হাইতিতে গত সপ্তাহে ধারাবাহিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স নেটওয়ার্ক (আরএনডিডিএইচ)। সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, এ হত্যাকাণ্ড ক্যারিবীয় দেশটির নিরাপত্তা সংকটের আরেকটি নৃশংস অধ্যায়। সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
আরএনডিডিএইচ’র তথ্য অনুযায়ী, ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় এ হামলা হয়। ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেশ কয়েকজনের মরদেহ উদ্ধার করা যায়নি, আর অনেক লাশ ঝোপঝাড়ে পড়ে ছিল, যা কুকুর খেয়ে ফেলেছে।
হাইতি দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণহীন গ্যাং সহিংসতায় জর্জরিত। রাজধানী ও আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর দখলে। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে একটি শক্তিশালী গ্যাং জোট সমন্বিত হামলা চালায়। ফলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অ্যারিয়েল হেনরি পদত্যাগ করে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিলের কাছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হাইতির পুলিশকে সহায়তা দিতে কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হলেও রক্তপাত থামানো যায়নি।
এসব হত্যাকাণ্ডে ‘ভিভ আনসান্ম’ নামের গ্যাং জোটকে দায়ি করেছে আরএনডিডিএইচ। ২০২৪ সালের মার্চ থেকে ক্যাবারেট শহর নিয়ন্ত্রণ করছে এই গ্যাং জোট। সংস্থার দাবি, গোষ্ঠীটি রাজধানীর উত্তরে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের লাবোদেরি শহরে ‘নির্মম হত্যাযজ্ঞ’ চালিয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলাকারীরা অর্ধশতাধিক সাধারণ মানুষকে হত্যা করে এবং ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। এর মধ্যে অনেকে প্রাণ বাঁচিয়ে পাশের শহরে পালিয়ে যায়। কেউ আবার ছোট নৌকায় করে সমুদ্রে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেন।
হাইতির নাজুক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে বারবার সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। গত মাসে মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ‘ধসে পড়ছে’ এবং রাজধানীর ৯০ শতাংশের বেশি এলাকা গ্যাংদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।
রোববার এক বিবৃতিতে গুতেরেস এসব হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানান এবং বহুজাতিক নিরাপত্তা মিশনে অর্থ, জনবল ও অন্যান্য সহায়তা ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানান।
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই হাইতিতে অন্তত ৩ হাজার ১৪১ জনকে হত্যা করা হয়েছে, যা দেশটির চরম বিশৃঙ্খলার স্পষ্ট প্রমাণ।