শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


এহসানুল ইসলাম চৌধুরী শামীম

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫, ১২:৫১ এএম

সমুদ্রসৈকতের শহর ‘কর্নওয়াল’

এহসানুল ইসলাম চৌধুরী শামীম

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫, ১২:৫১ এএম

সমুদ্রসৈকতের শহর ‘কর্নওয়াল’

গ্রীষ্ম মানেই সমুদ্র বিলাস। সামারে উইকেন্ড কিংবা হলিডে ছাড়াও সপ্তাহ দুয়েক ছুটি নিয়ে সবাই বেরিয়ে পড়েন সমুদ্র অবগাহনে। ইংল্যান্ড গোটা দেশটাই একটা আইল্যান্ড। তাই সমুদ্র দেখার জন্য জায়গার অভাব নেই এখানে। মোটরওয়েতে তখন সাঁই সাঁই করে গাড়ির পর গাড়ি ছুটতে দেখা যায়। বেশিরভাগ গাড়িগুলোতেই লাগানো থাকে ট্রেইলার। ট্রেইলার বা গাড়ির ছাদ ঠাসা থাকে সার্ফিং আর ক্যাম্পিংয়ের সরঞ্জামাদি দিয়ে। আর গাড়ির মিউজিক প্লেয়ারে হাই ভলিউমে চলতে থাকে গান। ব্রিটিশ মোটরওয়ের এই উৎসবমুখর পরিবেশ দেখার মতো একটা ব্যাপার বটে!

সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় ঘুরতে যাওয়া ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার। আমরা এই সামার হলিডেতে ওয়েলস এর রাজধানী ভেলপাস  যাওয়ার জন্য মোটামুটি রেডি তখন হঠাৎ করেই যুক্তরাজ্যের আবদুল হান্নান ভাই বললেন, ভেলপাস যাওয়া হবে না। তখন আর কি করা। তখন আমার মেয়ে শাজমীন ইসলাম চৌধুরী বললেন আব্বু আমরা ‘কর্নওয়ালেই’ যাই না কেন! ‘কর্নওয়াল’ ঘুরে এলে নাকি ইংল্যান্ডে সমুদ্র দেখার জন্য আর কোথাও যেতে ইচ্ছে করবে না! তখন আমি আর আমার ওয়াইফ সিদ্ধান্ত নিলাম কর্নওয়াল যাবো। তখন আমরা মেয়ে কে বললাম তারাতাড়ি হোটেল বুকিং দাও। কিন্তু একটা একটা করে দেখল। কোনো হোটেল বুকিংয়ের জন্য পাচ্ছে না। অবশেষে আমরা এক দিনের জন্য পেলাম নিউকি তে ট্রেভেল লজ। এরপর আর তিন দিনের জন্য পেলাম নিউকি তে প্রিমিয়ার ইন হোটেল। হোটেল টির পরিবেশসহ সবকিছুই ভালো। হোটেল বুকিংয়ের কাজ শেষ করে আমরা ২৪ আগস্ট ২০২৫ যুক্তরাজ্যের নর্থাম্পটন শহর থেকে আমাদের ইস্ট হান্সবাড়ি থেকে সকাল ১১টায় বেরিয়ে পরলাম কর্নওয়াল যাওয়ার উদ্দেশ্যে। প্রায় ৬ ঘণ্টা ড্রাইভ করে কর্নওয়ালের নিউকিতে গিয়ে পৌঁছিলাম বিকেল ৫টায়। তখন সমস্যা দেখা দিল পার্কিংয়ের।

অনেক কষ্ট করে পেলাম আজদা সুপার মার্কেটে। তা আবার ২ ঘণ্টার প্রে করে আসলাম। পরে ২৪ ঘণ্টার জন্য ১৫ পাউন্ড করে রাখতাম হোটেলের পেছনে। তার পর বিকেল বেলায় ফ্রেস হয়ে ছুটলাম সমুদ্রসৈকত দেখার জন্য। হোটেলের পাশে তরকারন সমুদ্রসৈকত। দেখে খুব ভালো লাগছে। সার্ফিং, ফিশিং, প্যারা সেইলিং-সহ নানা রকম ওয়াটার অ্যাক্টিভিটির জন্য কর্নওয়াল ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে প্রথম সারির পছন্দের জায়গা।

