বিদায় নিচ্ছে বর্ষাকাল। এই সময়ে হুটহাট
বৃষ্টির চাদরে ঢাকা পরে পথ, ঘাট, শহর, গ্রাম। কখনো বা আবহাওয়া থাকে অতিরিক্ত গরম। এমন দিনে মুখরোচক খাবারের প্রতি
মন আনচান করে। তবে এই বিরূপ আবহাওয়াতে সুস্থ থাকতে খাবার খেতে হবে বুঝেশুনে। এ সময়ে পানিবাহিত ও ছোঁয়াচে রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। যে কারণে মসলাদার খাবারের পরিবর্তে আরামদায়ক
খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এখন কোন ধরনের খাবার খাদ্য তালিকায় রাখবেন; জেনে নিন এই লেখায়।
যেসব খাওয়া উচিত
ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও আঁশ সমৃদ্ধ খাবার দৈনিক খাদ্য তালিকায় রাখার পরামর্শ দেন ‘ইন্দ্রপ্রাষ্ঠা অ্যাপোলো হসপিটালয়ের এই পুষ্টি পরামর্শক।
এ ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া যায়- ভাত, ডাল, চাপাতি বা সবজি। আর সব খাবার হতে হবে টাটকা। খেতে হবে রান্না করার প্রথম ঘণ্টার মধ্যেই।
সবজি : সম্পূর্ণ সবজি খাওয়ার মাধ্যমে আঁশ গ্রহণ নিশ্চিত করা যায়। যেমন- লাউ, গাজর, পটোল, মটর ইত্যাদি।
এ ছাড়া শসা, টমেটো, মটর, ঢেঁরস ইত্যাদি খাওয়ার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায়।
সুপ : এই মৌসুমে মুরগি, সবজি ও ডালের সুপ খাওয়া উপকারী। এতে হজম যেমন সহজে হয় তেমনি শরীরে তরলের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
এ ছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতেও ভূমিকা রাখে এসব সুপ।
মসলা চা : আদা, তুলসি ও পুদিনা পাতা দিয়ে তৈরি চা শরীর গরম ও আর্দ্র রাখে। তা ছাড়া এসবে থাকা ঔষধি গুণ সাধারণ রোগ দূরে রাখতে সাহায্য করে।
ফল : মৌসুমি ফলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন দেহ সুস্থ পারে। তবে খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো মতো ধুয়ে নিতে হবে। আর আগে কেটে রাখা ফল খাওয়া যাবে না। টাটকা কাটা অবস্থায় খেতে হবে।
ডালিম সাধারণ ঠান্ডাকাশি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। এই ফলে থাকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী উপাদান রক্তচাপ সমন্বয় করে। এ ছাড়াও রয়েছে ভিটামিন, লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম, আঁশ ও ক্যালসিয়াম।
কুল বা বরই ফল ডায়রিয়া হলে খাওয়া উপকারী।
মধুর সঙ্গে কিশমিশ ও খেজুর খেলে পাওয়া যাবে শক্তি। আর শুকনা ফল পেট ভরা রাখবে অনেকক্ষণ।
প্রোটিন : সুস্থ দেহ ও শক্তি বজায় রাখতে পর্যাপ্ত প্রোটিন জরুরি। ডাল, দুধ, ভালোমতো রান্না করা ডিম থেকে মিলবে এই পুষ্টি উপাদান।
মসলা : হলুদ, দারুচিনি, এলাচ ও কালো গোলমরিচে রয়েছে প্রদাহ এবং ব্যাক্টেরিয়া রোধী উপাদান। এগুলো রোগ থেকে দূর রাখতে সাহায্য করে।
প্রোবায়োটিস : দই ও মাখন তোলা দুধ বা ঘোল পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। ফলে পেট খারাপ হওয়ার ঝুঁকি কমে।
রেসিপি:
গুঁড়া চিংড়ি ভর্তা
উপকরণ
- েেছাট চিংড়ি- ২৫০ গ্রাম
- েেপঁয়াজের কলি- ১/২ কাপ
- েেপঁয়াজ কুঁচি- ১ টেবিল চামচ
- রেসুন ৪ কোঁয়া
- শেুকনো মরিচ- ৩টি
- ধেনিয়া পাতা কুঁচি- ৩ চামচ
- সেরিষার তেল- ২ চামচ
- িেজরা গুঁড়া- ১/২ চা চামচ
- লেবণ- পরিমাণমতো
প্রস্তুত প্রণালি:
প্রথমে চিংড়ি মাছ বেছে ভালো করে ধুয়ে নিন। খোসাসহ রাখতে পারেন। এরপর চিংড়িগুলো সরিষার তেলে মচমচে করে ভেজে তুলে রাখতে হবে। এই তেলেই ভর্তা হবে যাতে চিংড়ির সুঘ্রাণ থাকবে। কড়াইয়ে অবশিষ্ট সর্ষের তেলে পেঁয়াজের কলি, শুকনো মরিচ, থেঁত করে রাখা রসুন কোঁয়া ও পেঁয়াজ কুঁচি ভালোভাবে ভেজে নিন। অনেকে ভর্তায় কাঁচামরিচের ফ্লেবার পছন্দ করেন, তারা শুকনো মরিচের বদলে কাঁচামরিচ দিতে পারেন। এবার টেলে রাখা জিরে গুঁড়াসহ ভেজে রাখা বাকি উপকরণগুলো মিশিয়ে গ্রাইন্ডারে পেস্ট বানিয়ে নিন। খুব বেশি মিহি না হলেও হবে। চাইলে শিল নোড়া বা পাটায় বেঁটে নিতে পারেন। ঝটপট তৈরি হয়ে গেল মজাদার চিংড়ি ভর্তা। পরিবেশনের আগে বাটা চিংড়িকে ধনিয়া পাতা আর চিংড়ি ভাজার সরিষা তেল দিয়ে মাখিয়ে হাতের সাহায্যে গোল গোল করে সাজিয়ে নিন। গরম গরম ভাতের সঙ্গে দারুণ জমে যাবে এই ভর্তাটি।
চিংড়ির মালাইকারি
উপকরণ:
বড় গলদা চিংড়ি একটি, পেঁয়াজ বাটা আধাকাপ, মরিচগুঁড়া পরিমাণমতো, আদাবাটা দুই চা চামচ, নারিকেলের দুধ এক কাপ, লবণ স্বাদমতো, পানি পরিমাণমতো।
প্রস্তুত প্রণালি:
প্রথমে গলদা চিংড়ি ধুয়ে পরিষ্কার করে রাখুন। তারপর চিংড়ির শিরদাড়ার শিরা বের করে নিন। পেঁয়াজ বেটে আলাদা করে রাখুন। একটা পাত্রে তেল গরম করে চিংড়িগুলো ভেজে সরিয়ে রাখুন। এবার ওই তেলে চিনি দিন এবং গলে না যাওয়া পর্যন্ত নাড়তে থাকুন। এরপর মরিচগুঁড়া পানিতে গুলে পাত্রে ঢেলে দিন। এর সঙ্গে পেঁয়াজ বাটা দিয়ে দিন এবং লাল না হওয়া পর্যন্ত ভাজতে থাকুন। আদা বাটা দিয়ে মিনিট খানেক ভাজুন। এরপর নারিকেলের দুধ, পানি দিয়ে ফোটান। এবার ভাজা চিংড়ি দিয়ে দিন এবং সঙ্গে দিন সামান্য লবণ। ১৪-১৬ মিনিট ঢাকনা দিয়ে রেখে নামিয়ে ফেলুন। এবার সালাদ দিয়ে গরম গরমে পরিবেশন করুন।
চিংড়ি ভুনা
উপকরণ
বড় সাইজের চিংড়ি মাছ (১ কেজি)। পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ। আদা বাটা ২ টেবিল চামচ। রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ। জিরা বাটা ১ চা চামচ। বাদাম বাটা ১ টেবিল চামচ। কাঁচামরিচ ৮/১০টি। হলুদগুঁড়া ১ চা চামচ। মরিচগুঁড়া ১ চা চামচ। লবণ স্বাদ অনুযায়ী। তেল পরিমাণমতো।
প্রস্তুত প্রণালি:
