শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মিনহাজুর রহমান নয়ন

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২৫, ০৪:০০ পিএম

জল, জঙ্গল সবুজের স্বপ্নপুরী

মিনহাজুর রহমান নয়ন

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২৫, ০৪:০০ পিএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

সিলেটের প্রকৃতিতে এমন এক মায়া লুকিয়ে আছে, যা চোখে দেখে নয়, হৃদয়ে ছুঁয়ে বোঝা যায়। সেখানে শহরের কোলাহল থেকে দূরে, গোয়াইনঘাট উপজেলার জুগিরকান্দি গ্রামে বিস্তৃত হয়েছে এক অনন্য জলাবন মায়াবন। স্থানীয়দের দেওয়া এই নামই যেন বলে দেয় এর প্রকৃত চরিত্র: সবুজ, নিঃশব্দ, রহস্যময়, আর একরকম টান ধরে রাখা শান্ত সৌন্দর্য।

সবুজের রাজ্য: চারদিক অথৈই জল, মাঝখানে সারি সারি হিজল ও করচ গাছ। প্রতিফলনে গাছেরা যেন পানিতে হেলে পড়েছে। কোথাও পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ, কোথাও বাতাসে দুলছে পাতার কান্না সব মিলিয়ে এক অভাবনীয় পরিবেশ। বর্ষাকালে যখন পুরো বন পানিতে ডুবে যায়, তখন এই জলমগ্ন বনের সৌন্দর্য কয়েকগুণ বেড়ে যায়। জলে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলোর ফাঁকে ফাঁকে টলমলে পানির পথ যেন এক রহস্যময় জলছবি।

যেভাবে যাবেন মায়াবনে: সিলেট শহর থেকে রওনা দিন সারিঘাট-গোয়াইনঘাট সড়ক ধরে। প্রায় ৩৫-৩৭ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে পৌঁছান বেখরা খাল ঘাটে। এখানেই খালের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে ভাড়ার নৌকা। সেখান থেকে শুরু হয় মূল যাত্রা। দেড় কিলোমিটার জুড়ে বেখরা খাল ধরে এগোতে এগোতে চোখে পড়ে বাংলার গ্রামীণ সৌন্দর্য কাশবন, পাখির কলকাকলি, দূরের মেঘালয় পাহাড়ের ছায়া। নৌকার দুই পাশে তখন মায়াবনের প্রবেশদ্বার, যেন আপনি ধীরে ধীরে ঢুকে পড়ছেন এক সবুজ রূপকথার রাজ্যে।

চোখের শান্তি: এখানে আসলে চোখে পরবে হিজল-করচের বন যেখানে গাছের পাতা ভেজা, ডালে ঝুলে পড়া শিশির, আর জলের বুকে প্রতিফলন এক অপার্থিব দৃশ্য চোখে পরবে। এরপর আসতে পারেন বেখরা খাল এখানে সারি নদীর শাখা এই খাল বনের বুকচিরে প্রবাহিত, যার দুপাশে সারিবদ্ধ গাছ আপনাকে অভ্যর্থনা জানায়। আসে পাশে পাখির বসতি লক্ষ্য করা যায় কাশবনের মাঝে মাঝে দেখা মেলে নানা জাতের পাখি বক, দোয়েল, মাছরাঙা আর দূরে ভেসে বেড়ানো একটি ঘুঘু। এখানে আপনার চোখকে শান্তি দেবে দিগন্তজোড়া সবুজের পেছনে মেঘে ঢাকা মেঘালয় পাহাড়।

ভ্রমণের সেরা সময়: সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর এই বর্ষার সময়ে জলাবন তখন তার পূর্ণরূপে ধরা দেয়। পুরো বন ডুবে থাকে পানিতে। আর নভেম্বর থেকে জানুয়ারি শীতের সময়ে পানির পরিমাণ কমে এলেও, শুষ্ক পাতার মাঝে এক নান্দনিক সৌন্দর্য দেখা যায়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস: নৌকা ভ্রমণের সময় লাইফ জ্যাকেট পরুন। খাবার ও পানি সঙ্গে রাখুন, কারণ আশপাশে দোকান তেমন নেই। পরিবেশ রক্ষা করুন, আবর্জনা ফেলবেন না। পাখি বা বন্যপ্রাণীর প্রতি সচেতন থাকুন, তাদের বিরক্ত করবেন না। স্থানীয় গাইড বা মাঝির সহায়তা নিন, তারা পথ চেনাতে ও নিরাপত্তায় সাহায্য করবেন।

থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা: মায়াবনের পাশে থাকার তেমন ব্যবস্থা না থাকায়, আপনি চাইলে সিলেট শহরে ফিরে গিয়ে হোটেল নিতে পারেন। অথবা গোয়াইনঘাটের কাছাকাছি ছোট অতিথিশালা বা গেস্ট হাউসও পাওয়া যেতে পারে। খাবারের জন্য স্থানীয় বাজার থেকে কিছু কিনে নেওয়া যায়, তবে নিরাপদ ও সাশ্রয়ী হবে নিজস্ব খাবার বহন করা।

ক্যামেরায় বন্দি করুন: মায়াবন শুধু চোখে দেখার নয়, হৃদয়ে গেঁথে রাখার জায়গা। এখানে প্রতিটি দৃশ্যই ফ্রেমের জন্য আদর্শ কিছু দৃশ্য ধরা পরে যেমন- জলে দাঁড়িয়ে থাকা গাছ, নৌকা ছুঁয়ে যাওয়া পানির ঢেউ, বনের মাঝে পড়ন্ত বিকেলের আলো, পাহাড়ের কোল ঘেঁষে মেঘের খেলা। সিলেট শহর  যাবেন বেখরা এর পর  নৌকা ভাড়া পৌঁছে যাবেন অলীক, অথচ বাস্তব স্বর্গের নাম মায়াবন। এখানে নেই শোরগোল, নেই অতিরিক্ত ভিড়। আছে শুধু জল, গাছ, পাখি, আর শান্তির শীতল পরশ। একদিনের এই ভ্রমণ আপনাকে শুধু প্রকৃতির সান্নিধ্যই দেবে না, মনে হবে আপনি ফিরে পেয়েছেন নিজেকেও।

Link copied!