২০২৫ সালের ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সংঘর্ষ শুধু দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসেই নয়, বরং বিশ্ব সামরিক ইতিহাসে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে। এই সংঘাতকে অনেক বিশ্লেষক বলছেন ‘বিশ্বের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ড্রোন যুদ্ধ’।
কারণ, এই যুদ্ধে যেভাবে ড্রোন প্রযুক্তি প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, তা অতীতের যেকোনো সংঘাতের চেয়ে ব্যতিক্রম এবং বিপজ্জনক।
যুদ্ধের প্রেক্ষাপট
২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ভারতের কাশ্মীরের পহেলগামে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করে এবং ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান চালু করে। এই অভিযানের মূল ভিত্তিই ছিল ড্রোন-নির্ভর হামলা যেখানে মিসাইলবাহী ড্রোন ব্যবহার করে লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করা হয়।
পাকিস্তান পাল্টা জবাব হিসেবে আল-ইস্তিখবার নামে একটি ড্রোন প্রোগ্রাম সক্রিয় করে। এর ফলে সীমান্তে ম্যানড ড্রোন, কামিকাজে ড্রোন, রিকনিসেন্স ড্রোন এবং অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেমের এক জটিল প্রযুক্তিগত যুদ্ধ শুরু হয়।
ড্রোন যুদ্ধ হয়ে উঠার গল্প
এই সংঘাতে প্রথাগত বিমান বা ট্যাংকের বদলে ড্রোনই ছিল প্রধান আক্রমণ ও প্রতিরক্ষার মাধ্যম। যুদ্ধের মাঠে ড্রোন ব্যবহারের মাত্রা ছিল এই রকম:
ভারতীয় বাহিনী DJI Matrice, Heron TP, এবং ভারতীয় DRDO ডেভেলপড Garuda ড্রোন ব্যবহার করে লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল আঘাত হানে।
পাকিস্তানী সেনা চীনের সহায়তায় তৈরি Wing Loong II এবং Burraq ড্রোন ব্যবহার করে সীমান্তের ওপারে আক্রমণ চালায়।
দুই দেশই AI-নিয়ন্ত্রিত স্বয়ংক্রিয় ড্রোন স্কোয়াড্রন ব্যবহার করে, যা মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই লক্ষ্য শনাক্ত ও হামলা করতে সক্ষম।
এছাড়া, উভয় পক্ষ ‘ক্যামোফ্লাজড মিনি ড্রোন’, আত্মঘাতী ড্রোন এবং জিপিএস ব্ল্যাকআউট টেকনোলজি ব্যবহার করে একে অপরের প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো নষ্ট করার চেষ্টা চালায়।
সামরিক বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ড্রোন-নির্ভর যুদ্ধ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে এনেছে:
# কম খরচে উচ্চ মারাত্মকতা: ড্রোন ব্যবহারে যুদ্ধের খরচ তুলনামূলক কম, কিন্তু ধ্বংসের মাত্রা অনেক বেশি।
# নিরাপদ যুদ্ধ কৌশল: চালকের জীবন ঝুঁকির বাইরে থাকায় রাষ্ট্রগুলো আগ্রাসী কৌশল নিতে দ্বিধা করে না।
# আধিপত্যের প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা: ড্রোন প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ মানেই ভবিষ্যতের যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ।
বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ প্রভাব
এই যুদ্ধ আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ইসরায়েল- সব দেশই এখন ড্রোন প্রযুক্তি উন্নয়নে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। একই সঙ্গে জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো ‘স্বয়ংক্রিয় হত্যাযন্ত্র’-এর ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক শুরু করেছে।
অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, ভবিষ্যতের যুদ্ধ হবে মানুষবিহীন যন্ত্রের লড়াই। আর ২০২৫ সালের ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ ছিল তার প্রথম বাস্তব উদাহরণ- বিশ্বের প্রথম ‘ড্রোন যুদ্ধ’।
২০২৫ সালের এই সংঘাত প্রমাণ করেছে, যুদ্ধ আর আগের মতো নেই। এটি এখন বুদ্ধিমত্তার, প্রযুক্তির, এবং অ্যালগরিদমের যুদ্ধ। যারা এই প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তারাই আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে। আর যারা পিছিয়ে থাকবে, তারা যুদ্ধের আগেই হার মানবে।
আপনার মতামত লিখুন :