পুঁজিবাজারে শেয়ারের লেনদেন ঠেকেছে তলানিতে। ২০১২ সালে ৩ হাজার কোটি টাকার লেনদেন এখন স্বপ্নের মতো। এক যুগের ব্যবধানে সেই উচ্ছ্বাসী লেনদেন এখন নেমে এসেছে তিন শতকের ঘরে। তাই ‘বাজার কোন দিকে যাচ্ছে, কিছুই বুঝতে পারছি না’ জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পুঁজিবাজারের বিভিন্ন অংশীজন।
সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ২৫৩ কোটি টাকা। যা গত সপ্তাহের তুলনায় কম। একই সঙ্গে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪,৭৮১ পয়েন্টে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আগে গত আগস্টে যে লেনদেন ছিল ১ হাজার ৫০০ কোটির ঘরে। ৯ মাস পরে এখন বাজারের লেনদেন কমে নেমেছে ২৫০ কোটি টাকায়। আর সূচক ১ হাজার ২০০ পয়েন্টের বেশি কমে ৪ হাজার ৭৮৫ পয়েন্টে নেমেছে।
সব মিলে তীব্র তারল্য সংকটে ভুগছে পুঁজিবাজার। বাজারে নেই নতুন আইপিও (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব)।
অন্যদিকে শুদ্ধাচারের ঘাটতিতে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার সংকট আরও তীব্র হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় তা আরও তলানিতে ঠেকেছে।
লেনদেন তলানিতে আসার কারণ হিসেবে ‘নতুন অর্থের সরবরাহ কম’Ñ বলেন এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহবুব মজুমদার। তিনি বলেন, ‘বাজারে নতুন কোনো আইপিও নেই। যার মাধ্যমে নতুন অর্থের সরবরাহ ঘটে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা সঠিক ব্যবস্থা না নেওয়ায় নতুন আইপিও আসছে না। যার কারণে লেনদেনও বাড়ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিছু কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পরে তাদের ব্যবসায় ঘাটতি হতে পারে। তার দায় মার্চেন্ট ব্যাংকে দেওয়া সমীচীন নয়’, বলেন তিনি।
‘বাজার কোন দিকে যাচ্ছে, কিছুই বুঝতে পারছি না’ জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী।
উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সূচক কমছেই; লেনদেন আড়াইশ কোটি টাকায় নেমেছে। পুঁজি হারিয়ে দিশাহারা বিনিয়োগকারীরা; কিন্তু দেখার কেউ নেই। সেই আগের মতো। নতুন সরকারের কাছে বিনিয়োগকারীদের অনেক আশা ছিল। সব শেষ হয়ে গেছে।’
সংকটের তীব্রতায় বিনিয়োগকারীর স্বপ্ন ভাঙতে ভাঙতে ক্ষুদ্র হয়ে আসছে পুঁজিবাজার। গত বৃহস্পতিবার ঢাকার শেয়ারবাজারে লেনদেন হয়েছে মাত্র ২৫৩ কোটি টাকা। প্রতিদিনই কমছে সূচক এবং লেনদেন। প্রত্যাশা ছড়িয়েও কাজে আসছে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের গত ৯ মাসেও প্রত্যাশিত ফল আসেনি। উল্টো কমেছে লেনদেন এবং ডিএসইর সব সূচকের হয়েছে পতন।
গত সপ্তাহের ১৫ মে বৃহস্পতিবার ছিল গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পতনের দিন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স নামে ৪,৭৮১ পয়েন্টে। যা ২০২০ সালের ২৪ আগস্টের পর অর্থাৎ গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ডিএসইতে লেনদেন মাত্র ২৯৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
গত কয়েক দিনে সূচকের উন্নতি হলেও টাকার পরিমাণ বাড়েনি। সপ্তাহের ব্যবধানে তা কমে গতকাল বৃহস্পতিবার হয়েছে ২৫৩ কোটি টাকা। লেনদেন করা কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১১৪টির, কমেছে ২০০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৭৭টি কোম্পানির শেয়ারদর।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বৃহস্পতিবার মোট ৩৯১টি কো¤পানির ১১ কোটি ২০ লাখ ৬৩ হাজার ১২২টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। মোট লেনদেনের পরিমাণ ২৫৩ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার ৬৩৪ টাকা।
দিনভর লেনদেন শেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স (ডিএসইএক্স) আগের কার্যদিবসের চেয়ে সূচক ১৬.২১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪৭৮৫.১২ পয়েন্টে। ডিএস-৩০ মূল্যসূচক ৪.৫৬ পয়েন্ট কমে ১৭৭৭.১০ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক ৩.৩৫ পয়েন্ট কমে ১০৪৬.৯০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কোম্পানির মধ্যে শীর্ষে ছিল- বীচ হ্যাচারী, ওরিয়ন ইনফিউশন, স্কয়ার ফার্মা, বিএসসি, এস আলম কোল্ড রোল্ড, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, শাইনপুকুর সিরামিকস, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, ব্র্যাক ব্যাংক ও ফু-ওয়াং ফুড।
অন্যদিকে, ডিএসইতে দর বাড়ার শীর্ষে থাকা প্রধান ১০টি কোম্পানি মধ্যে ছিল- সোনারগাঁও টেক্সটাইল, বিপিএমএল, বেঙ্গল উইন্ডসোর, এইচআর টেক্সটাইল, এস আলম কোল্ড রোল্ড, বীকন ফার্মা, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, ইস্টার্ন কেবলস, কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ ও এপেক্স ট্যানারি।