রবিবার, ২৯ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মাইনুল হক ভূঁঁইয়া

প্রকাশিত: জুন ২৯, ২০২৫, ০৪:১৮ এএম

রাজউকের সার্ভার হ্যাকে জড়িতরা এখনো অধরা

মাইনুল হক ভূঁঁইয়া

প্রকাশিত: জুন ২৯, ২০২৫, ০৪:১৮ এএম

ছবি - রূপালী বাংলাদেশ

ছবি - রূপালী বাংলাদেশ

দ্বিতীয়বারের মতো রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সার্ভার হ্যাকের ঘটনা ঘটেছে। হ্যাক হওয়া সার্ভারে গুরুত্বপূর্ণ ডেটাবেস, মানচিত্র, স্থাপত্য নকশা এবং স্পর্শকাতর সরকারি ভবনের নকশা রয়েছে। এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও নথিপত্রসহ হ্যাকারদের হাতে চলে যাওয়া নিয়ে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে সামনে চলে এসেছে নানা প্রশ্ন। সংস্থার ইলেকট্রনিক কনস্ট্রাকশন পারমিটিং সিস্টেম (ইসিপিএস) সার্ভারটি গত ১৯ মে হ্যাক হয়। ইতোপূর্বে আরও একবার এটি হ্যাক হয়। তখন দৃষ্টান্ত স্থাপনের মতো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এবারো আশপাশের কিছু চুনোপুঁটি গ্রেপ্তারের মতো দায়সারা গোছের পদক্ষেপ নিয়েই সংস্থাটি দায়িত্ব শেষ করতে চাইছে। রাষ্ট্রীয় জনগুরুত্বসম্পন্ন এই সংস্থার সার্ভার ঘন ঘন অনায়াসেই হ্যাক হওয়ার বিষয়টি নগর উন্নয়ন ও নিরাপত্ত বিশ্লেষকদের রীতিমতো ভাবনায় ফেলে দিয়েছে। 


গত ১৯ মে রাজউকের সার্ভার হ্যাক করে অনুপ্রবেশকারীরা মাত্র ১৭ মিনিটের মাথায় একটি বহুতল ভবনের নকশা অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি আরও তিনটি নকশা অনুমোদনের চেষ্টা চালায়। পরে বিষয়টি নজরে এলে সার্ভারটি বন্ধ করে দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তদন্তে নামে রাজউক। তদন্তে থলের বিড়াল বেরিয়ে এলেও তারা কেবল থলেটি কুড়ানোর চেষ্টা করেÑ বিড়ালরা রয়ে যায় ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। হ্যাকারদের পাস করা নকশায় স্বাক্ষর পাওয়া গেলেও রাবেয়া বারী নামের এক প্রকৌশলীকে শুধু জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়। আড়াল করা হয় নেপথ্য নায়কদের। সাইবার বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নেপথ্যে থেকে রাবেয়া বারীদের যারা পাসওয়ার্ড সরবরাহসহ নানা কৌশলে সহায়তা দিয়েছে- তাদের খোঁজও করছে না রাজউক। 


রূপালী বাংলাদেশের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পুরো প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় নিয়ে এসে একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত স্থাপনের মাধ্যমে রাজউক আপাতদৃষ্টিতে বাহবা কুড়ানোতে সমর্থ হলেও এর পুরো সিস্টেমে ছিল অযত্ন, অবহেলা এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতার সুস্পষ্ট ছাপ। পরপর দুইবার সার্ভার হ্যাকের ঘটনা প্রমাণ করে এ ধরনের স্পর্শকাতর কাজের পেছনে যথাযথ নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে যত্নবান ছিল না সংস্থাটি।  
কয়েকজন নগর পরিবেশবিদ মনে করেন, এ ধরনের ঘটনা ই-গভর্ন্যান্সের জন্য মারাত্মক হুমকি এবং ভবিষ্যতের জন্যও ক্ষতিকারক। 


সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সার্ভার হ্যাক করে একটি ভবনের অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার ঘটনা শুধু একটি ভয়াবহ অপতৎপরতাই নয়, এতে করে রাজউক সার্ভারের সামগ্রিক নিরাপত্তা দুর্বলতার দিক সামনে চলে এসেছে। অন্তত একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে, যেকোনো দুর্বৃত্তের জন্য নগরের জোনিং, ভবনের নকশা, রাস্তাঘাট পরিকল্পনাÑ এমনকি নিরাপত্তাবেষ্টিত এলাকার নিরাপত্তা চৌর্যবৃত্তি রীতিমতো সহজসাধ্য।


খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ভবন অনুমোদনের পাশাপাশি হ্যাক হওয়া পোর্টালে রয়েছে ডেটাবেস, মানচিত্র, স্থাপত্য নকশা এবং স্পর্শকাতর সরকারি ভবনের নকশাও। হ্যাকাররা যে ভবনটির অনুমোদন করিয়ে নিয়েছিল, সেটি ছিল জলাভূমি ও ভবনের উচ্চতা নিষেধাজ্ঞার আওতায়। এ কারণে অনুমোদনটি শুধু যে বেআইনিই ছিল তা নয়, এটি ছিল রাজউকের জন্য বড় চ্যালেঞ্জিং। 


ভয়াবহ এই ঘটনায় উত্তরা পূর্ব থানায় গত ৬ জুন সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫ অনুযায়ী দায়ের করা এক মামলায় এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে তিনজন। তারা  হলেনÑ মতিঝিল ‘নীলাভ নকশাঘর’ এর মালিক মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং তার সহযোগী সজীব ও শিমুল।  তারা মামলার ২১, ২২ ও ২৪ নম্বর অভিযুক্ত। কিন্তু রাজউকের দেওয়া তথ্যমতে, মতিঝিলের ‘নীল নকশা’ নামের কম্পিউটার দোকানের মালিক ও কর্মচারী এনামুল, স্বপন এবং অন্য কর্মচারীদের নাম প্রকাশ করা হলেও তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি নাÑ তা জানানো হয়নি। তবে উত্তরা-পূর্ব থানার ওসি গোলাম মোস্তফাও রূপালী বাংলাদেশের কাছে তিনজন ছাড়া আর কারো গ্রেপ্তারের কথা জানাতে পারেননি। তবে আগাম জামিন নিতে গিয়ে আরও একজন শ্যেন অ্যারেস্ট হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।


এদিকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইসি) সভাপতি ড. আদিল মোহাম্মদ খান হ্যাকের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এ ঘটনা নিঃসন্দেহে রাজউকের দায়িত্বহীনতার পরিচায়ক। এ ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সার্ভার হ্যাক হওয়াটা কিছুতেই সহজভাবে মেনে নেওয়া যায় না। সেই সঙ্গে তিনি সার্ভার ব্যবস্থাপনায় যারা সংশ্লিষ্ট, তদন্তপূর্বক তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তার অভিমত, নিরাপদ করতে না পারলে রাজউকের উচিত এ ধরনের সার্ভার বন্ধ করে দেওয়া। 


এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রশাসনিক কি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে জানান, হ্যাকের ঘটনায় রাজউক প্রশাসনের কেউ জড়িত কি না, তা নিরুপণের জন্য ইতোমধ্যে ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তদন্তের কাজ প্রায় এগিয়ে নিয়ে এসেছে। চূড়ান্ত পর্যায়ে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কঠোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। 


বর্তমানে রাজউকের সার্ভারটি পুরোপুরি বন্ধ থাকায় সেবামূলক কাজকর্মে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। ভবন নির্মাণ অনুমোদন থেকে শুরু করে কোনো সেবাই পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি কোনো জোন থেকেই কোনোরকমের তথ্য মিলছে না। এ অবস্থা রাজউকের মতো সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তির জন্য নিঃসন্দেহে ক্ষতিকারক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!