সোমবার, ১২ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৫, ১১:৪২ এএম

পাক-ভারত যুদ্ধে যত লাভ হলো চীনের

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৫, ১১:৪২ এএম

পাক-ভারত যুদ্ধে যত লাভ হলো চীনের

ছবি: সংগৃহীত

২০২৫ সালের ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ ছিল দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এক গভীর সংকটের মুহূর্ত। ভারতের কাশ্মীর অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলার পর, দেশটি পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সরাসরি সামরিক অভিযান চালায়, যার ফলে সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলি, মিসাইল হামলা, এবং বিমান বিধ্বংসের মতো ঘটনাও ঘটে।

যুদ্ধ যখন দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। কিন্তু এই অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে চীন ছিল এমন এক দেশ, যে সরাসরি সংঘর্ষে অংশ না নিয়ে ছায়ার নিচে দাঁড়িয়ে হিসেবি কৌশল ও পরিকল্পনার মাধ্যমে অন্যদের ক্ষয় থেকে নিজের লাভের খাতা পূর্ণ করেছে।

কৌশলগত নিরপেক্ষতা: যুদ্ধ থেকে দূরে, লাভের কেন্দ্রবিন্দুতে

চীন কখনোই ভারতের সঙ্গে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষে আগ্রহী নয়। বিশেষ করে যখন ভারতের মনোযোগ সীমান্তের আরেক পাশে, পাকিস্তানের দিকে কেন্দ্রীভূত। এ পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে চীন একটি কৌশলগত নিরপেক্ষতা গ্রহণ করে, যা তাকে একই সময়ে আন্তর্জাতিক শান্তিপ্রিয় শক্তি এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের সুযোগদাতা হিসেবে তুলে ধরে।

চীন যুদ্ধবিরতির জন্য কোনো প্রচেষ্টা চালায়নি, অথচ নিজেকে নিরপেক্ষ ‘দর্শক’ হিসেবে উপস্থাপন করেছে। এই অবস্থান চীনের কূটনৈতিক স্বাধীনতা বজায় রাখে, আবার পাকিস্তানের প্রতি অঙ্গীকারও প্রমাণ করে- কারণ পাকিস্তান হলো চীনের অন্যতম ঘনিষ্ঠ কৌশলগত মিত্র।

ভারতের মনোযোগ সরিয়ে চীনের সীমান্তে সক্রিয়তা

ভারত যখন পাকিস্তান সীমান্তে অপারেশন ‘সিঁদুর’ পরিচালনায় ব্যস্ত, তখন চীন লাদাখ অঞ্চলে তার সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়ে দেয়। এই পদক্ষেপ ছিল শান্ত কিন্তু অস্বচ্ছ কৌশলের নিদর্শন:

# প্যাংগং হ্রদের আশপাশে সেনা চ্যালেঞ্জ ও টহল জোরদার।
# রেল ও রাস্তা নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়া, যার মাধ্যমে সীমান্তে দ্রুত প্রতিক্রিয়া সক্ষমতা গড়ে তোলা।

এই পদক্ষেপ ভারতকে বাধ্য করে তার প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা দ্বিমুখী করতে- পশ্চিমে পাকিস্তান, উত্তরে চীন। এর ফলে ভারতের কৌশলগত মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়।

অর্থনৈতিক কৌশল: বিনিয়োগ ও বাজার পুনর্গঠন

যুদ্ধকালীন সময়ে বিনিয়োগকারী ও বাজারের আস্থার ঘাটতি দেখা দেয়, বিশেষত ভারত ও পাকিস্তানের বাজারে। চীন এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে:

# পাকিস্তানে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের নতুন ধাপ চালু করে। বিশেষ করে বেলুচিস্তানে বন্দরের সম্প্রসারণ, সেনা ও পণ্য পরিবহণের নতুন রুট উন্নয়ন ইত্যাদি।
# নিজ দেশের অভ্যন্তরে ইউয়ানকে একটি স্থিতিশীল মুদ্রা হিসেবে প্রচার করে, যাতে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক বিনিয়োগ চীনে স্থানান্তরিত হয়।
# দক্ষিণ এশিয়ার অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে নিজেকে **বিকল্প সরবরাহ শৃঙ্খল কেন্দ্র** হিসেবে উপস্থাপন করে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ টানে।

তথ্য ও প্রোপাগান্ডা যুদ্ধ

চীনের আরেকটি শক্তিশালী হাতিয়ার হলো রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া। এই মিডিয়া যুদ্ধকালীন সময়ে এমনভাবে প্রতিবেদন করে, যাতে ভারতকে আক্রমণকারী আর পাকিস্তানকে আত্মরক্ষাকারী হিসেবে তুলে ধরা হয়:

# সিএনজি, গ্লোবাল টাইমস-এর মত রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে ভারতের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক প্রচার চালানো হয়।
# মুসলিম বিশ্বে পাকিস্তানপ্রীতির বার্তা ছড়িয়ে চীন নিজের ভাবমূর্তি রক্ষা করে- বিশেষ করে উইঘুর মুসলিম প্রশ্নে সমালোচনা থেকে মনোযোগ সরাতে।

আঞ্চলিক রাজনীতিতে চীনের দখলদারি শক্তিশালীকরণ

চীন বুঝে গেছে যে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে দখল নেওয়া মানেই ভারতকে কৌশলগতভাবে কোণঠাসা করা। পাকিস্তানের দুর্বল মুহূর্তে পাশে দাঁড়িয়ে চীন ভবিষ্যতের জন্য এমন একটি মঞ্চ তৈরি করছে, যেখানে:

# ভারতকে দুই ফ্রন্টে (চীন ও পাকিস্তান) চাপে রাখা যাবে।
# দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলো (নেপাল, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ) চীনের কূটনৈতিক বলয়ে প্রবেশ করতে আগ্রহী হবে।

চীন ইতিমধ্যেই এই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ করে রেখেছে, যা এখন আরও সহজে বিস্তৃত করা সম্ভব হবে।

চীনের কৌশল- নিজে না লড়ে অন্যের যুদ্ধে জয়ী হওয়া

চীন যুদ্ধ চায় না, কিন্তু অন্যের যুদ্ধকে নিজের কৌশলগত সুবিধার রূপ দিতে চায়। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ২০২৫ হলো তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যেখানে অন্য দুটি দেশ প্রাণ, সম্পদ ও কূটনৈতিক শক্তি ক্ষয় করেছে, সেখানে চীন ছায়ার নিচে দাঁড়িয়ে কেবল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কৌশলগতভাবে লাভবান হয়েছে।

এটি প্রমাণ করে, আধুনিক ভূ-রাজনীতিতে সবচেয়ে বুদ্ধিমান শক্তিগুলো যুদ্ধের মাঠে নয়, বরং ছায়ায় দাঁড়িয়ে, সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে নিজেদের খেলাটি খেলে যায়।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!