বিশ্বের মোট তেল ও গ্যাস সরবরাহের প্রায় ২০% যাত্রাপথ- হরমুজ প্রণালি, এটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে ইরানের প্রেস টিভির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, দেশটির সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
রোববার (২২ জুন) প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পার্লামেন্টের অনুমোদনের পর হরমুজ প্রণালি বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, ইরানের আইনপ্রণেতা ও বিপ্লবী গার্ডের কমান্ডার ইসমাইল কোসারি রোববার ইয়ং জার্নালিস্ট ক্লাবকে বলেন, ‘এটি আমাদের মাথায় রয়েছে, প্রয়োজন পড়লে যেকোনো সময় এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।’
উল্লেখ্য, হরমুজ প্রণালি দিয়ে প্রতিদিন যে পরিমাণ তেল ও গ্যাস পারাপর করা হয়, তা বৈশ্বিক জ্বালানি চাহিদার বড় অংশ পূরণ করে। সুতরাং এই প্রণালী বন্ধ হলে বিশ্ব বাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।
এর আগে ইসরায়েল-ইরানের মধ্যেকার পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর প্রশ্ন উঠেছিল, ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে।
সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশে হরমুজ প্রণালি মাত্র ৪০ কিলোমিটার প্রশস্ত যেখান দিয়ে পৃথিবীর প্রায় এক-পঞ্চমাংশ অপরিশোধিত তেল পারাপার হয়।
ইরানের নৌবাহিনীর কমান্ডারের মতে, ইরান এই প্রণালি বন্ধ করার কথা বিবেচনা করতে পারে।
যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা এমআইসিক্স-এর সাবেক প্রধান স্যার অ্যালেক্স ইয়োঙ্গার সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, ‘প্রণালি বন্ধ করা স্পষ্টতই একটা অবিশ্বাস্য অর্থনৈতিক সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ এর প্রভাব পড়বে তেলের দামের ওপর।’
এদিকে ইরানের কায়হান পত্রিকার প্রধান সম্পাদক হোসেইন শরিয়তমাদারি সতর্ক করে সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামে কায়হানের এক বার্তায় বলেছেন, ‘কোনো সংশয় বা বিলম্ব না করে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আমরা অবশ্যই বাহরাইনে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাবো। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানি ও ফ্রান্সের জাহাজ চলাচলের জন্য হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
অন্যদিকে ইরান যদি প্রণালিটি বন্ধ করে তবে বিশ্বজুড়ে তেলের দাম আকাশছোঁয়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে শুধু জ্বালানির বাজারে অস্থিরতা নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যেই সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
জ্বালানি ও পরিবহণ বাজার পরামর্শক সংস্থা ভরটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল, কনডেনসেট এবং জ্বালানি এই জলপথ দিয়ে পরিবাহিত হয়। বিশ্বের অন্যতম বড় তরল প্রাকৃতিক গ্যাস এলএনজি রপ্তানিকারক দেশ কাতারও এই প্রণালীর ওপর নির্ভরশীল।
ইআইএর তথ্য অনুযায়ী, হরমুজ প্রণালি দিয়ে যাওয়া জ্বালানি ও তেলের প্রায় শতকরা ৮২ ভাগের গন্তব্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশে৷চীন, ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া এই চারটি দেশ সম্মিলিতভাবে এই প্রণালি দিয়ে যাওয়া তেল ও কনডেনসেটের প্রায় ৭০ ভাগ আমদানি করে ৷ পথটি বন্ধ হলে এ দেশগুলো সবচেয়ে ক্ষতিতে পড়বে।