যুদ্ধবিরতির পর ত্রাণের পরিমাণ কিছুটা বাড়লেও গাজার মানুষ এখনো খাদ্য, পানি, ওষুধসহ জরুরি জিনিসের তীব্র সংকটে ভুগছে। অনেক পরিবার এখনো আশ্রয়হীন। তাদের বাড়ি-ঘর ও মহল্লা ইসরায়েলের দুই বছরের ধারাবাহিক হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। গাজার সরকারি জনসংযোগ কার্যালয় জানিয়েছে, ১০ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ৩ হাজার ২০৩টি বাণিজ্যিক ও ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। অর্থাৎ গড়ে দিনে ১৪৫টি ট্রাক ঢুকতে পেরেছে। অথচ চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন ৬০০টি ট্রাক প্রবেশের কথা ছিল।
অর্থাৎ মাত্র ২৪ শতাংশ সহায়তাই গাজায় ঢুকেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর এই বাধার কঠোর নিন্দা জানাই। ২৪ লাখের বেশি মানুষের ওপর যে মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে, তার পূর্ণ দায় ইসরায়েলের।’ গাজার কর্তৃপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও অন্য মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে মানবিক সহায়তা বিনা শর্তে গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন গাজা পুনর্গঠনের জন্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সম্ভাব্য দাতাদের কাছে যে প্রধান প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করেছে, তার মধ্যে একটিতে বলা হয়েছেÑগাজার পূর্বাংশ যেটি বর্তমানে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে; সেখানে প্রায় অর্ধ ডজন আবাসিক অঞ্চল নির্মাণ করতে চায় তারা।
এ তথ্যটি আরব কূটনৈতিক সূত্র দ্য টাইমস অব ইসরায়েলকে জানিয়েছে। সূত্রগুলো জানিয়েছে, মার্কিন কর্মকর্তারা এই প্রকল্পটিকে ‘নিউ গাজা’ নামে উল্লেখ করছেন, যা ‘ইয়োলো লাইন’-এর পূর্ব দিকে নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই ‘ইয়োলো লাইন’ হচ্ছে নতুন সীমারেখা, যেখানে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর, অর্থাৎ ১০ অক্টোবর আংশিকভাবে সরে যায়। এই আংশিক প্রত্যাহারের ফলে গাজার প্রায় ৫৩ শতাংশ ভূখ-ের নিয়ন্ত্রণ পায় ইসরায়েল।
তবে ট্রাম্পের যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ইসরায়েল ধীরে ধীরে গাজার সীমান্তের অপর প্রান্তে সরে যাবে এবং গাজা ছাড়বে। তবে এই প্রত্যাহার দুটি কঠিন শর্তের ওপর নির্ভর করছেÑএকটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) গঠন, যা যুদ্ধ-পরবর্তী গাজায় নিরাপত্তা বজায় রাখবে এবং হামাসের নিরস্ত্রীকরণÍযা এখন পর্যন্ত হামাস কোনো আগ্রহ দেখায়নি। এই দুই শর্তই বাস্তবায়ন করা কঠিন হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র অপেক্ষা না করে পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু করতে চায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শীর্ষ উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন প্রথমে ‘ইয়োলো লাইন’-এর ইসরায়েল-নিয়ন্ত্রিত অংশ এবং বিশেষ করে দক্ষিণের শহর রাফাহ থেকে কাজ শুরু করতে চায়। মার্কিন প্রস্তাব অনুযায়ী, দুই বছরের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে (যা গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক) ‘ইয়োলো লাইন’-এর ইসরায়েল-নিয়ন্ত্রিত নতুন আবাসিক এলাকাগুলোতে স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনা রয়েছেÑযদিও তখন আইডিএফ সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার নাও করতে পারে।
দুই কূটনীতিক জানিয়েছেন, এই লক্ষ্য অত্যন্ত অবাস্তব। একজন আরব কূটনীতিক বলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা হয়তো হামাসের শাসনের অধীনে থাকতে চায় না, কিন্তু তারা কি সেই পক্ষের নিয়ন্ত্রণে গিয়ে বসবাস করতে রাজি হবে, যাদের তারা প্রায় ৭০ হাজার মানুষের হত্যার জন্য দায়ী মনে করেÑএই ধারণা সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত। তবে হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাজার যুদ্ধ-পরবর্তী ব্যবস্থাপনা নিয়ে এখনো কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা গৃহীত হয়নি; আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে এবং বিভিন্ন ধারণা বিবেচনা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন