ঢাকা শনিবার, ০৩ মে, ২০২৫

গাজামুখী ত্রাণবাহী জাহাজে ড্রোন হামলা ইসরায়েলের 

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২, ২০২৫, ০৭:১২ পিএম
ড্রোন হামলার শিকার ফ্রিডম ফ্লোটিলা জাহাজ ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের জন্য খাবার ও ত্রাণসামগ্রী বহনকারী ফ্রিডম ফ্লোটিলা জাহাজে ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১ মে) স্থানীয় সময় রাত ১২টার দিকে ইউরোপের দেশ মাল্টা উপকূলে আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায় থাকা জাহাজটিতে এই হামলা চালানো হয়।

জাহাজটির তত্ত্বাবধানে থাকা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) ড্রোন হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বেসামরিক জাহাজে বোমা হামলাসহ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের বিষয়ে ইসরায়েলের কাছে জবাব চেয়েছে সংগঠনটি। 

শুক্রবার (২ মে) ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাহাজটি এখন গাজার পথে রয়েছে। এটি অবরুদ্ধ উপত্যকায় ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করছে। 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মাল্টা উপকূল থেকে ১৪ নটিক্যাল মাইল (২৫ কিমি) দূরে থাকার সময় এতে পরপর দুটি ড্রোন হামলা চালানো হয়। এতে জাহাজটির সামনের দিকে আগুন ধরে যায় এবং বড় গর্তের সৃষ্টি হয়।’
 
এর আগে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় বর্বর হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তার আগে থেকেই গাজায় সব ধরনের ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ বন্ধ করে দেয় দখলদাররা। প্রায় দুই মাস ধরে সেই অবরোধ অব্যাহত রয়েছে।

ফলস্বরূপ, গাজার খাদ্য মজুত শেষ হয়ে এখন মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। 
 
বিবৃতিতে ড্রোন হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘আমাদের জাহাজটি সম্পূর্ণ বেসামরিক ও নিরস্ত্র ছিল। গাজার অসহায় ফিলিস্তিনিদের জন্য খাবার ও ত্রাণসামগ্রী রয়েছে তাতে। কয়েকটি সদস্য দেশের প্রতিনিধিরাও রয়েছেন। এ ধরনের হামলায় তাদের প্রাণহানি ঘটতে পারত।’ 

বিবৃতিতে হামলার জন্য ইসরায়েলকে সরাসরি অভিযুক্ত করা না হলেও ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে তলব করে জবাবদিহি চাওয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

তাদের ভাষ্য, ‘ইসরাইলি রাষ্ট্রদূতদের তলব করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জবাব দিতে হবে, যার মধ্যে চলমান অবরোধ ও আন্তর্জাতিক জলসীমায় আমাদের বেসামরিক জাহাজে বোমা হামলার বিষয়টিও রয়েছে।’
 
এ ঘটনায় মাল্টা সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেয়া হয়। সেখানে বলা হয়েছে, জাহাজের মূল ইঞ্জিন ও জেনারেটরে আঘাত লেগেছে।

জাহাজটিতে আগুন ধরে গিয়েছিল, তবে মাল্টার নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড বাহিনীর সহায়তায় রাত ১টা ২৮ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
 
জাহাজটিতে মোট ১২ জন ক্রু ও ৪ জন বেসামরিক যাত্রী ছিলেন। তাদের সবাই অক্ষত রয়েছেন। রাত ২ টা ১৩ মিনিটে তাদের মাল্টার বন্দরে নিয়ে আসা হয়েছে। জাহাজটি এখনও আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায় রয়েছে এবং এটাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গাজা সংঘাত শুরু হওয়ার পর গত বছরের এপ্রিলে তুরস্ক থেকে ত্রাণবাহী জাহাজের একটি বহর পাঠানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রস্তুতি শেষে সম্প্রতি যাত্রা শুরু করে ফ্রিডম ফ্লোটিলা।
  
এর আগে, তুর্কি জাহাজ এমভি মাভি মারমারার নেতৃত্বে ফ্রিডম ফ্লোটিলা জাহাজ বহর ইসরায়েলের অবরোধ ভেঙে গাজায় প্রবেশের চেষ্টা করে ২০১০ সালের মে মাসে। সে সময় ৩০টিরও বেশি দেশ থেকে ৬০০ জনেরও বেশি সেচ্ছাসেবী ওই বহরে যোগ দেন।
 
কিন্তু দখলদার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক জলসীমায় থাকা অবস্থাতেই এমভি মাভি মারমারা জাহাজে হামলা চালায়। ন্যাক্কারজনক সেই হামলায় জাহাজটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিহত হয় ১০ জন সেচ্ছাসেবী।

এ ঘটনায় তুরস্ক ও ইসরাইলের মধ্যকার সম্পর্কে ফাটল তৈরি হয়।