তবে পুরাতত্ত্বের দিক দিয়েও কর্নওয়াল সমৃদ্ধ। প্রচুর ঐতিহাসিক দুর্গ আর প্রাসাদ আছে এখানে। ইংল্যান্ডের এই কাউন্টির একমাত্র শহর ও প্রশাসনিক কেন্দ্র হচ্ছে ট্রুরো। কর্নওয়ালের উত্তর ও পশ্চিম দিকে কেল্টিক সাগর, দক্ষিণে ইংলিশ চ্যানেল আর পূর্ব দিকে টেমার নদী। এখানকার লোকসংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। কর্নিশ জাতির আবাসভূমি এবং প্রাচীন ছয়টি কেল্টিয় দেশের একটি বলে কর্নওয়ালকে গণ্য করা হয়।

ফিস্ট্রাল বিচ :

আসার পর দিন ২৫ আগস্ট ২০২৫ সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা খেয়ে চলে যাই ফিস্ট্রাল বিচ দেখার জন্য। মাত্র ১০ মিনিটের ড্রাইভ করে গিয়ে সেখানে পৌঁছিলাম। কার টিকিট কেটে রাখলাম। আর আমরা নিচের দিকে রওয়ানা দিলাম। ফিস্ট্রাল বিচ খুব সুন্দর লাগছে। দেখে মনে হচ্ছে আমরা বাংলাদেশের কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে আছি। যে বড় বড় ঢেউ।

ফিস্ট্রাল বিচ নিউকেতে অবস্থিত এবং এটি ব্রিটিশ সার্ফিংয়ের আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। এই প্রশস্ত সোনালি বালুকাময় সৈকতটি প্রায় ১ মাইল লম্বা এবং ভাটার সময় ১ মাইল প্রশস্ত হওয়ায় পরিবারের জন্য দুর্দান্ত জায়গা প্রদান করে, তবে সমুদ্রে প্রবেশের সময় দয়া করে সাবধান থাকুন কারণ এখানে তীব্র স্রোত তৈরি হতে পারে এবং ঢেউগুলো সাধারণত এলাকার অন্যান্য সৈকতের তুলনায় বড় হয় কারণ এটি আটলান্টিক ঢেউয়ের সংস্পর্শে বেশি আসে। ফিস্ট্রাল সৈকত টোয়ান হেডল্যান্ড দ্বারা উপেক্ষা করা হয় এবং লিটল ফিস্ট্রালের কাছে উত্তর তীরে আপনি সৈকতকে উপেক্ষা করে একটি হোটেল দেখতে পাবেন, এই হোটেলটি নিউকে এবং ফিস্ট্রালের সমার্থক, যা হেডল্যান্ডের উপরে অবস্থিত সৈকতের বেশিরভাগ পেছনে অবস্থিত। ফিস্ট্রাল একটি খুব পারিবারিক বন্ধুত্বপূর্ণ সৈকত যা বালির টিলা দ্বারা সমর্থিত এবং এর পেছনে নিউকে গল্ফ কোর্স রয়েছে। ফিস্ট্রাল প্রায়শই তিনটি প্রধান অঞ্চলে বিভক্ত, সাউথ ফিস্ট্রাল, নর্থ ফিস্ট্রাল এবং লিটল ফিস্ট্রাল, যা কেবল ভাটার সময়ই দেখা যায়।

যেহেতু এটি কর্নওয়ালের অন্যতম প্রধান সৈকত, তাই এখানে আপনার প্রয়োজনীয় সমস্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, যেমন টয়লেট, আইসক্রিমের দোকান, পোশাকের দোকান, সার্ফ ভাড়া এবং সৈকতের পাশে অবস্থিত রেস্তোরাঁ। গ্রীষ্মকালে ফিস্ট্রালের ওপর দিয়ে সূর্যাস্ত উপভোগ করা এবং সার্ফাররা দিগন্তে ঢেউয়ের আভাস পাওয়া দুর্দান্ত। রাতে নিউকির জামান্স রেস্টুরেন্টে মালিক ইশান ভাই আমাকে বললেন ভাই আজ রাতের খাবার আমাদের রেস্টুরেন্টে খেতে হবে। তার পর হোটেল থেকে ৩ মিনিটে ড্রাইভ করে জামান্স রেস্টুরেন্টে  গেলাম। রাতের মজাদার খাবার খেলাম। পরে রাত ১২টায় হোটেলে চলে আসলাম।

ল্যান্ডস অ্যান্ড :

আমরা হোটেল প্রিমিয়ার ইন থেকে ২৬ আগস্ট ২০২৫ কর্নওয়ালের নিউকি থেকে ১ ঘণ্টা ড্রাইভ করে ল্যান্ডস অ্যান্ড রওনা দিলাম রুদ্রোজ্জ্বল এক সকালে। পৌঁছালাম তখন রোদ ঝলমলে দুপুর। পাহাড়ের ওপর থেকে সমুদ্র দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম! সমুদ্রের এমন রূপ তো আগে দেখিনি! স্বচ্ছ নীল জলরাশি পাহাড়ের গায়ে এসে ধাক্কা দিয়ে চলে যাচ্ছে। আবার কিসের এক মায়ায় ফিরে ফিরে আসছে বারবার। এ যেন অভিমানী যুগলের মধুর খুনশুটি। অনেকখানি ঢালু পথ দিয়ে নেমে সমুদ্রকে যখন খুব কাছে পেলাম তখন আরেকবার বিহ্বল হবার পালা!  সমুদ্রের কাছে অনেকবার গিয়েছি। আর প্রতিবার সমুদ্রকে আবিষ্কার করেছি নতুন রূপে। ল্যান্ডস অ্যান্ড হচ্ছে ইংল্যান্ডের শেষ সিমানা। শেষ পোস্ট অফিস। তখন আমার নিউজ এর নেশায় পড়ে গেলাম। রথও দেখা হবে, কলাও বেচা হবে।

আমি একের পর পর্যটকদের ইন্টারভিউ নিচ্ছি। ল্যান্ডস অ্যান্ড দেখার মতো। কর্নওয়ালের সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্যগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘ল্যান্ডস অ্যান্ড’। এটি ইংল্যান্ডের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের শেষ ভূসীমানা। এখানে এসে ইংল্যান্ড মিলিত হয়েছে আটলান্টিক মহাসাগরের বিস্তৃত জলরাশির সঙ্গে। এখান থেকে দূরের লাইট-হাউজটাকে বড় নিঃসঙ্গ দেখায়। ইংল্যান্ডের পশ্চিমতম বিন্দু হিসেবে, এটি গ্রেট ব্রিটেনজুড়ে  অ্যান্ড-টু-অ্যান্ড হাঁটার জন্য টার্মিনাস হিসেবে কাজ করে। কর্নওয়াল কীভাবে ঋতু থেকে ঋতুতে পরিবর্তিত হয় তা দেখতে পাহাড়ের চূড়ায় হেঁটে যেতে পারেন, অথবা প্রথম এবং শেষ বিন্দু থেকে শুরু হওয়া আটলান্টিক মহাসাগরের হাজার হাজার মাইল পথের কথা ভাবতে পারেন।

ল্যান্ডস অ্যান্ডের সুন্দর দৃশ্য :

বিখ্যাত ল্যান্ডস অ্যান্ড সাইনপোস্টে ছবি না তুলে কোনো ভ্রমণ সম্পূর্ণ হয় না। ল্যান্ডস অ্যান্ড ব্রিটেনের অন্যতম প্রিয় ল্যান্ডমার্ক, যা তার অনন্য অবস্থান এবং সুন্দর দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত। ভিনদেশে পড়ে থাকলেও দেশকে ভোলার জো নেই। ভালো-মন্দে প্রিয় স্বদেশ বারবার মনের আঙ্গিনায় এক্কাদোক্কা খেলে। আমরা ফিরে যাই হোটেলে। সেখান থেকে ইন্ডিয়ান কুইন্স রেস্টুরেন্টের মালিক  মোহাম্মদ হোসাইন দুলু  ভাই আমন্ত্রণে তার রেস্টুরেন্টে খাবার খাই। ধন্যবাদ দুলু ভাই। রাত কাটে আমাদের গল্পে। ৪ দিন  আর ৩ রাত আমরা কাটিয়ে দেই। (চলবে...)

লেখক : সংবাদকর্মী, ইউকে

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!