ঢাকা বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

জেন-জি বিক্ষোভের আগুনে পুড়ছে লাদাখ, নিহত ৪

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৫, ০৯:৪৭ পিএম
লাদাখের লেহ-তে বিক্ষোভ ও অবরোধের সময় আন্দোলনকারীরা। ছবি- পিটিআই

ভারতের কেন্দ্রশাসিত লাদাখকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে প্রধান শহর লেহ-তে জেনারেশন জেড বা জেন-জি’দের বিক্ষোভ ছড়িয়ে সহিংসতায় রূপ নেয়। এতে অন্তত চারজন নিহত ও প্রায় ৭০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কারফিউ জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে জেন-জি ও আমজনতা বিক্ষোভে নামলে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় লাদাখকে রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে এ বিক্ষোভ শুরু হয়। শুরুতে শান্তিপূর্ণ হলেও ধীরে ধীরে তা সহিংস হয়ে ওঠে। অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা লেহ-তে বিজেপির পার্টি অফিসে আগুন ধরিয়ে দেন এবং কয়েকটি পুলিশ গাড়িও পুড়িয়ে দেন। এর পরই উত্তেজনা বাড়তে থাকলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।

বিক্ষোভ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদী কর্মী সোনম ওয়াংচুক। তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হেরে গেল সহিংসতার কাছে’। তবে ওয়াংচুক স্পষ্ট করে জানান, তিনি কোনো সহিংস আন্দোলনকে সমর্থন করেন না। তার দাবি, ‘দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ এ সহিংসতা’। তিনি আবারও লাদাখকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ও ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় আনার দাবি জানান।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রশাসন ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার (বিএনএসএস) ১৬৩ ধারার অধীনে পাঁচ বা ততোধিক লোকের সমাবেশ নিষিদ্ধ করার জন্য নিষেধাজ্ঞামূলক আদেশ জারি করেছে। এই সহিংসতার কারণে জলবায়ু কর্মী সোনম ওয়াংচুক তার ১৫ দিনের অনশন ধর্মঘট প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।

২০১৯-এ জম্মু ও কাশ্মীরের সঙ্গেই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে নথিভুক্ত হয় লাদাখ। এর পর থেকে লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন নতুন নয়। ওয়াংচুক নিজেও এ দাবিতে একাধিকবার অনশন করেছেন। তার দাবি, লাদাখের জন্য পৃথক পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন করতে হবে এবং লেহ ও কারগিল জেলার জন্য আলাদা লোকসভা আসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

আজ বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল লেহ অ্যাপেক্স বডি (এলএবি)-র যুব শাখা। সংগঠনের চেয়ারম্যান থুপস্তান সোয়াং সংবাদসংস্থা এএনআই-কে বলেন, ‘লাদাখের চারটি মূল দাবিকে সামনে রেখেই আমরা আন্দোলন চালাচ্ছি। কিছু ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠে। এই সময় আমাদের ২-৩ জন যুবক শহীদ হয়েছেন। আমরা জনগণকে আশ্বস্ত করতে চাই, তাদের রক্ত বৃথা যাবে না।’ তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে দ্য হিন্দুস্তান টাইমস কমপক্ষে চারজন নিহত ও অর্ধ শতাধিক লোক আহতের খবর জানিয়েছে।

তিনি ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের ইঙ্গিতও দেন। আগামী ৬ অক্টোবর লাদাখের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে সহিংস এই বিক্ষোভ লাদাখের পরিস্থিতিকে নতুন মাত্রায় উত্তপ্ত করে তুলল।

এদিকে লাদাখ বিক্ষোভের মধ্যে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে অভিযোগ করেছেন, কংগ্রেসের জেন-জি নেতা ও দলের নির্বাচিত ওয়ার্ড সদস্য ফুন্টসোগ স্টানজিন সেপাগ এই আন্দোলনের পেছনে রয়েছেন। দুবে এক্সে লিখেছেন, ‘রাহুলগান্ধী জি, লাদাখে বিজেপি অফিসে আগুন লাগানো হয়েছে। এর পেছনে নেতা হলেন আপনার জেন-জি নেতা ফুন্টসোগ স্টানজিন সেপাগ, যিনি কংগ্রেসের নির্বাচিত ওয়ার্ড সদস্য। আগুন নিয়ে খেলার পরিণতি কী হবে? বিজেপি কর্মীদের চ্যালেঞ্জ করা বন্ধ করুন।’

জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা সেশ পল বৈদ জনগণের কাছে শান্তির আবেদন জানিয়ে বলেছেন, সহিংসতা কারও উপকারে আসবে না। এক্স হ্যান্ডেলে দেওয়া ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, ‘লেহ, লাদাখে সহিংসতা গভীরভাবে উদ্বেগজনক। কিন্তু এর জন্য দায়ী কে? জম্মু বহু দশক ধরে রাজ্যের দাবি করলেও তারা কখনও সহিংসতার আশ্রয় নেয়নি। আমার লাদাখি ভাইবোনদের কাছে আমার আন্তরিক আবেদন, সহিংসতা সমাধান নয়।’

লাদাখকে পূর্ণ রাজ্য মর্যাদার দাবিতে আন্দোলনকারীরা যুক্তি দেন, এই অঞ্চলের ভঙ্গুর পরিবেশ, অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং উপজাতি জনগোষ্ঠীর অধিকার সংরক্ষণের জন্য রাজ্য মর্যাদা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা অপরিহার্য। লেহ অ্যাপেক্স বডি ও কার্গিল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্সসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক গোষ্ঠী কেন্দ্রের কাছে এই দাবিগুলো তুলে ধরতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।

অস্থিরতার কারণে রোববার থেকে শুরু হওয়া চার দিনের বার্ষিক লাদাখ উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানও বাতিল করা হয়েছে। স্থানীয় শিল্পী, সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, পর্যটক ও সাধারণ জনগণের অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল প্রশাসন এই সিদ্ধান্তকে ‘অনিবার্য পরিস্থিতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।