মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সৈয়দ মুহাম্মদ আজম

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫, ০৬:০৩ পিএম

জেন-জিদের বিক্ষোভে এশিয়ায় টালমাটাল ক্ষমতাসীনদের মসনদ

সৈয়দ মুহাম্মদ আজম

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫, ০৬:০৩ পিএম

নেপালের সিংহ দরবারে আগুন দেওয়ার পর সরকারি অফিসের চূড়ায় জেন-জি বিক্ষোভকারীরা। ছবি- এএফপি

নেপালের সিংহ দরবারে আগুন দেওয়ার পর সরকারি অফিসের চূড়ায় জেন-জি বিক্ষোভকারীরা। ছবি- এএফপি

এশিয়ার রাজপথে তরুণ প্রজন্মের ঝড়। নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভে কেঁপে উঠেছে রাজধানীগুলো। তারও আগে গণবিক্ষোভে উত্তাল হয়েছিল বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। ক্ষোভের কারণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা, কোথাও দুর্নীতি-বৈষম্য, বেকারত্ব, আবার কোথাও জ্বালানি সংকট ও মূল্যস্ফীতি।

কিন্তু নেতৃত্ব দিচ্ছে একই প্রজন্ম—জেনারেশন জেড। চার দেশের তরুণদের রাস্তায় নামা দেখাচ্ছে, পুরোনো রাজনৈতিক কাঠামোর প্রতি তাদের আস্থা ভেঙে পড়েছে, আর ভবিষ্যতের দায়িত্ব নিজেরাই হাতে নিতে চাইছে তারা।

যদিও নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ার বিক্ষোভ প্রায় দুই হাজার মাইল দূরে ঘটছে। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই নেতৃত্ব দিচ্ছে জেন-জি প্রজন্ম। ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া এই প্রজন্ম এখন এশিয়ার দুই গণতান্ত্রিক দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকের প্রতিনিধিত্ব করছে।

ক্ষোভের সূচনা ভিন্ন নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা, আর ইন্দোনেশিয়ায় সরকারি কর্মকর্তাদের অঢেল সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু আন্দোলনের মূলে রয়েছে একই সমস্যা—বেকারত্ব, দুর্নীতি এবং বাড়তে থাকা অর্থনৈতিক বৈষম্য।

মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়া ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ভেদি হাদিজ মতে, ‘তরুণদের অনিশ্চিত কর্মসংস্থানে বাধ্য করা হচ্ছে, এমনকি শিক্ষিত তরুণদেরও। তারা ক্ষুব্ধ, কারণ মনে করে তাদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ নয়।’

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ইন্দোনেশিয়ায় ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সি তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ১৪ শতাংশ। নেপালে এ হার আরও বেশি—২০ শতাংশ। ফলে নেপালের অনেক তরুণ কাজের খোঁজে প্রতিবেশী ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যে চলে যাচ্ছে, যেখানে তাদের শ্রমিক হিসেবেই কাজ করতে হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি, অর্থাৎ ইন্দোনেশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ এবং নেপালের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে।

নেপালে জেন-জি বিক্ষোভকারীরা। ছবি- এএফপি

কাঠমান্ডুতে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ২৮ বছর বয়সি আইটি নিরাপত্তা বিশ্লেষক সহজ শ্রেষ্ঠা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো সরকারে স্বচ্ছতা আনা এবং সেই পুরোনো রাজনীতিবিদদের বিদায় জানানো, যারা দেশের জন্য কিছুই করেনি। এরপর আসবে নতুন নেতৃত্ব, যারা জনগণের জন্য কাজ করবে।’

তরুণদের প্রভাব রাজনীতিতেও দৃশ্যমান। কাঠমান্ডুর ৩৫ বছর বয়সি মেয়র বালেন্দ্র শাহ, যিনি সাবেক র‍্যাপার হিসেবে পরিচিত এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়, দুর্নীতি ও সরকারের ব্যর্থতার তীব্র সমালোচক। অনেকেই তাকে ভবিষ্যৎ জাতীয় নেতা হিসেবে দেখছেন। যদিও শাহ নিজে বিক্ষোভে যোগ দেননি, তবে আন্দোলনকারীদের দাবি শোনার গুরুত্বের কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগের পর তিনি ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘এখন তোমাদের প্রজন্মকে দেশ চালাতে হবে! প্রস্তুত থেকো!’

বিক্ষোভের পরিণতি অবশ্য মারাত্মক হয়েছে। নেপালে সরকারি ভবন ও রাজনৈতিক নেতাদের বাড়িতে আগুন দেওয়ার পর সহিংসতায় অন্তত ৭২ জন নিহত হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ায় পাঁচ দিনের বিক্ষোভে প্রাণ গেছে ১০ জনের। উভয় দেশেই এসব আন্দোলন সরকারকে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে। নেপালে ওলির স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। তিনি দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং ছাত্র বিক্ষোভকারীদের সমর্থন পেয়েছেন। অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বে থাকা কার্কি আগামী মার্চে নতুন নির্বাচনের ডাক দিয়েছেন।

ইন্দোনেশিয়ায় প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো সরকারি সুবিধা প্রত্যাহার করেছেন এবং অর্থ ও নিরাপত্তা মন্ত্রীসহ পাঁচ জন মন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছেন। তবে বিক্ষোভ দমনে কঠোর ব্যবস্থার ঘোষণা পরিস্থিতিকে আরও উত্তেজিত করেছে। ঘটনাগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং তরুণ প্রজন্মকে আরও সংগঠিত করে তুলেছে।

ইন্দোনেশিয়ায় ক্ষোভের সূত্রপাত সংসদ সদস্যদের মাসিক ৩ হাজার ডলার আবাসন ভাতার খবরে। অথচ দেশটির অধিকাংশ মানুষ ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের চাপে নাজেহাল। জাকার্তায় এ ভাতা সর্বনিম্ন মজুরির ১০ গুণ। পরিস্থিতি আরও জটিল হয় গত মাসে, যখন খাবার সরবরাহ করতে গিয়ে পুলিশের সাঁজোয়া গাড়ির ধাক্কায় ২১ বছর বয়সি ডেলিভারি রাইডার আফান কুর্নিয়াওয়ান নিহত হন। এ ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হলে ক্ষোভ আরও তীব্র হয় এবং জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়।

ইন্দোনেশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের প্রভাষক ক্রিস্টিনা পার্টিউই বলেন, ‘ভিডিওটি দেখার পর এমন লোকেরাও সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ শুরু করেছে, যারা সাধারণত চুপ থাকে।’ এমনকি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়গুলোও বিক্ষোভকারীদের সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে একটি সাইবারসিকিউরিটি কোম্পানির পরিচালক নেপালি উদ্যোক্তা পুকার হামাল বলেন, ‘জেন জেড সবসময় অধৈর্য প্রজন্ম। তারা দ্রুত অগ্রগতি চায়।’ তার মতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে তারা সিঙ্গাপুর, দুবাই কিংবা হংকংয়ের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করে এবং মনে করে তাদের দেশে প্রচেষ্টা ও অগ্রগতির মধ্যে সম্পর্ক ভেঙে গেছে।

নেপালে জেন জেড-এর ক্ষোভের বড় অংশ লক্ষ করা যাচ্ছে, তথাকথিত ‘নেপো কিডস’-দের বিরুদ্ধে অর্থাৎ প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ বা ধনী পরিবারের সন্তানরা, যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের বিশেষ সুবিধা প্রদর্শন করে। হামাল বলেন, ‘যখন তরুণরা দেখে যে সমাজে মর্যাদা নির্ধারণ হচ্ছে জন্মসূত্রে, পরিশ্রমের মাধ্যমে নয়, তখন ক্ষোভ তৈরি হওয়া স্বাভাবিক।’

Link copied!