সোমবার, ০৩ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২৫, ০২:০২ এএম

‘গ্রে জোনে’ জড়ো রুশ সেনাবহর, কঠিন পরিস্থিতির মুখে ইউক্রেন

ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২৫, ০২:০২ এএম

‘গ্রে জোনে’ জড়ো রুশ সেনাবহর, কঠিন পরিস্থিতির মুখে ইউক্রেন

গুরুত্বপূর্ণ শহর পোকরোভস্ক। সেখানে রুশ সেনারা বড় ধরনের আক্রমণ চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের জেনারেল ওলেক্সান্দর সিরস্কি। এই শীর্ষ সামরিক কমান্ডার জানান, তার সেনারা সেখানে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। হাজার হাজার রুশ সেনা সেখানে অবস্থান নেওয়ায় তারা অবরুদ্ধ অবস্থায় পড়েছেন। ‘গ্রে জোন’-এ পরিণত হওয়া পোকরোভস্ক শহর একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন ও সরবরাহ কেন্দ্র। শহরটি দখল করতে পারলে রাশিয়া পুরো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্য সুবিধা পেতে পারে। এদিকে মস্কোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ইউক্রেনীয় সেনারা আত্মসমর্পণ করছে এবং হেলিকপ্টারে নেমে আসার পর তাদের ১১ বিশেষ বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছেন। তবে কিয়েভ এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। শনিবার টেলিগ্রামে দেওয়া পোস্টগুলোতে জেনারেল সিরস্কি জানান, পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্ক অঞ্চলে অবস্থানরত সামরিক কমান্ডারদের কাছ থেকে সরাসরি সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে তিনি আবারও ফ্রন্টলাইনে ফিরে গেছেন।

রুশ বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ লাইনে হামলা করতে থাকায় সেগুলো রক্ষায় বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান কমান্ডার। স্বল্পদৈর্ঘ্য একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সিরস্কি ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা প্রধান কিরিলো বুদানভসহ অন্য কমান্ডারদের সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রের মানচিত্র পর্যালোচনা করছেন। তবে ভিডিওটি কবে এবং কোথায় ধারণ করা হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য পায়নি বিবিসি। রাশিয়া এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দখল করার চেষ্টা করছে। আর বিশেষ বাহিনী মোতায়েনের এই পদক্ষেপ থেকে বোঝা যায়, কিয়েভ যেকোনো মূল্যে ওই শহরটি ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বিশেষ বাহিনীর অভিযানের তত্ত্বাবধান করতে ওই গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সামরিক গোয়েন্দা প্রধান কিরিলো বুদানভের অবস্থান নেওয়া সম্পর্কে ইউক্রেনীয় গণমাধ্যম আগেই জানিয়েছিল।

গত শনিবার ইউক্রেনের সপ্তম র‌্যাপিড রেসপন্স কর্পস জানিয়েছে, পোকরোভস্কে ইউক্রেনীয় সেনারা তাদের ‘কৌশলগত অবস্থান উন্নত করেছে’, তবে পরিস্থিতি এখনো ‘কঠিন ও পরিবর্তনশীল’। এর আগে শুক্রবার রাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেন, পোকরোভস্কের প্রতিরক্ষা এখন ‘অগ্রাধিকারমূলক’ বিষয়।

এদিকে রোববার (২ নভেম্বর) ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ইউক্রেন সংঘাত সমাধানের জন্য কাজ করা প্রয়োজন, তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে এই মুহূর্তে জরুরি বৈঠকের কোনো প্রয়োজন নেই। দুই নেতার মধ্যে সরাসরি বৈঠকের সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে রুশ বার্তা সংস্থা তাসকে তিনি বলেন, ‘কল্পনাপ্রসূতভাবে বলতে গেলে, এটা সম্ভব। তবে এই মুহূর্তে এর কোনো প্রয়োজন নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই পর্যায়ে, নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ার সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলোর ওপর সূক্ষ্ম কাজ অপরিহার্য।’ পেসকভের মন্তব্য এমন এক প্রেক্ষাপটে এসেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া আলোচনা স্থগিত রয়েছে।

মস্কো বারবার বলে আসছে, ইউক্রেন প্রকৃত সংলাপের চেয়ে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। যেমনÑ টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের মতো উন্নত পশ্চিমা অস্ত্র চেয়ে অনুরোধ। সাম্প্রতিক আলাস্কা বৈঠকের পর ট্রাম্প এবং পুতিনের মধ্যে সর্বশেষ ফোনালাপটি গত ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তাদের কথা হয়েছিল। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পর থেকে এটি ছিল দুই নেতার মধ্যে অষ্টমবারের মতো সরাসরি যোগাযোগ।

