দীর্ঘ ৯ মাস ধরে নিজ বসতবাড়িতে অবরুদ্ধ পঞ্চাশোর্ধ্ব বিধবা নারী শামসুন্নাহার। মই এবং গাছ বেয়ে দেয়াল টপকে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে ওই নারী ও তার পরিবার। আধুনিক সমাজে এ যেন মানবেতর জীবনযাপনের এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এমনকি বসতভিটা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য মা ও ছেলেকে নির্যাতন করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা ।
ঘটনাটি গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পূর্বখ- এলাকার সচিব গেট এলাকার। ২০০৫ সালে সাড়ে ৩ শতাংশ জমি কেনেন ভুক্তভোগী বিধবার প্রয়াত স্বামী আমিরুল ইসলাম। সেই জমির দাম আজ কোটি টাকা। এ কারণে প্রভাবশালীরা যেকোনোভাবে ওই জমি দখলে নিতে চাচ্ছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, বসতবাড়ির চারপাশে ঘন কাঠ, বাঁশ ও কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে প্রভাবশালীরা। এক ইঞ্চি জায়গাও নেই বসতবাড়ি থেকে বের হওয়ার। কখনো মই বেয়ে দেয়াল টপকে আবার কখনো গাছ বেয়ে ঝুঁকি নিয়ে বসতবাড়িতে যাতায়াত করছে পরিবারটি। বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এক-দেড় কেজির বেশি চাল নিয়ে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারছে না পরিবারের লোকজন।
ভুক্তভোগী শামসুন্নাহার বেগম বলেন, দীর্ঘ ৯ মাস আমি নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে আছি। মই বেয়ে, গাছে চড়ে দেয়াল টপকে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছি। বসতবাড়ির চারপাশে ঘন কাঠ-বাঁশ কাঁটাতারের বেড়া। এক ইঞ্চি জায়গা নেই বাড়ি থেকে বের হওয়ার। দীর্ঘ ৯ মাস একটি রাতও ঘুমাতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী নূরুল হুদা বসতবাড়ির চারপাশে বেড়া দিয়ে প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছেন বসতবাড়ি ছেড়ে যেতে। না গেলে রাতে নাকি বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেবে। এক-দেড় কেজি চাল কিনে দেয়াল টপকে নিয়ে যেতে হয় আমাদের।
ভুক্তভোগীর ছেলে সাইফুল ইসলাম দিপু বলেন, দীর্ঘ ৯ মাস আমাদের ওপর নির্যাতন-অত্যাচার চলছে। কয়েকবার মাকে মারধর করা হয়েছে বসতভিটা ছেড়ে চলে যেতে। কিন্তু মা বাবার কষ্টের টাকায় কেনা বসতভিটা ছেড়ে যাবেন না। ২০০৫ সালে কেনা জমির দাম আজ কোটি টাকা। এ কারণে জমির ওপর প্রভাবশালীদের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে।
অভিযুক্ত নূরুল হুদা বলেন, আমি কার নির্দেশনায় করছি এটা তাদের কাছে জানুন। আপনারা বেড়ায় টাচ করতে পারবেন না। ওই জায়গায় যেতে পারবেন না। আমার বিষয়ে তাদের সব জানা আছে। আপনাদের সঙ্গে কোনো কথা নেই। শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ বলেন, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। এখানে এক পক্ষ জমি দিতে রাজি হচ্ছে না। তাই সমস্যার সমাধান করা কষ্ট হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান করা হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন