ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুরুতর আহত হয়ে রাজধানীর আগারগাঁও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১৬৭ জনের বেশির ভাগেরই মাথার খুলি ছিল না। গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ দেওয়া জবানবন্দিতে এ তথ্য জানিয়েছেন হাসপাতালটির সহযোগী অধ্যাপক মো. মাহফুজুর রহমান।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ আহতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লোকেরা আমাদের হাসপাতালে আসেন। ওই সময় নতুন গুলিবিদ্ধদের ভর্তি না করতে ডিবি চাপ দেয়। এ সময় তিনি জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নির্বিচারে গুলি ও হত্যার নির্দেশদাতা স্বৈরশাসক খুনি শেখ হাসিনাসহ চারজনের ফাঁসি চেয়েছেন ডা. মাহফুজুর রহমান। ফাঁসি চাওয়া অন্যরা হলেনÑ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত।
গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় ১৩তম সাক্ষী হিসেবে এই জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। এই মামলার অপর দুই আসামি হলেনÑ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। সাবেক আইজিপি মামুন ইতিমধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেছেন। পাশাপাশি তিনি এ মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী হিসেবে পরিচিত) হয়েছেন।
গতকাল ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে চিকিৎসক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ৫৭৫ জন গুলি ও পিলেটবিদ্ধ রোগীকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে অনেককেই হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজনীয়তা থাকলেও সিট সংকুলান না হওয়ায় এবং গুরুতর আহত রোগীর চাপ বেশি থাকায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। গুরুতর আহত ১৬৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের বেশির ভাগেরই মাথার খুলি ছিল না। তাদের মধ্যে চারজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। ২৯ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সাতজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে পাঠানো হয়।’
গণঅভ্যুত্থানে আহতদের প্রায় ৩৩টি অস্ত্রোপচার নিজে করেছেন জানিয়ে জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ‘অনেকগুলো বুলেট ও পিলেট আহত আন্দোলনকারীদের শরীর থেকে বের করেছি। অনেকগুলো গুলি ও পিলেট রোগীরা চেয়ে নিয়ে যায়। তদন্তকারী কর্মকর্তা জব্দ তালিকামূলে দুটি পিলেট এবং একটি বড় বুলেট ও আরও একটি গোলাকার বুলেট জব্দ করেছে।’
জবানবন্দিতে ডাক্তার মাহফুজুর রহমান জানান, গত বছরের ১৯ জুলাই যখন রোগীর সংখ্যা বাড়ছিল, তখন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) লোকেরা এসে নতুন গুলিবিদ্ধ ছাত্রদের ভর্তি না করার জন্য তাকে চাপ দেন। তিনি বলেন, ‘(ডিবি) বলে, আপনি অতি উৎসাহী হবেন না, আপনি বিপদে পড়বেন। তারা আরও বলে, যাদের ভর্তি করেছেন, তাদের রিলিজ করবেন নাÑ এ বিষয়ে ওপরের নির্দেশ আছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তখন আমরা কৌশলে ভর্তি রেজিস্ট্রারে রোগীদের জখমের ধরন পরিবর্তন করে গুলিবিদ্ধের স্থলে রোড অ্যাক্সিডেন্ট বা অন্যান্য কারণ লিপিবদ্ধ করে ভর্তি করি।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন