক নীল অ্যাটকিনসন।
জোতা লিভারপুলের হয়ে সর্বমোট ৬৫টি গোল করেছেন। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে টটেনহ্যামের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তের সেই ৪-৩ জয়ের গোল—সমর্থকরা তা কখনো ভুলবে না।
তুমি কখনো একা হাঁটবে না
জোতা ছিলেন এমন একজন খেলোয়াড় যিনি নিজের শ্রম, নিষ্ঠা আর বিনয় দিয়ে এক অনন্য স্থান দখল করেছিলেন। লিভারপুলে তার প্রতি ভালোবাসা এমনই ছিল যে, প্রতিটি ম্যাচেই গ্যালারিতে তার নামে গান শোনা যেতো।
লিভারপুল ক্লাব, শহর ও তার মানুষগুলো বহুবার ট্র্যাজেডির মুখোমুখি হয়েছে। হিলসবোরো ট্র্যাজেডি থেকে শুরু করে সর্বশেষ প্রিমিয়ার লিগ বিজয় উদযাপনের সময়কার গাড়ি হামলা—প্রতিটি দুঃখজনক ঘটনার পর তারা একসঙ্গে দাঁড়িয়েছে ও লড়েছে।
এই শোকেও তাই ভেঙে পড়েনি লিভারপুল। বরং পুরো শহর, এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বী এভারটনের সমর্থকরাও জোতার জন্য ফুল, স্কার্ফ ও বার্তা রেখে একত্রিত হয়েছে অ্যানফিল্ড স্টেডিয়ামের সামনে।
পর্তুগাল থেকে লিভারপুল ‘১৪০০ কিলোমিটারের বন্ধন’
জোতা বড় হয়েছেন পোর্তোর পাশে গন্ডোমার শহরে। ১৪০০ কিলোমিটার দূরের লিভারপুল শহরেও হয়ে উঠেছিলেন নিজের মানুষ।
অ্যান্ডি রবার্টসন এবং কাওইমহিন কেলেহের সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন, কীভাবে জোতা ডার্টস খেলায় আগ্রহী ছিলেন, ঘোড়দৌড় উপভোগ করতেন, আর কিভাবে তাকে ভালোবেসে ডাকতেন ‘ডিয়োগো ম্যাকজোতা’।
একজন কর্মঠ ও নিরহঙ্কার ফুটবলার হিসেবে জোতা এই শহরের সাথে এক আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন।
বিদায় লিভারপুলের প্রিয় জোতা
শনিবার সকালে গন্ডোমার শহরে জোতা ও তার ভাই আন্দ্রের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। লিভারপুল থেকে জোতার সাবেক সতীর্থ, ক্লাব কর্মকর্তা এবং সহানুভূতিশীল হাজারো মানুষ একত্রিত হন। উপস্থিত ছিলেন ভার্জিল ভ্যান ডাইক, অ্যান্ড্রু রবার্টসনের মতো তারকারাও।
জোতা হয়তো আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তার লড়াকু মানসিকতা, অকুতোভয় খেলা এবং পরিবারকেন্দ্রিক জীবনের মূল্যবোধ—সবই চিরকাল লিভারপুলের ইতিহাসে লেখা থাকবে।
কারণ, এই শহরে—যেখানে একসঙ্গে থাকা মানেই শক্তি—ডিয়োগো জোতা ছিলেন পরিবারের একজন। তুমি কখনো একা হাঁটবে না, জোতা! অ্যানফিল্ডের দেয়ালজুড়ে আজ এই বার্তাই বেজে চলেছে।
আপনার মতামত লিখুন :