জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচআরসি) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া উন্মোচন করেছে সরকার। মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গতকাল শনিবার কক্সবাজারে ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯ সংস্কার বিষয়ে অংশীজন পরামর্শ সভা’য় এ খসড়া প্রকাশ করা হয়। এটি বিদ্যমান আইনকে প্রতিস্থাপন করবে।
নতুন খসড়া অধ্যাদেশে কমিশনের স্বাধীনতা, অন্তর্ভুক্তি ও জবাবদিহি আরও জোরদার করার পাশাপাশি এর ক্ষমতাকে প্যারিস নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয়েছে। খসড়ায় গ্লোবাল অ্যালায়েন্স অব ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ইনস্টিটিউশনসের (জিএএনএইচআরআই) মূল সুপারিশগুলোও প্রতিফলিত হয়েছে। পরামর্শ সভাটির আয়োজন করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও সংসদবিষয়ক বিভাগ। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাস্তবায়িত ‘স্ট্রেংদেনিং ইনস্টিটিউশনস, পলিসিস অ্যান্ড সার্ভিসেস’ প্রকল্পের আওতায় এবং বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের সহযোগিতায় এ সভা হয়।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত এবং নাগরিক অংশগ্রহণভিত্তিক মানবাধিকার কমিশনই হতে পারে প্রকৃত স্বাধীন ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান।’ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মান পূরণ এবং জনআস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় একটি স্বাধীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক মানবাধিকার কমিশন অপরিহার্য।’
শাসনব্যবস্থার উন্নয়ন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ইউএনডিপির মূল অগ্রাধিকার বলে অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন সংস্থাটির বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার। তিনি বলেন, ‘একটি শক্তিশালী মানবাধিকার কমিশন গড়ে তুলতে বাংলাদেশের জনগণের পাশে আছি।’ সুইস রাষ্ট্রদূত রেটো রেংগ্লি মনে করেন, ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন সংশোধন কমিশনের স্বাধীনতা, কার্যকারিতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত জরুরি। একটি শক্তিশালী কমিশন নাগরিক অধিকার সুরক্ষার পাশাপাশি গণতন্ত্রকে সুসংহত করবে।’
সুইডিশ রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইক্স বলেন, ‘স্বাধীন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান গণতান্ত্রিক সমাজের মূল ভিত্তি। বাংলাদেশ যে সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে, সুইডেন তা পূর্ণ সমর্থন করছে।’
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ পরামর্শক ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওন। এ ছাড়া জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) কক্সবাজারের মানবাধিকার কর্মকর্তা ইফতিখার সাঈদ আলী জাতিসংঘের অবস্থান তুলে ধরেন। সভায় আরও বক্তব্য দেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের সিনিয়র রুল অব ল, জাস্টিস ও সিকিউরিটি অ্যাডভাইজর রোমানা শোয়েগার এবং বলপূর্বক গুম তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী।
এর আগে সিলেট ও খুলনায় একই ধরনের পরামর্শ সভা হয়। বিভাগীয় পর্যায়ে আরও কয়েকটি সভা হবে। সবশেষে ঢাকায় জাতীয় সংলাপের মাধ্যমে সংশোধনীর চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন করা হবে। নাগরিকদের আগামী ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে খসড়া অধ্যাদেশ সম্পর্কে মতামত ও মন্তব্য পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন