ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনার ছাপ পড়ল এবার মিষ্টিতেও। ভারতের বিশেষ ধরনের দুই মিষ্টির নামের সঙ্গে জুড়ে ছিল ‘পাক’ শব্দটি।
দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা পরিস্থিতির মধ্যে রাজস্থানের জয়পুরের এক দোকানে সেই ‘মাইসোর পাক’ ও ‘মোতি পাক’ সন্দেশের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে ২৬ জন পর্যটককে হত্যার অভিযোগ আনে ভারত। জবাব দিতে পাল্টা অ্যাকশন ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালায় নয়াদিল্লি। শুরু হয় স্বল্প মেয়াদে যুদ্ধ। আপাতত যুদ্ধবিরতিতে রয়েছে দুই দেশ।
কিন্তু দুই প্রতিবেশী দেশের এই উত্তেজনার আঁচ এসে পড়েছে জনজীবনেও। দুই দেশের বাণিজ্যে যেমন প্রভাব পড়েছে, তেমনই এবার মিষ্টিতেও তার প্রভাব পড়েছে ৷
জয়পুরের মিষ্টির দোকানগুলো ‘মোতি পাক’-এর নাম পরিবর্তন করে ‘মোতি শ্রী’ এবং ‘মাইসোর পাক’-এর পরিবর্তন করে ‘মাইসোর শ্রী’ করা হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে রাজস্থানের জয়পুরের অন্তত তিনটি বিখ্যাত মিষ্টির দোকান তাদের মিষ্টির নাম বদলিয়েছে, সেই সব মিষ্টির নামেই ‘পাক’ শব্দটা ছিল।
‘আম পাক’-এর নাম রাখা হয়েছে ‘আম শ্রী’, ‘গোন্ড পাক’ হয়েছে ‘গোন্ড শ্রী’, ‘স্বর্ণ ভস্ম পাক’ এর নতুন নাম ‘স্বর্ণ শ্রী’ এবং ‘চণ্ডী ভস্ম পাক’ এর নাম বদলিয়ে হয়েছে ‘চণ্ডী শ্রী’।
মিষ্টির দোকানের কর্মচারী গজানন্দ বলেন, ‘আমরা সমস্ত মিষ্টি থেকে ‘পাক’ শব্দটি সরিয়ে ফেলেছি। গ্রাহকরাও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। আমরা শব্দটি সরিয়ে দিয়েছি এটা সবাই ভালো চোখে দেখছে ৷’
সবাই যে এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানাচ্ছেন, তা নয়। তাদের মত, এই মিষ্টি শুধু খাবার নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ঐতিহ্য-আবেগ। এ নিয়ে নিউজ ১৮-এ মুখও খুলেছেন ‘মাইসোর পাক’ যার হাতে তৈরি হয়েছিল, সেই কাকাসুরা মাদাপ্পার বংশধর।
মহীশূরের রাজবাড়ির হেঁশেলে প্রথমবার তৈরি হয়েছিল ‘মাইসোর পাক’। ট্রেনে-বাসে যে দিলখুশ বিক্রি হয়, এ মিষ্টি দেখতে তেমনটাই। বেসন, ঘি, চিনির পাকে তৈরি এই মিষ্টি ভারতীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে সেই কবে থেকে জুড়ে রয়েছে।
বলা হয়, মহীশূর রাজপরিবারের রাঁধুনি কাকাসুরা মদাপ্পা প্রথম এই মিষ্টি তৈরি করেছিলেন।
মাদাপ্পার বংশধর এ নটরাজ নিউজ ১৮’কে জানান, ‘ঠিক যেমন মনুমেন্ট বা ঐতিহ্যের নিজস্ব নাম আছে। সে নাম ছাড়া তাদের চেনাই যায় না। একইভাবে মাইসোর পাক ছাড়া এই মিষ্টিকে আর কোনো নামে ডাকাই যায় না। মাইসোর পাক-ই বলুন। এটার অন্য নামকরণ বা এই নামের অপব্যাখ্যা করা ঠিক নয়।’
নটরাজ বুঝিয়ে বলেন, ‘পাক’ শব্দটির সঙ্গে পাকিস্তানের দূর-দূরান্ত অবধি কোনো সম্পর্ক নেই। এটি একটি কন্নড় শব্দ ‘পাকা’ থেকে এসেছে। এর অর্থ চিনির রস বা সুগার সিরাপ। আর যে হেতু মাইসোরে তৈরি হতো, তাই নাম হয় ‘মাইসোর পাক’। তাই এই মিষ্টিকে অন্য নামে ডাকার কোনো কারণই নেই।
এরই মধ্যেই রাজস্থানের জয়পুরের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা জানিয়ে দিয়েছেন, ‘মোতি পাক’, ‘আম পাক’, ‘গন্ড পাক’, ‘মাইসোর পাক’ থেকে ‘পাক’ তুলে ‘শ্রী’ ব্যবহার করতে চান তারা। তাই নতুন নামে ডাকাও শুরু করেছেন। যেমন ‘আম পাক’ এখন ‘আম শ্রী’ কিংবা ‘মোতি পাক’ এখন ‘মোতি শ্রী’।
উল্লেখ্য, মাইসোর পাক কর্ণাটকের একটি বিখ্যাত মিষ্টি ৷ যা মূলত বেসন, চিনি এবং ঘি দিয়ে তৈরি করা হয়। এর ইতিহাস মহীশূরের রাজকীয় রান্নাঘরের সঙ্গেও সম্পর্কিত। মাইসোর পাকের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় উনিশ শতকে৷ যখন কৃষ্ণরাজ ওয়াদিয়ার (চতুর্থ) রাজত্বকালে মহীশূর প্রাসাদের রান্নাঘরে কাকাসুর মাদাপ্পা নামের এক রাঁধুনি এই মিষ্টি তৈরি করেন৷ ওই রাধুঁনি বেসন, ঘি ও চিনি দিয়ে এক নতুন মিষ্টি তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন৷ সেই মিষ্টিকে তিনি ‘মাইসোর পাক’ নামকরণ করেন৷
কৃষ্ণরাজ ওয়াদিয়ার (চতুর্থ) এই মিষ্টিটি খুব পছন্দ করতেন ৷ তিনি চেয়েছিলেন যে তার রাজ্যের মানুষজনও এই মিষ্টির স্বাদ নিতে পারে ৷ তাই তিনি তার রাঁধুনিকে নির্দেশ দেন, এই মিষ্টিটি রাজপ্রাসাদের বাইরেও বিক্রি করতে হবে ৷
এভাবে মাইসোর পাক ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ৷ এবার সেই মাইসোর পাক থেকে ‘পাক’ শব্দটি তুলে ‘শ্রী’ যোগ করলেন জয়পুরের এক মিষ্টির দোকান।