অন্যদিকে রাশিয়া-দখলকৃত আঞ্চলিক রাজধানী দোনেৎস্কের পশ্চিমে অবস্থিত এই কৌশলগত শহরটিতে রুশ অগ্রগতির খবর ক্রমেই বাড়ছে। শুক্রবার রাতে সংবাদ সংস্থাগুলোর সঙ্গে শেয়ার করা কিছু ছবিতে দেখা গেছে, একটি ইউক্রেনীয় ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার পোকরোভস্কের কাছে প্রায় ১০ সেনাকে নামাচ্ছে। যদিও ছবিগুলোর স্থান ও সময় যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এ দিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, তারা পোকরোভস্ক শহরের উত্তর-পশ্চিমে ইউক্রেনীয় সামরিক গোয়েন্দা বিশেষ বাহিনীর অবতরণ প্রচেষ্টা নস্যাৎ করেছে এবং হেলিকপ্টার থেকে নেমে আসা ১১ সেনাকে হত্যা করেছে। ইউক্রেনের ওপেন-সোর্স মনিটরিং গ্রুপ ডিপস্টেট অনুমান করছে, পোকরোভস্কের প্রায় অর্ধেক এলাকা এখন ‘গ্রে জোন’-এ পরিণত হয়েছে, যেখানে কোনো পক্ষই সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেই।

মস্কো চাইছে দোনেৎস্ক ও পার্শ্ববর্তী লুহানস্ক অঞ্চল (যা সম্মিলিতভাবে দোনবাস নামে পরিচিত) কিয়েভ শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়ার হাতে তুলে দিক, এমনকি সেই অংশগুলোও যেগুলো বর্তমানে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে নেই। কিয়েভের ধারণা, পোকরোভস্ক দখলের মাধ্যমে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝাতে চায় যে তাদের সামরিক অভিযান সফল হচ্ছে এবং সেই যুক্তিতে পশ্চিমা দেশগুলো যেন রাশিয়ার দাবিগুলো মেনে নেয়। এদিকে ক্রেমলিনের শান্তি আলোচনা এগিয়ে নিতে ব্যর্থতার কারণে ওয়াশিংটন ক্রমবর্ধমানভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।

এর ফলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার দুই বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন এবং প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে নির্ধারিত শীর্ষ বৈঠকের পরিকল্পনাও বাতিল করেছেন। জেলেনস্কি প্রকাশ্যে ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছেন, যার মাধ্যমে বর্তমান ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ থামিয়ে সংঘাতটিকে স্থিতাবস্থায় আনার কথা বলা হয়েছে। তবে পুতিন এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি এখনো সেই দাবিগুলোতেই অনড় রয়েছেন, যেগুলো কিয়েভ ও এর পশ্চিমা মিত্ররা ইউক্রেনের বাস্তবিক আত্মসমর্পণ হিসেবে দেখছে।

ইউক্রেনের সেনাপ্রধান জেনারেল ওলেক্সান্দর সিরস্কি স্বীকার করেছেন, পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহর পোকরোভস্ক রক্ষায় ইউক্রেনীয় বাহিনী এখন ‘অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির’ মুখে পড়েছে। তিনি জানান, সেখানে ইউক্রেনীয় সেনারা ‘বহুসংখ্যক শত্রু বাহিনীর’ বিরুদ্ধে লড়ছে। সিরস্কি রুশ পক্ষের দাবি অস্বীকার করেছেন যে ইউক্রেনীয় সেনারা শহরটিতে অবরুদ্ধ বা চারদিক থেকে ঘেরা। তিনি নিশ্চিত করেছেন, গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহপথ রক্ষায় ইউক্রেনের বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, যদিও এসব পথ রুশ গোলার আগুনের নিচে রয়েছে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, কয়েকজন ইউক্রেনীয় সেনা আত্মসমর্পণ করেছে এবং হেলিকপ্টারযোগে নামানো ইউক্রেনের ১১ জন বিশেষ বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছে। তবে কিয়েভ এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। শনিবার সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় সিরস্কি বলেন, তিনি আবারও পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক ফ্রন্টে গিয়ে সামরিক কমান্ডারদের কাছ থেকে সরাসরি পরিস্থিতি শুনেছেন। প্রকাশিত এক ভিডিওতে তাকে যুদ্ধক্ষেত্রের মানচিত্র পর্যালোচনা করতে দেখা যায়, যেখানে ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দাপ্রধান কিরিলো বুদানভও উপস্থিত ছিলেন।

ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জাপোরিজিয়া প্রদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থাকে লক্ষ্য করে শনিবার রাতভর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছেন সেখানকার প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। এ ছাড়া রুশ হামলায় জাপোরিজ্জিয়ায় দুজন আহত এবং প্রদেশটির সংলগ্ন বন্দরশহর ওডেসায় দুজন নিহতও হয়েছেন। রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চ্যানেল টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক বার্তায় এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন জাপোরিজিয়ার আঞ্চলিক গভর্নর ইভান ফেদেরভ।

টেলিগ্রাম পোস্টে ফেদেরভ বলেন, ‘শনিবার রুশ বাহিনীর রাতভর হামলায় জাপোরিজিয়ার বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থার গুরুতর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই মুহূর্তে প্রদেশের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছেন। এ ছাড়া প্রদেশের অন্তত দুজন আহত এবং জাপোরিজিয়ার সংলগ্ন ওডেসায় দুজন নিহত হয়েছেন রুশ হামলায়।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!