বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৫, ১২:১৪ এএম

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে টেকসই পদক্ষেপ জরুরি

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৫, ১২:১৪ এএম

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে টেকসই পদক্ষেপ জরুরি

রোহিঙ্গা সংকট আজ বৈশ্বিক মানবিক সংকটের এক করুণ প্রতিচ্ছবি। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইনে শুরু হওয়া ভয়াবহ সহিংসতা ও গণহত্যার পর লাখো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আট বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের দুর্দশার কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি। বাংলাদেশ মানবিক কারণে সীমান্ত উন্মুক্ত রেখে এই জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছে, তবে সময় যত যাচ্ছে আন্তর্জাতিক সহায়তা কমছে, আর সংকটের বোঝা এককভাবে বাংলাদেশের কাঁধেই চেপে বসছে। এর ফলে মানবিক ও নিরাপত্তা উভয় দিক থেকেই পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে।

জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত রোহিঙ্গা ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যে সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছেন, তা রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে বাস্তবসম্মত দিকনির্দেশনা হিসেবে বিবেচনা করা যায়। নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য রূপরেখা প্রণয়ন, রাখাইনে স্থিতিশীলতা সৃষ্টি, আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানো, রোহিঙ্গাদের সামাজিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা, দাতাদের প্রতিশ্রুত অর্থ প্রদান, জবাবদিহি ও ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা এবং মাদক ও আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন, এসব পদক্ষেপ না নিলে সংকট দীর্ঘস্থায়ী হবে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও তার বক্তব্যে তিনটি মৌলিক বিষয় তুলে ধরেছেন। বেসামরিক মানুষের সুরক্ষা, মিয়ানমারের ভেতরে বাধাহীন মানবিক সহায়তা প্রবাহ এবং শরণার্থীদের আত্মনির্ভরশীল করে তুলতে জোরালো উন্নয়ন বিনিয়োগ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এতসব আহ্বান ও প্রস্তাবের পরও বাস্তবে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ কেন কার্যকর হচ্ছে না?

বাংলাদেশ শুরু থেকেই বলছে, রোহিঙ্গা সংকটের উৎস মিয়ানমার, সমাধানও সেখানেই নিহিত। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনো কার্যকরভাবে মিয়ানমার সরকার এবং আরাকান আর্মিকে আলোচনার টেবিলে আনতে পারেনি। বরং সময়ক্ষেপণ, প্রতিশ্রুত অর্থ না দেওয়া এবং ভিন্ন রাজনৈতিক স্বার্থে বিষয়টি আড়ালে ফেলে রাখার প্রবণতা স্পষ্ট। এভাবে চলতে থাকলে রোহিঙ্গা সংকট শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও মারাত্মক হুমকিতে রূপ নেবে।

এখন প্রয়োজন দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং আন্তর্জাতিক ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ। মিয়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক সবধরনের চাপ বাড়াতে হবে, যাতে তারা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করে। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখা, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর ওপর চাপ কমাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানো জরুরি।

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরানো ছাড়া এই সমস্যার কোনো টেকসই সমাধান নেই। তাই সম্মেলনের বক্তব্য কিংবা ঘোষণায় সীমাবদ্ধ না থেকে এখন বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার সময়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি এখনো দায়িত্বশীল ভূমিকা না নেয়, তবে এই মানবিক সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। বাংলাদেশের একার পক্ষে তা বহন করা অসম্ভব।

আমরা আশা করব, মানবিকতা ও বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করেই রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী ও টেকসই সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। তাই এখন প্রয়োজন একটি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল গ্রহণ করা, যেখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত থাকবে।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!