বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে ধারাবাহিক ওপেনারদের একজন, সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল। চলতি বছরের শুরুতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু থেকে সরে যাননি তিনি।
বরং এখন তার উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে একেবারে নতুন কিছু পরিসরে—রাজনীতির মঞ্চে এবং ক্রীড়া সংগঠকের ভূমিকায়। এসব পদক্ষেপ নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে—তামিম কি তবে রাজনীতির মাঠে নামছেন? নাকি দেশের ক্রীড়া অঙ্গনের উন্নয়নে সংগঠক হিসেবে নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছেন?
মাঠ ছেড়েছেন, কিন্তু মঞ্চ ছাড়েননি
এ বছরের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তামিম। যদিও ঘরোয়া ক্রিকেটে এখনও সক্রিয় রয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে এক ভয়ংকর স্বাস্থ্য ঝুঁকি পার করে এসেছেন দেশসেরা এই ওপেনার।
গত ২৪ মার্চ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ চলাকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তামিম। চিকিৎসকরা জানান, একাধিকবার হার্ট অ্যাটাক হয় তার। দ্রুত রিং পরানো হয় এবং চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরেও পাঠানো হয় তাকে।
এই অভিজ্ঞতা তাকে জীবন ও ভবিষ্যৎ ভাবনায় নতুন করে নাড়া দিয়েছে বলেই ধারণা করছেন অনেকে।
তামিম বলেন, “আপনারা জানেন আমি অসুস্থ ছিলাম, একটা অঘটন ঘটেছিল। এখন মাত্র রিকভার করছি। আপনাদের এত ভালোবাসা দেখে আমি খুবই খুশি। ইনশাআল্লাহ, আবার দেখা হবে।”
চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনের দুর্দশা নিয়ে সরব
সাম্প্রতিক সময়ে তামিমের উপস্থিতি দেখা গেছে রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও। গতকাল শনিবার (১০ মে) বিএনপির ‘তারুণ্যের মহাসমাবেশ’-এ উপস্থিত থেকে তামিম বললেন চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনের দুর্দশা নিয়ে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘একটা সময় সব খেলাতেই জাতীয় দলে চট্টগ্রামের ৬-৭ জন খেলোয়াড় থাকত। কিন্তু গত ১৫ বছর এই জায়গা থেকে অনেক কষ্ট করে একজন-দুইজন সুযোগ পেয়েছে। কেন এমনটা হলো, তার জবাব খুঁজে বের করা জরুরি।’
সংগঠক না রাজনীতিক?
রাজনৈতিক মঞ্চে উপস্থিতির পাশাপাশি তামিমের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে কিছু রাজনৈতিক নেতার সঙ্গেও। বিশেষ করে বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন পুনর্গঠন নিয়ে তার আলোচনা হয়েছে বলে তিনি নিজেই জানান।
তামিম বলেন, ‘হেলাল ভাই, ইসরাফিল ভাই ও হুম্মাম ভাইয়ের সঙ্গে চট্টগ্রামের স্পোর্টস নিয়ে কথা হয়—কীভাবে আগের জায়গায় ফিরে যাওয়া যায়। আমি নিশ্চিত, তারা সুযোগ পেলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।’
তরুণদের উদ্দেশ্যে তামিমের বার্তা
তামিম শুধু অভিযোগ করে থেমে থাকেননি। বরং তরুণদের জন্য দিয়েছেন বার্তা। তিনি বলেন, ‘জাতীয় দলে অমুকের কারণে খেলতে পারিনি, তমুকের কারণে খেলতে পারিনি—এটা স্পোর্টসম্যানের কথা হতে পারে না। স্পোর্টসম্যানের কথা হবে, ‘হয়তো আমার ভুল ছিল, সে কারণে দলে যেতে পারিনি।’
এই বক্তব্যে তার অভিজ্ঞতা ও পরিপক্বতা ফুটে উঠেছে, যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে।
তামিম ইকবাল এখনও ক্রিকেট মাঠে খেলে যাচ্ছেন, কিন্তু তার মন ও মনন যেন দেশের ক্রীড়াঙ্গনের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছে আরও গভীরভাবে। রাজনীতি বা সংগঠকতা—যেকোনো ভূমিকাতেই হোন না কেন, তামিমের পরবর্তী পদক্ষেপ যে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, সেটাই এখন ক্রীড়া ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আলোচনার বিষয়।
আপনার মতামত লিখুন :