ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা পুনরায় প্রশমিত হলে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ঢুকে হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রাহ্মনিয়াম জয়শঙ্কর। তিনি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ফার্স্ট পোস্টকে স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, প্রয়োজনে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ঢুকেও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে ভারত।
মঙ্গলবার (১০ জুন) বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে জয়শঙ্কর বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সহাবস্থানে বিশ্বাস করি না। এপ্রিলের মতো আরেকটি হামলা হলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিশোধ নেওয়া হবে। যেখানেই সন্ত্রাসীরা লুকিয়ে থাকুক, আমরা সেখানে গিয়ে আঘাত করব— এমনকি পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকেও।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের লড়াই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে, কোনো দেশের বিরুদ্ধে নয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে নিমজ্জিত, আর ভারত তা নির্মূলের জন্য সংকল্পবদ্ধ।’
২২ এপ্রিল পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ পর্যটক নিহত হওয়ার দায় পাকিস্তানের বলে অভিযোগ করে ভারত। শুরু থেকেই পাকিস্তান দায় অস্বীকার ও স্বাধীন তদন্তের প্রতি জোর দেয়। ভারত অভিযোগ করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’(টিআরএফ) নামক জঙ্গীগোষ্ঠী, যা হামলার দায় স্বীকার করেছে, পাকিস্তান মদদপুষ্ট।
ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরভিত্তিক সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা হলো টিআরএফ।
এই হামলার জবাবে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়, যার মধ্যে সিন্ধু নদীর পানি বণ্টনচুক্তি পর্যালোচনা, পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিলসহ কয়েকটি পদক্ষেপ ছিল। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দেয় এবং ভিসা বাতিল করে।
চলমান উত্তেজনার মধ্যেই ৭ মে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে সীমান্তবর্তী ও নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর অঞ্চলে অভিযান চালায়। নয়াদিল্লির তথ্য অনুযায়ী, এ অভিযানে ৭০ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়। পাকিস্তানের দাবি, নিহত হয়েছেন ১১ সেনাসহ মোট ৫১ জন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ৭৮ জন।
৯ মে পাকিস্তান ‘অপারেশন বুনিয়ান উম মারসুস’ নামে পাল্টা অভিযান চালায়। এতে ভারতে অন্তত ৩৬ জন নিহত এবং ৪৬ জনের বেশি আহত হন।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১০ মে থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা এখনো প্রবল।
এই প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসবাদবিরোধী আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছে ভারত। ইউরোপ সফরের অংশ হিসেবে জয়শঙ্কর ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজা কালাসের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানকে স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই— সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিক্রিয়া হবে কঠোর এবং নির্দয়। নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রয়োজন হলে সীমান্ত অতিক্রম করতেও পিছপা হব না।’
আপনার মতামত লিখুন :