ভারতের গুজরাটের ভদোদরার পাদ্রায় গম্ভীরা-মুজপুর সেতুর একটি অংশ ধসে ৪ গাড়ি নদীতে পড়ে ১৫ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় অনেকেই এখনো নিখোঁজ, আর যারা বেঁচে আছেন তারা এখনো সেই ভয়ংকর মুহূর্ত ভুলতে পারছেন না।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে নদীতে সেতু ভেঙে পড়া নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতার বর্ণনা।
আনোয়ার নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমাদের পেছনে সেতুর অংশটা হঠাৎ ভেঙে পড়ে গেল। একটা শব্দ, আর তারপর দেখি গাড়িগুলো নদীর মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের গাড়িটাও গড়াতে শুরু করেছিল। আমি জানি না কীভাবে আমরা লাফ দিয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম। এক সেকেন্ড দেরি হলে হয়তো আমরাও আজ বেঁচে থাকতাম না।
সোনালবেন পাধিয়া নামে এক নারী বলেন, আমি চিৎকার করতে থাকি, আমার ছেলেকে বাঁচান!’ অনেকক্ষণ পর কেউ এসে আমাকে টেনে তোলেন। ঘণ্টাখানেক পর তাকে জীবিত উদ্ধার করা হয় ঠিকই। কিন্তু তার ছয়জন প্রিয়জন, তারা আর কেউই ফিরে আসেননি।
সোনালবেনের আকুতি ভরা একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা দেখে কেঁদেছে হাজারও মানুষ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন , দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা দড়ি হাতে ছুটে আসেন, নিজের জীবন বাজি রেখে উদ্ধারকাজ শুরু করেন।
জয়রাজ সিংহ নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, এমন দৃশ্য জীবনে কখনও দেখিনি। মানুষ সাহায্যের জন্য চিৎকার করছে, গাড়িগুলো ভেসে যাচ্ছে। আমরা দড়ি বেঁধে গাড়িগুলো টানতে থাকি। অনেকে কাঁদছিল। কেউ কাউকে চিনত না, কিন্তু সবাই চেষ্টা করছিল অন্যের জীবন বাঁচানোর।’
স্থানীয়রা জানান, বহু বছর ধরেই সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা অনেকবার অভিযোগ করেছি। রড বেরিয়ে ছিল, গর্ত ছিল। আমরা সবাই ভয় পেতাম এই সেতু পার হতে। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শুনল না।
গুজরাট সরকারের মুখপাত্র ঋষিকেশ পটেল এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সেতুটি নিয়মিত পরীক্ষা ও মেরামতের আওতায় ছিল। মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি পুরনো সেতু ভেঙে নতুন করার অনুমোদনও দিয়েছেন।’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ ঘটনায় সমবেদনা জানিয়েছেন, ক্ষতিপূরণেরও ঘোষণা দিয়েছেন। গুজরাট সরকারের তরফে বলা হয়েছে, নতুন সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু তার আগেই থেমে গেল বহু জীবন।
এর আগে, ২০২২ সালে গুজরাটের মোরবিতে ১৩৭ বছরের পুরোনো একটি সেতু ধসে ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
আপনার মতামত লিখুন :