ঢাকা শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫

এবার আফগানদের জোর করে বিতাড়িত করার অভিযোগ ইরানের বিরুদ্ধে

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ১১:০৭ পিএম

সবার চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ আর হতাশার কালো ছায়া। সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র টেনে নিচ্ছে শিশুরাও। এমন অনেকেই আছন, যাদের পরনে থাকা কাপড় ছাড়া আর কিছুই নেই। ইসরায়েলের গুপ্তচর আখ্যা দিয়ে আফগান নাগরিকদের ইরান থেকে ফেরত পাঠানো অব্যাহত থাকায়, সীমান্ত এলাকার দৃশ্য এখন এমনই। আটক, মারধর ও হয়রানির পর জোর করে ইরান থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী আফগানদের। যার কারণে অনেকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। এমনকি ইরানের মতো তালেবান সরকারও নারীদের কর্মসংস্থান এবং শিক্ষার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করায় ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন আফগান নারীরা। মূলত ইসরায়েলের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করার অভিযোগে, প্রায় প্রতিদিনই আফগান শরণার্থীদের দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে ইরান। যার কারণে আফগানদের অর্থনৈতিক সংকটও তীব্র হওয়ার শঙ্কা বাড়ছে। এর মধ্য দিয়ে জীবনের এক অনিশ্চিত অধ্যায়ের কবলে ইরান থেকে বিতাড়িত আফগানরা। ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে ১২ দিনের সংঘাতের সময় থেকে পুলিশ আটক ও নিপীড়নের মাত্রা বাড়িয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বহু মানুষ। এমনই অসহায় আফগানদের মধ্যে একজন বলেন, ‘ইরানের পরিস্থিতি এমন ছিল যে পুরো এক মাস ঘর থেকে বের হতে পারিনি। বাইরে বের হলেই পুলিশের মুখোমুখি হতে হতো। তারা আমাদের মারধর করত, হয়রানি করত, ধরে নিয়ে যেত।’ আরেকজন বলেন, ‘ইরানের পুলিশ আমাকে আটক করেছিল। তারা আমাদের মঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করেছে, মারধর করেছে। আমার গাড়ি কেড়ে নিয়েছে এবং দোকানটাও বন্ধ করে দিয়েছে। আমি এখন কী করব জানি না।’ অন্য আরেকজন বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ইরানে কাজ করেছি এবং আমার পরিবারের সঙ্গে থাকতাম। আমাকে আটকের পর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। তারা এখন কোথায় আছে বলতে পারছি না।’ কর্মসংস্থান এবং শিক্ষার ওপর তালেবান সরকারের বিধি-নিষেধে নিজ দেশে ফিরেও জীবন-জীবিকা নিয়ে উদ্বিগ্ন আফগান নারীরা। এর মধ্যে মাদকাসক্ত স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়া ৩৭ বছর বয়সি নারী রাহেলা অন্যতম। জীবনযুদ্ধে কীভাবে এগিয়ে যাবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রাহেলা ও তার দুই কন্যাসন্তান। রাহেলা বলেন, ‘আমি অনেক উদ্বিগ্ন। দুশ্চিন্তায় ঘুমাতে পারছি না। কোনো কাজ নেই। দুই মেয়ের ভবিষ্যৎও অন্ধকার।’ পড়াশোনার জন্য অনেক আগ্রহী রাহেলার মেয়েরা। কিন্তু ইরান সরকার নারীদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ দিত না। তালেবান সরকারের শাসনব্যবস্থায় আফগানিস্তানেও একই হাল। এ অবস্থায় তারা স্বপ্ন দেখেন, একদিন পরিবর্তন হবে এই শাসনব্যসস্থার। রাহেলার মেয়ে বলেন, ‘কোনো কিছুই স্থায়ী নয়। সৃষ্টিকর্তা সব করতে পারেন। এই ব্যবস্থারও হয়তো একদিন পরিবর্তন করবেন। আমরা একদিন আমাদের স্বপ্নে পৌঁছাব। আশা ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।’ আফগানিস্তানের হেরাত ও নিমরোজের মতো সীমান্তবর্তী প্রদেশগুলোতে প্রত্যাবর্তনকারীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। শুধু ২২ জুন থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত ৯ লাখের বেশি আফগানকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে ইরান। সব মিলিয়ে ৪০ লাখের বেশি আফগান শরণার্থীর মধ্যে চলতি বছর ইতিমধ্যে ১৫ লাখের বেশি আফগানকে বের করে দিয়েছে তেহরান। আরও দশ লাখের বেশি মানুষ নির্বাসনের ঝুঁকিতে। ফলে আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক চাপ আরও গভীর হওয়ার শঙ্কা বাড়ছে। এদিকে ইসরায়েল হত্যা করতে পারে, এই আশঙ্কায় অন্তত ১৫ শীর্ষ পরমাণুবিজ্ঞানীকে আত্মগোপনে পাঠিয়েছে ইরান। সন্দেহ থাকায় তাদের কয়েকজনের দেহরক্ষী বদলানো হয়েছে। আর যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিলেন, তাদের জায়গায় পরমাণু কর্মসূচির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেইÑ এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংসে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ২০১০ সাল থেকে দেশটির বেশ কয়েকজন পরমাণুবিজ্ঞানীকে গুপ্তহত্যা করেছে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। ইরানের পরমাণুবিজ্ঞানীদের সম্পর্কে তথ্য পেতে দেশটিতে গুপ্তচরবৃত্তি করছে মোসাদের এজেন্টরা।