প্রথমে চিংড়ি মাছের খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে। কিন্তু লেজ থাকবে। খোসা ছাড়ানোর পর ছুরি দিয়ে মাছের অংশ থেকে কালো ময়লা রগ ছাড়িয়ে নিতে হবে। এরপর মাছ পানিতে ধুয়ে, পানি ছাড়িয়ে লবণ দিয়ে গরম তেলে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। পরে অন্য পাত্রে তেল গরম করে পেঁয়াজ ভেজে বাদামি রং করে তার মধ্যে সব মসলা দিয়ে কারি গ্রেভি তৈরি করতে হবে। যখন মসলার কাঁচা গন্ধ চলে যাবে তখন কাঁচা মরিচ দুই ফালা করে তার মধ্যে দিতে হবে। তার ওপর মাছ ঢেলে দিয়ে অল্প আঁচে কিছুক্ষণ রান্না করতে হবে। মাছ দিয়ে বেশিক্ষণ রান্না করলে শক্ত হয়ে যাবে। তাই অল্প আঁচে রান্না করতে হবে। রান্না শেষ হলে টেবিলে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
প্রন গার্লিক ফ্রাইড রাইস
উপকরণ
২৫০ গ্রাম সুগন্ধী পোলাও এর চাল, ১৫০ গ্রাম মাঝারি ছোট চিংড়ি, ২ চামচ সয়াসস, ২ চামচ রসুন মিহি কুচি, ২ চামচ বাটার, ২ চামচ সয়াবিন তেল, ৩/৪টা ফালি কাঁচামরিচ, ৩ চামচ ধনিয়া পাতা কুচি
স্বাদমতো লবণ, ১টা গাজর গ্রেড করে নেওয়া, ১ চামচ গোলমরিচ গুঁড়া, ১টা ডিম, পরিমাণমতো পানি।
প্রস্তুত প্রণালি
প্রথমে পোলাও এর চাল ধুয়ে একটি হাঁড়িতে সামান্য সয়াবিন তেল ও লবণ দিয়ে পানি ফুটিয়ে ৯০ ভাগ পোলাও সিদ্ধ করে নিব এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ছড়িয়ে পানি শুকিয়ে নিব। একটি হাঁড়িতে বাটার ও সয়াবিন তেল মিশিয়ে তাতে রসুন কুচি ব্রাউন করে ভেজে নিব। এবারে এতে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নেওয়া চিংড়ি মাছগুলো দিয়ে দেব এবং ভালো করে নেড়ে নিব এবং গাজর কুচি, কাঁচামরিচ ফালি, স্বাদমতো লবণ দিয়ে নেড়েচেড়ে পোলাওয়ের রান্না করা ভাতটা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিব। সয়াসস, গোলমরিচ গুঁড়া ও ধনিয়া পাতা কুচি ছড়িয়ে ৪/৫ মিনিট নেড়ে চেড়ে নিব। ১টা ডিম সামান্য লবণ দিয়ে ফেটিয়ে একটু ভেজে স্ত্রাম্বল করে রাইসের সঙ্গে মিশিয়ে নিব। সবশেষে গরম গরম পরিবেশন করবো দারুণ স্বাদের প্রন গার্লিক ফ্রাইড রাইস।
যেসব খাবার এড়ানো উচিত
রাস্তার খাবার :
বিশেষ করে পানি পুরি, চটপটি, ভেল পুরি এ রকম খাবার এড়াতে হবে। কারণ রাস্তায় থাকা এসব খাবারে টক তৈরি করতে পানি ব্যবহার করা হয়, যে কারণে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ে। তা ছাড়া এসব খোলা খাবারে ময়লা পড়ার সম্ভাবনাও বাড়ে।
অল্প রান্না করা মাংস, মাছ ও ডিম: অনেকেই সিদ্ধ মাছ মাংস বেছে নেন। তবে অল্প রান্না করা মাংস, ডিম ও সামুদ্রিক খাবারে থাকতে পারে ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া।
সালাদ : ভালো মতো সিদ্ধ করা না থাকলে সালাদও এড়াতে হবে।
সব কিছুর ওপর জরুরি আর্দ্র থাকা। পানি কম পান করলে হবে না। পানির বোতল সঙ্গে রাখতে পারলে সব থেকে ভালো হয়।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন