বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মো. শামীম মিয়া

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৫, ০২:২৫ এএম

ব্রেস্ট ক্যানসার : দরিদ্র নারীদের জন্য বিনা মূল্যে চিকিৎসা জরুরি

মো. শামীম মিয়া

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৫, ০২:২৫ এএম

ব্রেস্ট ক্যানসার : দরিদ্র নারীদের জন্য বিনা মূল্যে চিকিৎসা জরুরি

বাংলাদেশে ব্রেস্ট ক্যানসারের প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতি বছর হাজার হাজার নারী আক্রান্ত হচ্ছেন, কিন্তু চিকিৎসার ব্যয়বহুলতার কারণে অনেকেই চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকারের উচিত দরিদ্র নারীদের জন্য বিনা মূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করা।

দেশে নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির কারণ হিসেবে ব্রেস্ট ক্যানসার বা স্তন ক্যানসার একটি জ্বলন্ত সমস্যা হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১৩ হাজার নারী নতুন করে ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউটের তথ্যও এ আশঙ্কাকে আরও প্রকট করছে। কিন্তু সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পাওয়া ও চিকিৎসার উচ্চ ব্যয়ের কারণে এই রোগে মৃত্যুর হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতায়, বিশেষ করে দরিদ্র ও নি¤œ আয়ের নারীরা চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। স্তন ক্যানসার শুধু স্বাস্থ্য সমস্যা নয়, এটি সমাজের আর্থ-সামাজিক বৈষম্যেরও এক দুর্বিষহ চিত্র। এই সংকট মোকাবিলায় সরকারের কাছে সময় এসেছে আর কোনো দেরি না করে বিনা মূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করার। 

ব্রেস্ট ক্যানসারের প্রকোপ ও বৃদ্ধিকারণ :

ব্রেস্ট ক্যানসারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২৪ সালের প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বব্যাপী নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ব্রেস্ট ক্যানসারের। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে এর প্রকোপ দ্রুত বাড়ছে। বিভিন্ন কারণের সমন্বয়ে এটি ঘটছে। নগরায়ণ, আধুনিক জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ ও বংশগত ঝুঁকি বাড়িয়েছে। নারীদের মধ্যে কম শারীরিক পরিশ্রম, জন্মের সংখ্যা কম হওয়া, হরমোনাল ওষুধের ব্যাপক ব্যবহারও যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশে অধিকাংশ রোগীর বয়স ধীরে ধীরে কমছে। অনেক ক্ষেত্রেই ৩০-৩৫ বছর বয়সি নারী ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন, যা সমাজের জন্য আরও বিপজ্জনক। 

রোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার চ্যালেঞ্জ :

ব্রেস্ট ক্যানসার নিরাময়যোগ্য রোগ, যদি সময়মতো শনাক্ত ও চিকিৎসা শুরু হয়। তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে ৭০-৯০ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে অধিকাংশ রোগী দেরিতে হাসপাতালে আসে। এটির বড় কারণ হলো, সচেতনতার অভাব ও সামাজিক লজ্জা। অনেক নারী স্তনের ছোট ছোট ফোলাভাব, গিঁট বা ব্যথাকে উপেক্ষা করেন। পরিবার ও সমাজের ভীতি তাদের চিকিৎসা নিতে বাধা দেয়। ফলে রোগ দীর্ঘদিন অজানা থেকে উন্নত পর্যায়ে চলে যায়। চিকিৎসার ব্যয় বাংলাদেশে খুবই বেশি। পুরো চিকিৎসার খরচ কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত যায়। দরিদ্র ও নি¤œআয়ের পরিবারের পক্ষে এ ব্যয় বহন করা অসম্ভব। সরকারি হাসপাতালে সুযোগ থাকলেও সেখানে যন্ত্রপাতি, চিকিৎসক ও ওষুধের অভাব রয়েছে। দীর্ঘ অপেক্ষার সময় রোগীর জীবন আরও বিপন্ন হয়। 

সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব :

ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত নারীরা শুধু নিজেই নয়, তাদের পরিবার ও সমাজেও প্রভাব ফেলে। অনেক নারী পরিবারে প্রধান অর্থ উপার্জনকারী। তাদের অসুস্থতা পরিবারকে আর্থিক সংকটে ফেলে দেয়। শিশু ও বৃদ্ধ সদস্যদের খাওয়া-দাওয়া, শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যাহত হয়। 

সরকারের দায়িত্ব ও করণীয় :  

সরকারকে অবিলম্বে দরিদ্র ও অসহায় নারীদের জন্য ব্রেস্ট ক্যানসারের চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য ‘জাতীয় ক্যানসার তহবিল’ গঠন করতে হবে, যাতে কর ও দাতা সংস্থার অর্থ জমা রাখা হয়। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ক্যানসার চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করে রোগীদের ঢাকায় আসার ঝামেলা কমাতে হবে। উন্নত প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ বাড়িয়ে গ্রামীণ এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে। সরকার ও বেসরকারি অংশীদারিত্বে মোবাইল স্ক্রিনিং ইউনিট চালু করে সুলভে স্ক্রিনিং নিশ্চিত করতে হবে। 

সামাজিক মনোভাব ও সচেতনতা পরিবর্তন :

ধর্মীয় নেতা, শিক্ষক, গণমাধ্যম, জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ব্রেস্ট ক্যানসারের কুসংস্কার দূর করতে হবে। রোগীদের চিকিৎসা নিতে লজ্জা না পেতে শেখাতে হবে। সামাজিক বন্ধন ও পরিবারের সমর্থন বাড়াতে হবে। ব্রেস্ট ক্যানসার আর কোনো দিন প্রহসন হতে পারে না। দেশের নারীদের জীবন বাঁচাতে বিনা মূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা এখন সময়ের জরুরি দাবি। রোগ শনাক্তকরণ, চিকিৎসা ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি সুস্থ ও সমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত করতে পারি আমরা। দরিদ্র নারীদের জীবন বাঁচানো মানে দেশের ভবিষ্যৎ বাঁচানো। তাই এখনই সময়, দেশের সর্বত্র বিনা মূল্যে ব্রেস্ট ক্যানসার চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়ার। 

লেখক : পরিচিতি
মো. শামীম মিয়া, 
শিক্ষার্থী, ফুলছড়ি সরকারি কলেজ, জুমারবাড়ী,সাঘাটা গাইবান্ধা

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!