ভারত ও পাকিস্তান ম্যাচ শেষ হলেও বিতর্ক থেমে নেই। ক্রিকেট বিশে^ আলোচনার তুঙ্গে এ দুই দলের নানা প্রসঙ্গ। হাত না মেলানোর যে ঘটনা ঘটিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটররা, তাতে পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক আফিদি ভারত ‘অপমানিত’ হয়েছে বলে মনে করেন। অন্যদিকে, ভারতের কিংবদন্তি সৌরভ গাঙ্গুলি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখেননি। ওই দিন ম্যানচেস্টার ডার্বি দেখেছেন তিনি।
আফ্রিদির মতে, গত মে মাসে আকাশযুদ্ধে পাকিস্তানের কাছে হেরে পুরোপুরি পাগল হয়ে গেছে ভারতীয় সরকার। তাদের নির্দেশেই ভারতীয় ক্রিকেটাররা মাঠে হাত মেলাননি বলে মনে করেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক। তার মতে, এ ঘটনায় আরও বেশি অপমানিত হয়েছে ভারত। এশিয়া কাপের ম্যাচে পাকিস্তানিদের সঙ্গে ভারতীয় দলের হাত না মেলানোর ঘটনায় বিতর্কের যে ঢেউ চলছে, সেখানে আফ্রিদির ঝোড়ো হাওয়া বইয়ে দেওয়া একরকম অবধারিতই ছিল। পাকিস্তানের সামা টিভিতে আলোচনায় সাবেক এই অলরাউন্ডার স্রেফ ধুয়ে দিয়েছেন ভারতীয় সরকারকে। এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ বর্জন করার জন্য ভারতে বেশ কিছুদিন ধরেই প্রচারণা চলছিল সামাজিক মাধ্যমে। ভারতের সাবেক ক্রিকেটারদের মধ্যেও কয়েকজন সোচ্চার ছিলেন এই দাবিতে।
আফ্রিদির ধারণা, ম্যাচ বর্জন না করলেও সেই চাপের প্রতিফলনই পড়েছে হাত না মেলানোর সিদ্ধান্তে। আফ্রিদি বলেন, ‘এশিয়া কাপ শুরুর সময় সামাজিক মাধ্যম ভরপুর ছিল ভারত ও পাকিস্তানের ম্যাচ বর্জন করার প্রচারণায়। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ খেলা উচিত নাÑ এরকম আলোচনা ছিল প্রচুর। সেই চাপের কথা বিবেচনায় নিলে বিস্ময়ের খুব বেশি কিছু নেই যে বিসিসিআই ও তাদের ক্রিকেটারদের বলা হয়েছিল আমাদের দলের সঙ্গে হাত না মেলাতে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার মতে, কোনো খেলাধুলার কোনো চেতনা বা ভদ্রলোকের আচরণ সেখানে দেখা যায়নি। বিশ্বের সামনে আরও একবার লজ্জিত হওয়া উচিত তাদের। আমার মনে হয়, আমাদের অবস্থান ছিল একদম ঠিক। আমাদের পিসিবি-প্রধান সঠিক অবস্থান নিয়েছেন।’ ‘আরেকবার লজ্জিত হওয়া উচিত’ বলে আফ্রিদি বুঝিয়েছেন গত মে মাসে দুই দেশের যুদ্ধের ঘটনা।
গত এপ্রিলে পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় ৭ মে অপারেশন সিঁদুর পরিচালনা করে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ভারতের দাবি ছিল, তাদের এই হামলার লক্ষ্য পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংস করা। ১০ মে পাকিস্তান জবাব দেয় অপারশন ‘বুনিয়ান আল-মাসরুর’ দিয়ে। ভারতীয় সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় তারা। এর পরই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় দুই পক্ষ। আফ্রিদির মতে, সেটি ছিল ভারতের পরাজয় এবং সেটির প্রতিশোধ তারা নিতে চেয়েছে ক্রিকেট মাঠে।
এদিকে, পাকিস্তান দলকে এখন আর ভারতের ধারেকাছেও দেখেন না সৌরভ গাঙ্গুলি, বরং ভারত-আফগানিস্তান লড়াই নিয়ে বেশি আগ্রহ সাবেক এই ভারতীয় অধিনায়কের। এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে সৌরভ গাঙ্গুলির আগ্রহ টিকে ছিল স্রেফ ১৫ ওভারই। এরপরই টিভির রিমোটে চাপ দিয়ে তিনি চলে গিয়েছিলেন ম্যানচেস্টার সিটি ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের লড়াইয়ে। সাবেক ভারতীয় অধিনায়কের মতে, পাকিস্তান দল এখন আর ভারতের ধারেকাছেও নেই, এই লড়াইয়ে নেই কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের লড়াইয়ে রোববার পাকিস্তানকে অনায়াসেই ৭ উইকেটে হারায় ভারত। এ নিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে ১৪ ম্যাচের ১১টিতেই জিতল ভারতীয়রা।
সবশেষ পাঁচ ম্যাচে তাদের জয় চারটিতেই। ওয়ানডে লড়াইয়ের ইতিহাসে এখনো এগিয়ে পাকিস্তান। তাদের ৭৩ জয়ের বিপরীতে ভারতের জয় ৫৮টি। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ভারতের দাপট একতরফা। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে সবশেষ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল পাকিস্তান। এরপর গত আট বছরে নিষ্পত্তি হওয়া ছয়টি ম্যাচেই জিতেছে ভারত এবং প্রতি ম্যাচই ছিল একতরফা। কলকাতায় সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সৌরভ বললেন, অতীতের কারণেই এখন পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে এত আলোচনা হয়। এখন দুই দলের মধ্যে তিনি দেখেন বিশাল ফারাক।
তিনি বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের লড়াইয়ে এখন আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। আমি সব সময় বলি, আমরা এখনো পাকিস্তানকে বিচার করি সেই ওয়াকার ইউনিস, ওয়াসিম আকরাম, জাভেদ মিয়াঁদাদ, সাঈদ আনোয়ারদের দিয়ে। কিন্তু এখন পাকিস্তানের সেই অবস্থা নেই। এখন তো পুরোপুরি উল্টো। এখন পাকিস্তান কোনো তুলনাতেই আসে না (ভারতের সঙ্গে)। সম্মান রেখেই বলছি সেটা।’ তিনি আরও বলেন, ‘কারণ, তাদের আগের দল তো আমি দেখেছি। এখন দুই দলের গুণমানে অনেক পার্থক্য। ভারতীয় দলে এখন ভিরাট কোহলি, রোহিত শার্মা নেই, যারা লম্বা সময় ধরে ছিল ভারতীয় ক্রিকেটের স্তম্ভ। ওদের ছাড়াই সহজে জিতেছে ভারত। ভারতীয় দল এখন পাকিস্তান ও এশিয়া কাপের অন্য বেশির ভাগ দল থেকেই অনেক এগিয়ে। হ্যাঁ, দু-একদিন হয়তো এই ভারতীয় দলও হারবে। তবে বেশির ভাগ দিনে তারাই থাকবে সেরা।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন