বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৫, ০২:২২ এএম

‘বোর্ড পরীক্ষার খাতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হোক’

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৫, ০২:২২ এএম

‘বোর্ড পরীক্ষার খাতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হোক’

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সবচেয়ে আলোচিত ও উদ্বেগজনক ইস্যু হয়ে উঠেছে বোর্ড পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন নিয়ে গাফিলতি ও অব্যবস্থাপনা। এতে  করে সারা দেশের অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও সচেতন নাগরিক সমাজ চরম হতাশ ও ক্ষুব্ধ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তথ্য অনুযায়ী, টিকটকার বা অদক্ষ কিছু অশিক্ষিত ব্যক্তি এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র দেখছেন- যারা এই দায়িত্ব পালনের ন্যূনতম যোগ্যতাও রাখেন না। এই ঘটনা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার নৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্বলতাকে আবারও নগ্ন করে সামনে এনেছে।

একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে তার শিক্ষার্থীদের ওপর, আর শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গঠনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ন্যায়সঙ্গত ও নির্ভরযোগ্য মূল্যায়ন পদ্ধতি। যখন বোর্ড পরীক্ষার মতো জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার খাতা দায়িত্বহীনভাবে মূল্যায়িত হয়, তখন সেটি কেবল একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নয়, বরং সমগ্র জাতির ভবিষ্যৎকেও বিপন্ন করে তোলে।

প্রশ্ন জাগে, যাদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই, যারা শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও বানিয়ে জনপ্রিয় হয়েছেন, তাদের কীভাবে এমন একটি গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়? এই ঘটনা শুধুই একটি বিচ্ছিন্ন ব্যর্থতা নয়, বরং তা শিক্ষা প্রশাসনের গভীর দুর্বলতা ও অব্যবস্থাপনারই প্রতিফলন। যদি শিক্ষকদের মধ্য থেকে নয়, বাইরের অদক্ষদের দিয়ে খাতা দেখা হয়, তাহলে সেই পরীক্ষার বিশ্বাসযোগ্যতা কোথায় থাকে?

শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীদের মনোবল ও আত্মবিশ্বাসের ওপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। একজন পরিশ্রমী ও মেধাবী শিক্ষার্থী যদি ন্যায্য মূল্যায়ন না পায়, তবে সে হতাশ হয়ে পড়ে, ভবিষ্যতের জন্য তার প্রস্তুতি নষ্ট হয়। অন্যদিকে, অযোগ্য কেউ ভুল মূল্যায়নের মাধ্যমে ভালো ফল পেলে পুরো ব্যবস্থায় বৈষম্য তৈরি হয়, যা সামাজিক ও মানসিক ভারসাম্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

এই দুর্নীতির মূল উৎস কোথায়? বোর্ড কর্মকর্তারা কীভাবে এই কাজটি না জেনে থাকতে পারেন? নাকি তাদের নীরব সম্মতি রয়েছে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর এখনো মেলেনি। কিন্তু জাতি জবাব চায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ড কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া।

ডিজিটাল বাংলাদেশ, স্মার্ট নাগরিক তৈরির স্বপ্ন, সবই ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি ভিত্তিটা হয় দুর্বল ও দুর্নীতিগ্রস্ত। তাই বোর্ড পরীক্ষার মতো জাতীয় পরীক্ষাগুলোর প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা উচিত।

সমাধানের পথে এগোতে হলে, প্রথমেই প্রয়োজন পরীক্ষকের বাছাই পদ্ধতি কঠোর করা। কেবল অভিজ্ঞ, প্রশিক্ষিত ও স্বীকৃত শিক্ষকদের মাধ্যমেই উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, খাতা মূল্যায়নের সময় বোর্ডের পর্যবেক্ষণ ও মনিটরিং ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে স্ক্যানিং, বারকোডিং ও সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিরাপদ পরিবেশে মূল্যায়ন নিশ্চিত করা যেতে পারে।

এই ঘটনায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এক করুণ বার্তা পৌঁছেছে। যেখানে কঠোর পরিশ্রমের চেয়ে ‘কোনোভাবে পাস’ করাই যেন নিয়তি। যদি তারা দেখে যে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া বিশ্বাসযোগ্য নয়, তাহলে তারা পড়াশোনার প্রতি উৎসাহ হারাবে। সমাজে মেধার অপমান হলে দেশ কখনো অগ্রসর হতে পারে না।

সবশেষে বলব, আমরা যদি শিক্ষাকে পণ্য না ভেবে, সেটিকে মূল্যবোধ, জ্ঞান ও ভবিষ্যতের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করি, তবে এমন গাফিলতি আর হবে না। শিক্ষা ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এখনই সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!