শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫, ০১:২১ এএম

নিষিদ্ধ জালে হুমকিতে দেশি মাছ

কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫, ০১:২১ এএম

নিষিদ্ধ জালে হুমকিতে দেশি মাছ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় চলতি মৌসুমে পর্যপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় খাল-বিল, নদী-নালা ও জলাশয়ে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নতুন পানিতে নানা প্রজাতির দেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু মৎস্যশিকারি নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি, রিং ও কারেন্ট জাল দিয়ে নির্বিচারে পোনাসহ ছোট-বড় দেশি মাছ ধরছেন। এ অবস্থা মাছশূন্য হয়ে পড়ছে জলাশয়গুলো। এতে একদিকে যেমন মাছের উৎপাদন কমছে, তেমনি বিলুপ্তির মুখে পড়েছে দেশি প্রজাতির মাছের ভান্ডার।

এদিকে নিষিদ্ধ এসব জালে শুধু মাছের ক্ষতি হচ্ছে তা নয়, এই জাল জলাশয়ে থাকা অন্যান্য জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকর। এর কারণে পানিতে থাকা অন্যান্য জলজ প্রাণীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে, যা জলজ জীববৈচিত্র্যকেও হুমকির মুখে পড়েছে।

জানা যায়, নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি, রিং ও কারেন্ট জালগুলো অন্য জালের থেকে অনেকটাই আলাদা। এগুলো সাধারণ জাল থেকে এক ফুটের ওপর উচ্চতা ও ৬০ থেকে ৯০ ফুট দৈর্ঘ্য হয়ে থাকে, যা ক্ষুদ্র ফাঁসবিশিষ্ট ধনুক আকৃতির হয়। লোহার রড় ও রডের রিং দিয়ে খোপ আকারের বাক্স তৈরি করে চারপাশ সূক্ষ্ম জাল দিয়ে ঘেরাও করে তৈরি করা হয়। দেখতে ছোট ছোট খোপের মতো। মূলত এ জাল পানির নিচে পাতা থাকায় তা সহজে চোখে পড়ে না। তবে অগভীর পানিতে পুঁতে রাখা খুঁটির মাধ্যমে তার উপস্থিতি বোঝা যায়।

এ কারণে এসব জালের ফাঁদে ছোট-বড় সব প্রকার দেশি মাছ ধরা পড়ছে। এমনকি ডিমওয়ালা মা মাছ ও পোনাও ধরা পড়ছে, যা মাছের প্রজনন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে। ফলে দেশি প্রজাতির মাছ যেমন- পুঁটি, কই, শিং, টেংরা, গজার ইত্যাদি বিলুপ্তির পথে।

স্থানীয়রা বলছেন, এসব জাল নিষিদ্ধ হলেও বাজারে হরহামেশায় কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় এক শ্রেণির অসাধু মৎস্যশিকারি অতি লোভে নিষিদ্ধ এসব জাল ব্যবহার করে নির্বিচারে দেশি প্রজাতির মাছ ধ্বংশ করছে। মূলত প্রশাসনের উদাসীনতা এবং নজরদারির অভাবে এই ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। যা দেশিয মাছের সরবরাহ কমিয়ে দিচ্ছে এবং জলজ জীববৈচিত্র্যকেও হুমকির মুখে ফেলছে।

মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলার ৯৮.০৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনে মোট গ্রাম রয়েছে ১৩০টি। এর মধ্যে ছোট-বড় পুকুরসহ প্রজেক্ট রয়েছে ২ হাজার ৩৪৮টি, বিল রয়েছে ১৩টি, নদী ৩টি, খাল ৩টি ও প্লাবণ ভূমি রয়েছে ৮টি। সেই সঙ্গে নিবন্ধিত জেলে ২ হাজার ২৮ ও মৎস্যচাষি রয়েছে ২ হাজার ১০৭ জন। সরেজমিন উপজেলার মোগড়া ও ধরখার এলাকায় দেখা যায়, একশ্রেণির অসাধু মৎস্যশিকারি নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি, রিং ও কারেন্ট জাল দিয়ে নদী ও জলাশয় থেকে মাছ নিধন করছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ শিকারি রিং জাল দিয়ে মাছ শিকার করছেন।

উপজেলার ধরখার এলাকার মো. আলী আকবর জানান, এখন খাল-বিলসহ চারদিকে পানি হয়েছে। এ পানিতে দেশি নানা জাতের মাছ দেখা যায়। কিন্তু এক শ্রেণির লোকজন  নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ও চায়না রিং জাল দিয়ে প্রতিদিন ছোট ছোট পোনা মাছ ধরে বিক্রি করছেন। এভাবে চলতে থাকলে এলাকার দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

মোগড়া এলাকার আলম মিয়া বলেন, প্রতিদিন সকালে হাঁটতে বের হলে দেখা যায় চায়না রিং জালের চিত্র। দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় স্থানীয় মৎস্যশিকারিরা এ জাল বাজার থেকে কিনে আনছেন।

মাছশিকারি রবি দাস জানান, একসময় বড় বেড় জাল দিয়ে মাছ ধরা হতো। তা ছাড়া এখন দেশি জালে তেমন মাছ উঠে না। তাই চায়না রিং জাল দিয়ে নদী থেকে মাছ ধরছি।

একাধিক মৎস্যজীবী জানায়, আগে খাল-বিল, জলাশয় ও নদীতে প্রচুর দেশি নানা জাতের মাছ পাওয়া যেত। বছরের বেশি ভাগ সময় জাল দিয়ে মাছ ধরে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা হতো। কিন্তু এখন চায়না জালের কারণে মাছ তেমন পাওয়া যায় না। আবার পোনা মাছ নিধন হওয়ায় বড় মাছও হয় না। চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে যেভাবে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা ধরা হচ্ছে, দ্রুত এসব বন্ধ করা না হলে দেশি মাছ অচিরেই হারিয়ে যাবে।

উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ও চায়না জাল দিয়ে মাছ শিকার করার কোনো সুযোগ নেই। এরই মধ্যে তিতাস নদীতে বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে এসব জাল জব্দ ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। কোনোভাবেই নিষিদ্ধ রিং জাল দিয়ে মাছ ধরতে দেওয়া যাবে না। নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!