সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (গকসু) নির্বাচনে ভাইস-প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে নির্বাচিত হয়েছেন ইয়াসিন আল মৃদুল দেওয়ান। তবে এ ফলাফল নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন ও ক্ষোভ। অভিযোগ উঠেছে, পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ছিল প্রশাসনিক প্রভাব, স্বচ্ছতার অভাব এবং সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামের কোটি টাকার লবিং।
আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম ছিলেন সাভার-আশুলিয়ার এক প্রভাবশালী রাজনীতিক। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হলেও একই বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান।
অভিযোগ রয়েছে— তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সময় সরাসরি গুলি চালিয়ে ছাত্র-জনতাকে হত্যার মদদ দেন। বর্তমানে তিনি ভারতে বসে দেশবিরোধী নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আশুলিয়ায় তার বিশাল ব্যবসা-বাণিজ্য, জমিজমা ও আর্থিক সম্পদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে তিনি বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেন গকসু নির্বাচনে। উদ্দেশ্য ছিল ছাত্রলীগ-ঘনিষ্ঠ প্রার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে বসানো।
বিতর্কিত পরিবার
ভিপি পদে নির্বাচিত ইয়াসিন আল মৃদুল দেওয়ান নবীনগরের নিরিবিলি এলাকার এক বিতর্কিত প্রভাবশালী পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। তার বাবা ভোলা-টিপু একসময় এলাকায় ছিলেন আতঙ্কের নাম। জোড়া খুন, মাদক, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অসংখ্য মামলার আসামি ছিলেন তিনি। টিপুর ভাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন, যিনি আশুলিয়া থানা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক এমপি মুরাদ জংয়ের ঘনিষ্ঠ ক্যাডার ছিলেন।
পরিবারের রাজনৈতিক প্রভাব এখানেই শেষ নয়। টিপুর ভাগিনা ইমন দেওয়ান বর্তমানে ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের উপ-আইন সম্পাদক। সম্প্রতি তিনি ছাত্র হত্যার মামলায় কারাভোগ শেষে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। টিপুর বোন জামাই কামাল বর্তমানে পাথালিয়া ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সভাপতি।
অনিয়মের অভিযোগ
গকসু নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘ম্যানেজড ভোট, ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট রাখতে দেওয়া হয়নি, ভোট গণনার সময় প্রার্থী থাকতে না দেওয়া, সাংবাদিক-পুলিশ কারো প্রবেশ অনুমতি ছিল না।
শিক্ষার্থীদের আরও অভিযোগ রয়েছে, ‘গকসু নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও ট্রাস্টি বোর্ডের একটি অংশ সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে।’
ফলে ভোট গণনার সময় সাধারণ শিক্ষার্থী ও প্রার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। শিক্ষার্থীদের দাবি, আগেই ফলাফল নির্ধারণ করা ছিল এবং পুরো প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা দেখা গেছে।
ট্রাস্টি বোর্ডের অন্তর্দ্বন্দ্ব
গণস্বাস্থ্য ট্রাস্টি বোর্ড দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব, দুর্নীতি ও মামলা-মোকদ্দমায় জর্জরিত। তাদের বিরুদ্ধে বর্তমানে আশুলিয়া থানা ও ঢাকার আদালতে একাধিক মামলা চলমান।
বিশ্লেষকদের মতে, এই অস্থিরতার সুযোগ নিয়েই রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনে সক্রিয় হয়েছেন।
ক্ষোভ
নির্বাচন শেষে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা যায়। নির্বাচন প্রসঙ্গে এক শিক্ষার্থী অভিযোগ তুলে বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম নতুন নেতৃত্ব আসবে, কিন্তু তা ঘটেনি। আমরা দেখলাম সবকিছু আগে থেকেই ম্যানেজ করা ছিল। বিতর্কিত পরিবারের উত্তরসূরিকে ফের বসানো হয়েছে, এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন