দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নরসিংদীর ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানায় গত চার দিন ধরে সার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গত ৩০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) রাত থেকে কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
কারখানার একাধিক সূত্র জানায়, হঠাৎ যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় বৃহস্পতিবার রাত দুইটার দিকে সার উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এতে দৈনিক প্রায় ২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এখন ধান ও শাকসবজির ভরা মৌসুম হওয়ায় উৎপাদন বন্ধের ফলে সার সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সার কারখানাটি ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এই প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী কারখানা। কারখানাটির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ১০ লাখ টন ইউরিয়া সার। গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮ লাখ টন, তবে উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ ১৬ হাজার টন, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি।
কারখানার জেনারেল ম্যানেজার (কারিগরি) সরফরাজ খান বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কী কারণে এই ত্রুটি দেখা দিয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে আমাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন ও প্রস্তাবনা দিতে বলা হয়েছে।’
অন্যদিকে, জেনারেল ম্যানেজার (বাণিজ্য) আতিকুর রহমান খান জানান, ‘যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কারখানার উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। তবে আমাদের গুদামে বস্তা ও খোলা অবস্থায় প্রায় ২৪ হাজার টন ইউরিয়া সার মজুত আছে। ফলে আপাতত সার সংকটের আশঙ্কা নেই।’
জিএম (প্রশাসন) মো. ফখরুল আলম বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম এই ইউরিয়া সার কারখানাটি গত অর্থবছরে লক্ষ্য ছাপিয়ে উৎপাদন করেছে। হঠাৎ যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সাময়িকভাবে উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে স্টার্টআপ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, আশা করা যাচ্ছে দ্রুতই আবার উৎপাদন শুরু হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কারখানার গুদামে যথেষ্ট পরিমাণে সার মজুত আছে। তাই উৎপাদন বন্ধ থাকলেও বাজারে তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়বে না বলে আমরা আশা করছি।’
এখন চলছে আমন ধান ও বিভিন্ন শাক-সবজির চাষ মৌসুম। এই সময়ে ইউরিয়া সার কৃষকদের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপকরণ। দেশের বৃহত্তম এই সার কারখানাটি বন্ধ থাকায় কৃষক ও সচেতন মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, ঘোড়াশাল-পলাশ কারখানার সরবরাহ বন্ধ থাকলে স্থানীয় বাজারে দাম বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। ‘আগে থেকেই সার পেতে কিছুটা ভোগান্তি হয়, এখন যদি উৎপাদন বন্ধ থাকে, তাহলে সংকট দেখা দিতে পারে’Ñ বলেছেন নরসিংদীর পলাশ উপজেলার কৃষকরা।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ত্রুটির প্রকৃত কারণ নির্ণয় ও মেরামতের কাজ শেষ হলেই উৎপাদন পুনরায় শুরু করা হবে। পাশাপাশি যান্ত্রিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে কারখানার টেকনিক্যাল টিম নিয়মিতভাবে রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করছে।
দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে আধুনিক ও ব্যয়বহুল ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ঘোড়াশাল-পলাশ সার কারখানায় হঠাৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের কৃষিখাতে এক অপ্রত্যাশিত ধাক্কা। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি ‘সাময়িক’ সমস্যা এবং দ্রুতই উৎপাদন স্বাভাবিক হবে, তবুও কৃষক ও সংশ্লিষ্টরা চায় দীর্ঘমেয়াদি নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন নিশ্চিত করার উদ্যোগÍযাতে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা ব্যাহত না হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন