** শহরজুড়ে ছিল পুলিশের কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয়
শ্বাসরুদ্ধকর একটি রাত কাটিয়েছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রশাসন (বিএমপি)। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব দুর্গাপূজার নবমীর রাতে নৈরাজ্যের আশঙ্কায় গোটা শহরে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়। বিশেষ করে গত বুধবার রাতে শহরের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়কে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য এবং আনসার বাহিনীকেও দুর্গোৎসব আয়োজনস্থলের আশপাশে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে দেখা গেছে। গভীর রাতে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের তৎপর রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ডিসি পদমর্যাদার দুজন কর্মকর্তা। তাদের তদারকি করতে গিয়ে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন খোদ পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম।
পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে খবর আসেÑ দুর্গোৎসব আয়োজনকে ঘিরে সমাজে হিংসা ছড়ানোর হুমকি রয়েছে। আকস্মিক এই খবরের ভিত্তিতে দুর্গোৎসবে নিরাপত্তা জোরদারে মাঠপুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। বিশেষ করে বিএমপির অন্তর্গত ৪ থানাসহ ফাঁড়ি পুলিশকে সহিংসতা রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশ দেয়।
মাঠপুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করলেও তারা নাম প্রকাশে অনিচ্ছার কথা জানিয়ে বলেছেন, বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সতর্কবার্তায় নড়েচড়ে বসে বিএমপি পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে শহরে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করার নির্দেশনা দিয়ে মাঠপুলিশের সার্বিক কার্যক্রম তদারকি করতে থাকেন ডিসি পদমর্যাদার দুই কর্মকর্তাসহ পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম।
থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গভীর রাতে শীর্ষ কর্মকর্তাদের নির্দেশনার আলোকে মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন ৪ থানাসহ ফাঁড়ি পুলিশ দুর্গোৎসব আয়োজনস্থলকেন্দ্রিক কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে। পুলিশের এই কঠোরতায় নবমীর রাতে শহরে কোথাও অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা না ঘটলেও নিরাপত্তাব্যবস্থার ধারাবাহিকতা বৃহস্পতিবার রাতেও ধরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএমপি। রাত জেগে পুলিশের নিরাপত্তা দেওয়া নিয়ে সনাতনি সম্প্রদায়ের মধ্যে ইতিবাচক নানান আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে সেই প্রশংসায় পুলিশ কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অগ্রভাগে রাখছেন।
দুর্গোৎসব আয়োজনকে ঘিরে বুধবার রাতে পুলিশ যে শাসরুদ্ধকর সময় অতিবাহিত করেছে, তা বিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইনও স্বীকার করেছেন। এই পুলিশ কর্মকর্তা রূপালী বাংলাদেশকে জানান, এত দিন মন্দিরগুলোতে কমসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকলেও বুধবার রাতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনার আলোকে সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা হয়। এবং ৪ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহরের বিভিন্ন এলাকাসমূহের উপাসনালয়গুলোতে ঘুরেছেন, সেখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সাথে কথা বলছেন। মাঠপুলিশের এই কর্মকা- নির্ঘুম থেকে তদারকি করেন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম। পুলিশের এই সাহসী ভূমিকার কারণে বরিশাল শহরের কোনো স্থানে অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
অবশ্য এর আগেই দুর্গোৎসবকে ঘিরে কোনো ধরনের নৈরাজ্য তৈরি করতে চাইলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম। ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বুধবার রাত থেকে মন্দিরগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয় এবং বৃহস্পতিবার রাতেও প্রতিমা বিসর্জনের আগপর্যন্ত মন্দিরকেন্দ্রিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বজায় থাকবে।
পুলিশের এই বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ সনাতনি সম্প্রদায়ের নেতাদের পুলকিত করেছে। এই ধর্মের কল্যাণে নিয়োজিত বিএনপিপন্থি সংগঠন ‘বরিশাল হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট’র সদস্যসচিব কানু সাহা এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলছেন, এবারের দুর্গোৎসবে সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নিরাপত্তা দিতে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তা প্রশংসার দাবি রাখে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন