তার জনপ্রিয়তার নজির ঢালিউডে বিরল। অভিনয়ে নাম লেখিয়ে বাংলা সিনেমার গতিপথ বদলে দেন তিনি। আজ সেই ক্ষণজন্মা নায়কের জন্মদিন। বেঁচে থাকলে ৫৫ বছরে পা রাখতেন তিনি। যে কারণে বাংলার সিনেমাপ্রেমীদের এই দিনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আজকের এই দিনটিতেই জন্মেছিলেন বাংলা সিনেমার রাজপুত্র নায়ক সালমান শাহ।
সিলেটের দাড়িয়াপাড়ায় এক অভিজাত পরিবারে ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন সালমান শাহ। সালমানের আসল নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। তবে ইমন নয়, চলচ্চিত্রে সালমান শাহ নামেই পরিচিতি পান তিনি। অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ থাকায় ১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে রুপালি পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেছিলেন সালমান শাহ।
সিনেমায় অভিনয়ের আগে টেলিভিশন নাটক দিয়ে অভিনয়জীবন শুরু করেছিলেন এ তারকা। বেশকিছু নাটক ও টেলিফিল্মে দেখা যায় তাকে। তারপরই সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে নব্বই দশকে চলচ্চিত্রে রোমান্টিক ঘরানার এক ভিন্ন ধারা তৈরি করেন এই নায়ক। মাত্র সাড়ে তিন বছরের ক্যারিয়ারে মোট ২৭টি সিনেমায় কাজ করেন সালমান শাহ। যার ১৩টি সিনেমাতেই চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন তিনি।
সালমান শাহ অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হলো ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘তোমাকে চাই’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘জীবন সংসার’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘সুজন সখী’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘প্রেম প্রিয়াসী’, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘তোমাকে চাই’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘বুকের ভেতর আগুন’ ইত্যাদি। এসব সিনেমা দিয়েই আজও অমর হয়ে আছেন ক্ষণজন্মা এ তারকা।
সালমানই একমাত্র নায়ক, সর্বমহলে যিনি গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে এবং তরুণদের স্টাইল আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিলেন। শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির দর্শকদের হলে গিয়ে সিনেমা দেখার অনভ্যাস দূর করেছিলেন। তাই সালমান অভিনীত ক্যারিয়ারের ২৭টি সিনেমার প্রায় সবকটিই ছিল ব্যবসা সফল।
দক্ষ অভিনয়, সুদর্শন চেহারা আর বিশেষ স্টাইলের জন্য রাতারাতি দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নেন এ স্বপ্নের নায়ক। ছেলে ভক্তদের পাশাপাশি প্রচুর মেয়ে ভক্ত পান নয়ের দশকের এই নায়ক। যদিও ব্যক্তিগত জীবনে এ নায়ক ছিলেন বিবাহিত।
চলচ্চিত্রে অভিষেকের আগের বছর অর্থাৎ ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট তার খালার বান্ধবীর মেয়ে সামিরা হককে বিয়ে করেন সালমান শাহ। দাম্পত্য জীবনের ৪ বছরের মাথায় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎই মাত্র ২৫ বছর বয়সে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করেন অভিনেতা। ওইদিন ঢাকার ইস্কাটনে নিজ বাসার সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করা হলেও তার মৃত্যু নিয়ে এখনো রহস্য রয়ে গেছে।
বেঁচে থাকলে বাংলা সিনেমার এই সুপারস্টার আজ ৫৫তম জন্মদিন পালন করতেন। ঠাঁই পেতেন বিশ্বের টপ টুয়েন্টি হ্যান্ডসাম ছেলেদের নামের তালিকায়ও। দেখতে দেখতে তার মৃত্যুর ২৯ বছর পার হয়ে গেছে। তবে ভক্তদের স্মৃতিতে আজও অমলিন হয়ে আছেন স্বপ্নের এ নায়ক।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন