- প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা
- নেই অধিকাংশ চালকের লাইসেন্স
দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় গত ১১ বছরে ৮৬ হাজার ৬৯০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৫৭ জন। গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘যাত্রী অধিকার দিবস’ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় এ তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, গত ১১ বছরে দেশে ৬২ হাজার ৬১৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। সড়কে প্রাণহানি এখন এক ভয়াবহ বাস্তবতা। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য গণপরিবহন খাতে উন্নয়ন ও সংস্কার জরুরি। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে শুধু রাজধানী ঢাকাতেই যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। বছরে এ ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া জ্বালানি অপচয়ে ক্ষতি হচ্ছে আরও ১১ হাজার কোটি টাকার।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকার কারণে কেবল আর্থিক ক্ষতিই নয়, মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট, কিডনি ও ফুসফুসজনিত জটিলতা বাড়ছে। এমনকি যানজটের বিরক্তি থেকে সংসার ভাঙার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে। শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশ ও স্নায়বিক ক্ষতির অন্যতম কারণ হিসেবেও অতিরিক্ত যানজটকে দায়ী করা হচ্ছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব আরও বলেন, ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইন যাত্রী ও নাগরিক সমাজের মতামত উপেক্ষা করে প্রণীত হওয়ায় কার্যকর সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়েছে। উন্নত গণপরিবহন না থাকায় মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, অটোরিকশার মতো ছোট যানবাহন প্রধান পরিবহনে পরিণত হয়েছে। আর প্রাইভেট পরিবহনের ওপর নির্ভরশীল মানুষের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬ শতাংশে।
তিনি অভিযোগ করেন, বিগত সরকারের দুর্নীতি ও ভুল নীতির কারণে যানজট আজ নগর থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত। অথচ অন্তর্বর্তী সরকারও এখনো কোনো কার্যকর সংস্কারমূলক উদ্যোগ নেয়নি।
দেশের অধিকাংশ চালকের লাইসেন্স নেই জানিয়ে আলোচনা সভায় যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি শরিফ রফিকুজ্জামান বলেন, লাইসেন্সহীন ও মাদকাসক্ত চালকেরা যাতে গাড়ি চালাতে না পারেন, সে বিষয়ে সরকারকে কঠোর হতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো সোজা করে সড়ক সংস্কার না করলে দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে না।
রফিকুজ্জামান আরও বলেন, বাসভাড়ার সঙ্গে যাত্রীদের কাছ থেকে ইনস্যুরেন্সের টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীরা কোনো দিন এই সুবিধা পান না। ক্ষতিগ্রস্তদের পাওনা আদায়ে যাত্রীসাধারণকে আরও সচেতন হতে হবে।
সভায় গণ অধিকারের মুখপাত্র ফারুক খান বলেন, তারা চান, যাত্রী কল্যাণ সমিতি শক্তিশালী হয়ে সব সিদ্ধান্ত প্রণয়নে অংশগ্রহণ করবে, যাতে তাদের দাবি বাস্তবায়িত হয়। কোনো দল বা সরকারের বিরুদ্ধে নয়, জনগণের পক্ষের কথা তারা বলতে চান। তাদের লক্ষ্য হলো, যাত্রীদের অধিকার সুরক্ষিত রাখা, সৎ ও ন্যায়সংগতভাবে দাবি পূরণ করা।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক মেজর (অব.) আবদুল ওহাব মিনার, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকম-লীর সদস্য দীপক রয়, যাত্রীকল্যাণ সমিতির অর্থ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।
আলোচনা সভায় বক্তারা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, নতুন বাংলাদেশে সড়কে প্রাণহানি ও যানজট নিরসনের জন্য নির্বাচনি ইশতেহারে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন