গাজীপুরের শ্রীপুরে নাটকে অভিনয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অভিনয়শিল্পী তাছলিমা খাতুন আয়েশাকে রিসোর্টে নিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে নাট্যনির্মাতা নাসির উদ্দিন মাসুদ ও তার সহযোগীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় মামলা হয়েছে।
ভুক্তভোগী তাছলিমা খাতুন আয়েশা দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আজ থেকে চার-পাঁচ মাস আগে পূবাইলে শুটিং চলাকালে পরিচালক নাসির উদ্দিন মাসুদ আমার মোবাইল নম্বর নেন। এরপর থেকে তিনি নিয়মিত কল দিতেন এবং একসঙ্গে দু-একটি নাটকের শুটিংও করি। হঠাৎ ওইদিন রাতে শুটিংয়ের কথা বলে তিনি বাসা থেকে আমাকে নিয়ে যান। গভীর রাতে গাজীপুরের রাস্ রিসোর্টে নিয়ে গিয়ে মাদক সেবনের পর পরিচালক মাসুদ ও তার সহকারী বাবর আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। পরিচালক ও তার সহযোগী পালাক্রমে ধর্ষণের পর বয়স্ক এক ব্যক্তি, যাকে রিসোর্ট মালিক পক্ষের লোক হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়, সেও আমাকে ধর্ষণ করে। তারা তিনজন মিলে আমাকে গণধর্ষণ করেন। এরপর ভয়ভীতি দেখিয়ে বাবর আমার ব্যবহৃত (আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স) ছিনিয়ে নেন এবং পরে আমাকে রিসোর্ট থেকে বের করে দেন।’
বাদীর অভিযোগ, গত ২২ সেপ্টেম্বর বিকেল আনুমানিক ৩টা ৩০ মিনিটে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তাকে রিসোর্ট থেকে বের করে দেওয়া হয়। অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসা নেওয়ার পর অভিযোগ দায়ের করেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী)-এর ৯ (৩) ধারা, দণ্ডবিধির ৩২৩, ৩৮০ ও ৫০৬ ধারায় শ্রীপুর থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে নির্মাতা নাসির উদ্দিন মাসুদকে একাধিকবার ফোন দিলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা তুহিন আহমেদ নুকু রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘রাস্ রিসোর্টের বিরুদ্ধে বহুদিন ধরেই অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। আমরা দেখেছি এখানে প্রায়ই তরুণ-তরুণীরা রুম ভাড়া নেয়। দিনের বেলাতেও ডে-লং প্যাকেজে অনৈতিক কাজ হয়। অথচ কর্তৃপক্ষ সবসময় অস্বীকার করে।’
ঘটনার পর রাস্ রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ওয়েবসাইটে দেওয়া দুটি নম্বরে কথা হয়। ফোন রিসিভ করেন রায়হান ও সাইফ নামের দুইজন। তারা নিজেদেরকে ‘থার্ড পার্টি’ দাবি করে রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা শুধু বুকিং দেই। এই ধরনের ঘটনার বিষয়ে কিছু জানি না।’
তাদের কাছে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের নম্বর চাওয়া হলে বলেন, ‘সরি, আমরা দিতে পারব না।’
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং গুরুতর অপরাধের শামিল। ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা আইনগত প্রক্রিয়া শুরু করেছি। ইতোমধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনসহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিযুক্তদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে রিসোর্টটির ভেতরে প্রাথমিক তদন্ত চালিয়েছি এবং প্রয়োজনীয় প্রমাণ সংগ্রহের কাজ চলছে। প্রমাণ মিললে শুধু অভিযুক্ত ব্যক্তিরাই নয়, রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ কারও প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট নয়, আমরা ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। এ ধরনের অপরাধ আমাদের সমাজের জন্য কলঙ্কজনক, তাই অপরাধীরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, তাদের আইনের মুখোমুখি করা হবে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন