ঢাকা শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তই কেন বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান?

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২৫, ০৯:৩২ পিএম
ভারত ও পাকিস্তানের পতাকার কোলাজ।

কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত বহু পুরোনো। এই দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের সীমান্ত বরাবর চলমান উত্তেজনা, সামরিক সংঘর্ষ ও বেসামরিক প্রাণহানি এটিকে বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক সীমান্তে পরিণত করেছে।

সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে একটি সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পাল্টাপাল্টি হামলা, কূটনৈতিক পদক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ায় উত্তেজনা পৌঁছেছে চরমে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে রয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৩২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত। এর মধ্যে ৭৪০ কিলোমিটার নিয়ন্ত্রণ রেখা (LoC) এবং ২ হাজার ৪০০ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমান্ত। ১৯৪৯ সালে যুদ্ধবিরতির পর গঠিত এই নিয়ন্ত্রণ রেখার নাম ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়।

নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর বসবাসরত মানুষের কাছে যুদ্ধ আর শান্তি যেন একে অপরের বিপরীত দুই বাস্তবতা—একটিও কখনো স্থায়ী নয়।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি অনুযায়ী, পাকিস্তানের হামলায় অন্তত ১৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৪৩ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, পাকিস্তান জানিয়েছে, ভারতের বিমান হামলায় তাদের অন্তত ৩১ জন নাগরিক নিহত এবং ৫৭ জন আহত হয়েছে।

এ ধরনের প্রাণহানি ও নিয়মিত গোলাগুলি সীমান্ত এলাকাকে স্থায়ী যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেছে, যা একে বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক সীমান্ত হিসেবে চিহ্নিত করে।

পেহেলগাম হামলার জেরে ভারত সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেয়। এতে করে সীমান্তবর্তী জনগণের স্বাভাবিক জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত ও পাকিস্তান সীমিত প্রতিক্রিয়া দেখালেও ভারতের ‘অপারেশন সিদুঁর’ নামের অভিযানের মাধ্যমে সীমান্ত অতিক্রম করে পাল্টা হামলার পদক্ষেপ বিস্তৃত যুদ্ধের আশঙ্কা সৃষ্টি করতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, জাপান, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ এবং জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আঞ্চলিক জোটগুলো এই পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে উভয় দেশকে।

নিয়মিত গোলাগুলির ভয়ে সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ জীবন বাজি রেখে বাড়িঘর পাহারা দিচ্ছেন। শিশু ও নারীদের মধ্যে আতঙ্ক চরমে।

কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা নতুন নয়। তবে সাম্প্রতিক অবস্থায় কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশের উচিত সংযম ও কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করা।

বর্তমান বাস্তবতায় সীমান্তবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই দেশের মধ্যে সংঘাত রোধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন।