ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস জানিয়েছেন, যদি কখনো আর দায়িত্ব পালন করার মতো অবস্থায় না থাকি, সেক্ষেত্রে অস্থায়ীভাবে আমার স্থলাভিষিক্ত হবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট হুসেইন আল-শেখ।
গত রোববার (২৬ অক্টোবর) রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ওয়াফা এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
দেশটির নতুন সাংবিধানিক ডিক্রি অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট মারা গেলে বা তিনি দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়ে পড়লে, উপ-রাষ্ট্রপতি সর্বোচ্চ ৯০ দিন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এবং এই সময়ের মধ্যে অবাধ ও প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে।
ঘোষণায় আরও বলা হয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতির কারণে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব না হলে, ফিলিস্তিনি কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অন্তর্বর্তীকালীন মেয়াদ একবারের জন্য বাড়াতে পারবে।
এই নতুন ঘোষণায় ২০২৪ সালের সাংবিধানিক ডিক্রি নং ১ বাতিল করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছিল- প্রেসিডেন্ট পদ শূন্য হলে ফিলিস্তিনি জাতীয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
আব্বাসের মতে, নতুন এই ঘোষণাটি ‘ক্ষমতার পৃথকীকরণ ও নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের নীতি’ নিশ্চিত করবে।
এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে হামাসসহ বিরোধী দলগুলো। তাদের দাবি, এটি ফিলিস্তিনি মৌলিক আইন লঙ্ঘন করে এবং ‘রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে একতরফাভাবে পরিবর্তন’ করার প্রচেষ্টা।
হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থে নেওয়া হয়েছে এবং জাতীয় ঐক্য ও সংস্কারের প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’
৮৯ বছর বয়সি মাহমুদ আব্বাস ২০০৫ সাল থেকে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৪ সালে ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুর পর তিনি এই পদে আসীন হন। ২০২৪ সালের এপ্রিলে হুসেইন আল-শেখকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) নির্বাহী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
আল-শেখ পূর্বে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিরাপত্তা সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন এবং মার্কিন কূটনীতিকদের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
তবে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা তুলনামূলকভাবে কম। ফিলিস্তিনি সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চের জরিপ অনুযায়ী, ২০২২ সালের নির্বাচন হলে তিনি মাত্র তিন শতাংশ ভোট পেতেন।
তার বিরুদ্ধে অতীতে যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে, যা গোপনে মীমাংসা হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফরেন পলিসি সাময়িকী জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আল-শেখ মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, আব্বাসের এই ঘোষণা তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী আল-শেখকে ক্ষমতার উত্তরসূরি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা।
অন্যদিকে, আইনসভা দীর্ঘদিন স্থগিত থাকায় এই সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনি রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন