ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫

পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠক, বৈঠক ঘিরে উত্তপ্ত বিশ্ব রাজনীতি

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৫, ০৮:১২ এএম

ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠক শেষ হলো। এবার পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠক নিয়ে উত্তপ্ত বিশ্ব রাজনীতি। ইউক্রেনে শান্তি ফেরাতে নানা তৎপরতা সত্ত্বেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে দেশটির ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে। জেলেনস্কি বলছেন, ইউক্রেন ও তার মিত্ররা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু এ নিশ্চয়তা আসলে কতটা বাস্তবসম্মত? আদৌ তা কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এমনকি যুদ্ধ বন্ধ হলেও, রাশিয়া ফের আক্রমণ করলে এটি কার্যকরী হবে কি না, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। গত সোমবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে ঐতিহাসিক বৈঠকের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, তার দেশ ও মিত্ররা এখন নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বাস্তব রূপরেখা কী হতে পারে, তা নিয়ে কাজ করছে। অন্যদিকে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার নেতৃত্ব দিচ্ছেন কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং নামে একটি জোটের।

যারা যুদ্ধোত্তর ইউক্রেনে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে প্রস্তুত। এ লক্ষ্যে জোট শরিকদের সঙ্গে আলোচনাও করছেন তিনি। আর ইউক্রেনের নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নির্ধারণে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন, ব্রিটিশ সেনাপ্রধান অ্যাডমিরাল স্যার টনি রাডাকিন। তবে এ ‘নিরাপত্তা নিশ্চয়তা’ প্রকৃত অর্থে কী? এমনকি ইউক্রেন ফের রাশিয়ার আক্রমণের মুখে পড়লে, এটি আদৌ কার্যকর থাকবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে নানা মহলে। ইউক্রেন চায় ন্যাটোর সদস্যপদ, যা আপাতত হচ্ছে না। কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের শর্ত হিসেবে তা নাকচ করে দিয়েছেন। ইউরোপের কিছু দেশও ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে সম্মতি জানিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তার কিছুটা আভাস মিলেছে বিশ্লেষকদের বক্তব্যে, যা হলো- ইউক্রেনের আকাশসীমা পর্যবেক্ষণ, কৃষ্ণসাগরে নৌ চলাচলের নিরাপত্তা, সেনা প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ আর ভবিষ্যতে রাশিয়া চুক্তি লঙ্ঘন করলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ। যদিও ট্রাম্প বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে। তবে তারা সেখানে কোনো মার্কিন সেনা পাঠাবে না। আবার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের অবস্থান পরিবর্তনশীল ফলে ইউরোপীয় দেশগুলো আস্থা পাচ্ছে না।

অন্যদিকে রাশিয়া বলছে, ইউক্রেনে তারা ন্যাটোর উপস্থিতি কখনোই মেনে নেবে না। নিরাপত্তা নিশ্চয়তা মস্কোর বিরুদ্ধে গেলে পশ্চিমা শক্তির ওপর চড়াও হতে পারে রাশিয়া, এমন আশঙ্কাও রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে ইউক্রেনকে এমনভাবে নিরাপত্তা দিতে হবে যাতে রাশিয়া পরবর্তী সময়ে যেকোনো হামলা চালাতে ভয় পায়। তবে এ ক্ষেত্রে আগ্রাসী হওয়া যাবে না। কেননা সে ক্ষেত্রে রাশিয়া, ইউক্রেন এমনকি পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গেও সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে। সব মিলিয়ে একটি বিষয় স্পষ্ট, আর তা হলো ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা এখনো ধোঁয়াশায়।

কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং এখনো একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। সামরিক দিক থেকে এটি কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করছে আগামী দিনের কূটনৈতিক ও কৌশলগত সিদ্ধান্তের ওপর। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে সরাসরি বৈঠকের সম্ভাব্য স্থান হিসেবে হাঙ্গেরি রাজধানী বুদাপেস্টকে বিবেচনা করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকো। মার্কিন এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ তথ্য প্রকাশ করেছে গণমাধ্যমটি।

পলিটিকোর প্রতিবেদনে বলা হয়, পুতিন-জেলেনস্কির বৈঠকের ভেন্যু নির্ধারণের বিষয়ে হোয়াইট হাউসের আলোচনা এখনো চলছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিস হাঙ্গেরিতে সম্ভাব্য সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পুতিন ট্রাম্পকে জানিয়েছেন, তিনি বৈঠকের স্থান হিসেবে মস্কোকেই প্রাধান্য দেন। অন্যদিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বিকল্প হিসেবে জেনেভার নাম প্রস্তাব করেছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে শিগগিরই একটি বৈঠক হবে বলে প্রত্যাশা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে সম্ভাব্য সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকার ইচ্ছে নেই তার।

মঙ্গলবার মার্কিন বেতার সাংবাদকি মার্ক লেভিনের অনুষ্ঠান মার্ক লেভিন’স রেডিও শো-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি উভয়ের সঙ্গেই আমার খুবই সফল বৈঠক হয়েছে। এখন আমি ভাবছি, তাদের দুজনের বৈঠকে বসা প্রয়োজন। সেই বৈঠকে আমার উপস্থিতি থাকবে না।’ ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে রুশ প্রেসিডেন্টকে চাপে রাখতে রাশিয়ার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা ভাবছেন ইউরোপিয়ান নেতারা। যুক্তরাজ্য মঙ্গল এ কথা জানিয়েছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বলেছে, মস্কোর ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করে ভ্লাদিমির পুতিনকে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতেই কাজ করছে ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’ এর দেশগুলো। অচিরেই সংঘাত শেষ না হলে, রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়ানো অব্যাহত রাখবে তারা। এ বিষয়ে মার্কিন নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা করবেন ইউরোপিয়ান নেতারা।

যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই ইউক্রেনের কাছে এক হাজার নিহত সেনার দেহাবশেষ হস্তান্তর করেছে রাশিয়া। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সহযোগী ভ্লাদিমির মেডিনস্কি। একইসঙ্গে মস্কো ইউক্রেন থেকে তার ১৯ জন নিহত সেনার মৃতদেহও গ্রহণ করেছে।মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) তুরস্কে কিয়েভের সঙ্গে আলোচনার সময় মস্কোর প্রধান আলোচক হিসেবে মেডিনস্কি টেলিগ্রামে এ তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘ইস্তাম্বুল চুক্তি অনুসারে এই দেহাবশেষ কিয়েভে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।