রংপুরের পীরগঞ্জ পৌরসভার ১২টি পদে নিয়োগ নিয়ে কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। পৌরসভা সৃষ্টি পর থেকে দীর্ঘ ৮ বছর মাস্টাররোলে চাকরি করার পর খালি হাতে আহাজারি আর চোখের পানিতে বিদায় নিতে হয়েছে অনেককেই। দীর্ঘ ৮ বছর পর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পাবার পর রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক খাদিজা বেগম পৌরসচিবকে নিয়ে কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিগত সরকারের দোসর পৌর সচিব আব্দুর রহিমের ভাই ও ইউএনওর ড্রাইভারের ভাইকে নিয়োগ দেওয়া, গভীররাতে নিয়োগের ফলাফল প্রকাশ, স্বজনপ্রীতি, কিস্তিতে নিয়োগ প্রদানের বিষয়টি পীরগঞ্জে ‘টক অব টাউনে’ পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি ওই নিয়োগ বাতিলের দাবিতে ফুঁসে উঠছেন পীরগঞ্জবাসী। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, ঘেরাওসহ নানামুখী আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও অভিযোগে জানা জানা যায়, বিগত ২০১৭ সালে মেয়র এএসএম তাজিমুল ইসলাম শামীম পীরগঞ্জ পৌরসভার ১২টি শূন্যপদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্পন্ন হয়নি। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকারের পতন হলে পৌর মেয়র পালিয়ে যান। মেয়রের দোসর পীরগঞ্জ পৌরসভার সচিব আব্দুর রহিম উল্লেখিত পদগুলোতে নিয়োগ দিতে পৌর প্রশাসক ও পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা বেগমকে প্রলুব্ধ করেন। ফলে ৮ বছর পর গত ২১ এপ্রিল ২০২৫ ঘুপচি বিজ্ঞাপন দিয়ে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর সর্বমোট ৩৬৩ জন আবেদন করলেও মাত্র ১৩৬ জনকে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেওয়া হয়। কর্মচারী নিয়োগ ও বাছাইয়ে গঠিত ৫ সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক ইউএনও খাদিজা বেগম, সদস্য জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি সহকারী কমিশনার তমাল আজাদ, সরকারি শাহ্ আব্দুর রউফ কলেজের অধ্যক্ষ আবু বক্কর সিদ্দিক সরকার, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ্ মোসলেম উদ্দিন এবং পৌর সচিব আব্দুর রহিম গত ৫ সেপ্টেম্বর পীরগঞ্জ পৌর সদরের কছিমন নেছা বালিকা বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হয়।
লিখিত পরীক্ষার পর সবারই মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে ওইদিন গভীররাতে ১২ পদের স্থলে ৭ পদে ফলাফল দেওয়া হয়। কিন্তু ৯ জনকে নিয়োগ দেখানো হয়। এখনো ৩ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। কিস্তিতে নিয়োগ দেওয়ায় পীরগঞ্জে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রতি পদে ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত উৎকোচ বুঝে পাওয়ার পর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যারা এখনো উৎকোচের টাকা দিতে পারেনি, তাদেরকে কিস্তিতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয়দের দাবি, যোগ্যতা ও মেধাকে উপেক্ষা করে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে। অথচ শুরু থেকে কর্মকর্তরা এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবার কথা ছিল। তা না করে টাকার বিনিময়ে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে ক্ষোভ ও হতাশায় ভুগছেন বঞ্চিত প্রার্থীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিয়োগ কমিটির এক সদস্য বলেন, গভীররাতে নিয়োগের কোনো নিয়ম নেই, এতে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। আমরাও বিতর্কিত হয়েছি।
নিয়োগের যাবতীয় অনিয়মের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মাধ্যমে ঝড় তোলা বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান পল্টন বলেন, রাত দুইটা পর্যন্ত ফলাফলের জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের কাজ করার এত আগ্রহ কেন? নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিভিন্নভাবে গোঁজামিল, আর্থিক লেনদেন, স্বজনপ্রীতি করায় নিয়োগটি বাতিলের জন্য আমরা সংবাদ সম্মেলন করে গণস্বাক্ষর নিয়ে ইউএনও এবং জেলা প্রশাসককে দিব। তারপর স্বচ্ছ নিয়োগ পরীক্ষার দাবি করব। এটি না করা হলে বিতর্কিত নিয়োগ বাতিলের জন্য হাইকোর্টে রিট করব। তারপরও নিয়োগ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন করে দাবি আদায় করব।
এ ব্যাপারে ইউএনও খাদিজা বেগম বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে হয়েছে। দুর্নীতির সুযোগ নেই। কেউ দুর্নীতি করলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন