রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মেহেদী হাসান খাজা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫, ১১:১৪ পিএম

মব যখন ‘স্বার্থ’ হাসিলের অস্ত্র 

মেহেদী হাসান খাজা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫, ১১:১৪ পিএম

মব যখন ‘স্বার্থ’ হাসিলের অস্ত্র 

আওয়ামী লীগ করার অপরাধ কিংবা চুরির অপবাদ দিয়ে জনসম্মুখে পিটিয়ে হত্যা, পোশাকের অজুহাতে নারী হেনস্তা, ধর্ম অবমাননার অভিযোগে কবর থেকে উঠিয়ে লাশ পোড়ানোÑ মব বা উচ্ছৃঙ্খল জনতার নৈরাজ্যের এমন ঘটনা দেশে ঘটছে নিত্যই। এমন খবর অনেকটা গা সওয়া হয়ে গিয়েছে যেন। যদিও এসব ঘটনায় জনমনে প্রশ্নÑ  তবে কি মবের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। গত বছরের আগস্ট মাসে আওয়ামী সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পার হয়েছে এক বছরের বেশি সময়। এতদিনেও মব ভায়োলেন্সের লাগাম টানতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, মবকে একটি বিশেষ শ্রেণি অসাধু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও স্বার্থ হাসিলের অস্ত্র বানিয়ে ফেলেছে। এটা নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। 
অপরাধ বিশ্লেষকেরা বলছেন, মব জাস্টিস হলো জনতা নিজ হাতে আইন তুলে নেওয়ার মাধ্যমে বিচার করা, এটি একটি গুরুতর সামাজিক সমস্যা যা অনেক দেশেই দেখা যায়।

এর মাধ্যমে উত্তেজিত জনতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাউকে শাস্তি দেয়। এই শাস্তি প্রায়ই মারধর, নির্যাতন বা হত্যার মতো ঘটনা ঘটে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মব জাস্টিসের বিভিন্ন কারণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছেÑ আইন প্রয়োগ ও বিচার বিভাগের দুর্বলতা, সামাজিক অসাম্য, রাজনৈতিক উত্তেজনা, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, মিথ্যা তথ্যের প্রসার ইত্যাদি। তবে মবের পরিণতিও ভয়াবহ। এর মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ, নিরপরাধ লোকের জীবন বিপন্ন, দেশের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

অপরাধ বিশ্লেষকদের দাবিÑ মব জাস্টিস প্রতিরোধের বেশকিছু করণীয় রয়েছে। এর মধ্যেÑ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করা, বিচার বিভাগকে স্বাধীন ও দক্ষ করা, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা, শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা ও মিডিয়ায় মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করা। যেটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য মতে, গত এক বছরের হিসাবে আগস্ট ২০২৪ থেকে জুলাই ২০২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে মব সৃষ্টির মাধ্যমে।

মব নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা: এদিকে অধিকাংশ মবের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায়নি। বরং তাদের নিষ্ক্রিয় অবস্থান বিভিন্ন মহলে প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন নিষ্ক্রিয় ভূমিকা এবং মবের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির নজির স্থাপন করতে না পারার কারণে ব্যক্তি থেকে শুরু করে বিভিন্ন গোষ্ঠী, সবাই মব তৈরির মাধ্যমে যে যার স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে। ফলে দেশে অস্থিরতা ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। 

রাজনৈতিক অনেক দল ও গোষ্ঠী মবকে কাজে লাগতে চাচ্ছে এমনটা অভিযোগ করে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, বর্তমান সময়ে মব সৃষ্টি করে যখন মানুষকে নাজেহাল ও হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি দেখেছি মবের মাধ্যমে একজন মানুষের লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে ফেলা হলো। এসবের মাধ্যমে ভীতির সঞ্চার করে সমাজের মধ্যে অনেক মানুষ নিজ স্বার্থ হাসিল করছেন। এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। 

মবের শিকার পুলিশ, আত্মরক্ষার্থে পায়ে গুলি করতে পারে পরামর্শ: গত মঙ্গলবার রাজধানীর খিলগাঁও রেলগেট এলাকায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকালে একটি প্রাইভেট কার থেকে কনস্টেবলকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়। কয়েক মিনিট পর ওই ব্যক্তিসহ আরও ছয়-সাতটি মোটরসাইকেলে ১৫ জন লোক ফিরে এসে দায়িত্বরত সেই পুলিশ সদস্যকে বেধড়ক মারধর করেন। এ সময় কাছাকাছি থাকা বিট কর্মকর্তা তাকে উদ্ধারে এগিয়ে গেলে তাকেও মারধর করা হয়। এর এক দিন আগে গত সোমবার রাতে মব নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে রাজধানীর আদাবরের সুনিবিড় হাউজিং এলাকায় এক পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে জখম করে সন্ত্রাসীরা। একই কায়দায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আক্রান্ত হচ্ছে পুলিশ ও বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। গণঅভ্যুত্থানের পর এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। কিন্তু নতুন করে এ ধরনের আক্রমণ ভাবিয়ে তুলছে পুলিশ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকেও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব প্রতিরোধে আইনের ভেতর থেকে পুলিশকে কঠোর হতে হবে। তা না হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব হবে না। দরকার হলে পুলিশকে গুলি করার অনুমতি দিতে হবে। তারা যাতে আত্মরক্ষার্থে পায়ে গুলি করতে পারেন।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক উমর ফারুক বলেন, পুলিশকে কঠোর হতে হবে। তারা যেন আইনের ভেতর থেকে কঠোর হয়ে এসব প্রতিরোধ করতে পারে, বিষয়টি আমলে নিয়ে পুলিশকে নতুন রূপে তৈরি করতে হবে। এছাড়া পুলিশকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে পারলেই সমাজ থেকে মব প্রতিরোধ করা সম্ভব। পুলিশ ঘুরে না দাড়ালে এসব সমস্যা কোনোদিনই যাবে না।  
এই বিষয়ে সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা জানান, পুুলিশ ও সাধারণ মানুুষের ওপর হামলাÑ এক কথায় বলা যায়, যারা মব তৈরি করে দেশকে ধ্বংস করতে চাইছে তাদের ক্ষেত্রে পুলিশের কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই। যেখানে যেমন আচরণ করা দরকার পুলিশকে দায়িত্ব নিয়ে সেটাই করতে হবে, এমনভাবে এটা প্রতিরোধ করতে হবে যাতে অন্যরা মব তৈরিতে সাহস না করে। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস) তালেবুর রহমান বলেন, পুলিশ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। সম্প্রতি নানা ধরনের অপরাধের কারণে ঢাকায় প্রায় শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মবকারী ব্যক্তিদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজ ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন বলেন, মবের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে পুলিশের নীরব ভূমিকায় জনমনে প্রতিনিয়তই উদ্বেগ বাড়ছে। এসব ঘটনা ঠেকাতে পুলিশ দায়িত্ব নিচ্ছে না। অনেক জায়গায় দায়িত্ব নিলেও পুলিশ ও মবের শিকার হচ্ছে। এসব বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়- পুলিশের আইনগত ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে। পুুলিশ কঠোর হলে মব মুহূর্তেই চলে যাবে বলে মনে করেন এই অধ্যাপক।   
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!