বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫, ১১:৫৯ পিএম

স্বপ্নের ইউরোপে দুঃস্বপ্নের যাত্রা

ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫, ১১:৫৯ পিএম

স্বপ্নের ইউরোপে দুঃস্বপ্নের যাত্রা

ইউরোপ। এক উন্নত জীবনের হাতছানি। যে স্বপ্নের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছেন এশিয়ার হাজারো তরুণ। ইউরোপে নানা বৈষম্য-বিদ্বেষের শিকার। তারপরও থেমে নেই যাত্রা। কেন হঠাৎ নিজ দেশ ছেড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপের দিকে ঝুঁকছে দেশটির তরুণরা? কেন অবৈধভাবে সাগরপথে ইউরোপে গিয়ে মৃত্যুকে বরণ করে নিচ্ছেন তারা? সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে ভয়েস অব আমেরিকা।

ভূমধ্যসাগরের ঢেউগুলো যেন নিস্তব্ধতা চেনে না। তার নিরন্তর গর্জনে ডুবে যায় শত শত নাম, হারিয়ে যায় কতশত স্বপ্নের কণ্ঠস্বর। এ সমুদ্রের ঢেউয়ের ওপারে ছিল অনেকের স্বপ্ন। একটি সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন। ইউরোপ মানে বাংলাদেশের লাখ লাখ তরুণের কাছে এক দিগন্তজোড়া সম্ভাবনা। কেউ স্বপ্ন দেখে ইতালি, কেউ বার্সেলোনা, কেউ গ্রিস, কেউ জার্মানি। লিবিয়া হয়ে ইউরোপে যাওয়া এই অনির্দিষ্ট রুট, বাংলাদেশি তরুণদের কাছে হয়ে উঠেছে এক অনিবার্য আকর্ষণ একদিকে স্বপ্ন, অন্যদিকে মৃত্যু।

ইউরোপে যাওয়ার এ পথের প্রতিটি ধাপে আছে লুকোনো খাঁজ, যেখানে চেপে বসে আছে এক ভয়াবহ মানব পাচার নেটওয়ার্ক। সাহারা মরুভূমির উত্তপ্ত বাতাস, ত্রিপোলির বন্দি শিবিরের অন্ধকার, কিংবা আজদাবিয়ার কোনো নামহীন কবর এ পথের প্রতিটি বাঁকে ছড়িয়ে আছে একেকটি বাঙালি জীবনের শেষ অধ্যায়। ওঙগ ও টঘঐঈজ অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এ পথে ইউরোপে প্রবেশ করতে গিয়ে ১৩ হাজার ৪৪ বাংলাদেশি মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন।

সাধারণত যে রুটটি অনুসরণ করা হয় তা হলো: বাংলাদেশ থেকে দুবাই-মাস্কাট, সেখান থেকে মিসর, তারপর সাহারা পাড়ি দিয়ে লিবিয়ার ত্রিপোলি-মিজদাহ। সবশেষে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি। আমির আলী কথাই ধরুন, যখন গত গ্রীষ্মে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে তার গ্রামের সরু গলিগুলো ছেড়ে স্পেনের বিশাল চত্বরগুলোর উদ্দেশে রওনা হন, তিনি ভেবেছিলেন উন্নত এক জীবনের জন্য তার স্বপ্ন অবশেষে সত্য হতে চলেছে। এই ২১ বছর বয়সি ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশে ভিসা পেতে সাতবার ব্যর্থ হয়েছেন। ছয় মাস পর, আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিম আফ্রিকা উপকূল থেকে মরক্কোর কর্তৃপক্ষ অভিবাসীদের একটি আটকে পড়া নৌকা থেকে যে ২২ জন পাকিস্তানিকে উদ্ধার করে, আলী ছিলেন তাদের একজন।

সাগরপথে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টাকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ এখন শীর্ষে রয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই প্রায় ৯ হাজার ৭৩৫ জন বাংলাদেশি ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে প্রবেশ করেছেন। ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্যমতে, গত এক যুগে এ পথে অন্তত ৭০ হাজার বাংলাদেশি ইউরোপে প্রবেশ করেছেন। লিবিয়া যাওয়ার পথে ৬৩ শতাংশই বন্দি হয়েছেন। বন্দিদের মধ্যে ৯৩ শতাংশই ক্যাম্পে বন্দি ছিলেন। বন্দিদের ৭৯ শতাংশই শারীরিক নির্যাতনের শিকার। এ ছাড়া, লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর ৬৮ শতাংশই মুক্তভাবে চলাচলের স্বাধীনতা হারিয়েছেন। ৫৪ শতাংশই বলেছেন, তারা কখনো তিনবেলা খাবার পাননি। অন্তত ২২ শতাংশ দিনে মাত্র একবেলা খাবার পেয়েছেন।

মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমনে ২০১২ সালে সরকার আইন করার পর থেকে মানব পাচার আইনে নিয়মিত মামলা হলেও অধিকাংশ মামলার বিচার শেষ হচ্ছে না। আবার যেগুলোর বিচার শেষ হচ্ছে সেখানে আসামিরা খালাস পেয়ে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানব পাচার মামলাসংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৬০টি মামলা ঝুলে আছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৪৬টি মামলা এখনো তদন্তধীন। আর তিন হাজার ১৪ টি মামলা বিচারাধীন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত পর্যবেক্ষণ সংস্থা ফ্রন্টেক্স এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে ।বলা হয়, বর্তমানে অনিয়মিত অভিবাসনের সবচেয়ে বিপজ্জনক রুট হচ্ছে লিবিয়া থেকে ইতালিগামী সেন্ট্রাল মেডিটারেনিয়ান পথ। এই পথ ব্যবহার করে যাত্রার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৩০০-তে, যা আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে লিবিয়া হয়ে ইতালিতে পৌঁছেছেন প্রায় ২০ হাজার ৮০০ জন, যার মধ্যে অধিকাংশই বাংলাদেশি। ফ্রন্টেক্স জানিয়েছে, লিবিয়া থেকে ইউরোপমুখী যাত্রীদের বড় একটি অংশ বাংলাদেশি, এরপর রয়েছে মিসরীয় ও আফগান নাগরিকরা। এই বিপজ্জনক পথে পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকেই পাচারকারী চক্রের ফাঁদে পড়ছেন, কেউ প্রাণ হারাচ্ছেন, কেউ নিখোঁজ। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে ইউরোপে মোট অনিয়মিত অভিবাসনের সংখ্যা কমে ৭৫ হাজার ৯০০-তে দাঁড়ালেও মৃত্যুর মিছিল থামেনি। পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় রুটে অভিবাসন বেড়েছে ১৯ শতাংশ এবং শুধু জুন মাসেই অবৈধ প্রবেশ দ্বিগুণ হয়েছে।

আলজেরিয়া থেকে যাত্রার হার বেড়েছে ৮০ শতাংশ। এই রুট ব্যবহার করছে সোমালিয়া ও অন্যান্য আফ্রিকান দেশের অভিবাসীরা।

সম্প্রতি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার ইভেট কুপারকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন এবং তার পদে নিয়োগ দেন শাবানা মাহমুদকে, যিনি ব্রিটেনের বিচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। যেদিন শাবানা মাহমুদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, সেদিনই রেকর্ড সংখ্যক ১,০৯৭ জন অভিবাসী চ্যানেল পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছান। ভূমধ্যসাগরের লিবিয়ার উপকূলের কাছে সুদানী শরণার্থী বহনকারী নৌকায় অগ্নিকা-ে অন্তত ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ২৪ জনকে। তাদের চিকিৎসা চলছে। রয়টার্স এসব তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদন বলছে, স্থানীয় সময় রোববার এ ঘটনা ঘটে। ইউরোপের পথে যাত্রা করা নৌকাটিতে অন্তত ৭৫ জন শরণার্থী ছিল। জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএম জানায়, সমুদ্রে এই ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সংস্থাটি বলছে, গত মাসেও ইয়েমেন উপকূলে নৌকাডুবিতে অন্তত ৬৮ শরণার্থীর মৃত্যু হয়েছে।গবেষণা সংস্থা আইএফওপি এই সমীক্ষাটি পরিচালনা করে এবং গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এটি লিবারাসিয়ঁ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এতে উঠে এসেছে যে ফ্রান্সে মুসলমানবিরোধী ঘৃণা এক উদ্বেগজনক স্তরে পৌঁছেছে।এই সমীক্ষায় ফ্রান্সের বড় শহরগুলোতে বসবাসরত ১ হাজার ৫ জন মুসলিমকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সমীক্ষায় ফরাসি সমাজের ভয়ঙ্কর চিত্র উঠে এসেছে। ফলাফল অনুযায়ী, ফ্রান্সের ৮২ শতাংশ মুসলিম মনে করেন যে, দেশটিতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও ঘৃণা ব্যাপক রূপ নিয়েছে। ৮১ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, গত এক দশকে ঘৃণা-বিদ্বেষ বেড়েছে। অধিকাংশ উত্তরদাতা (৬৬ শতাংশ) জানিয়েছেন, গত পাঁচ বছরে তারা বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়েছেন যা সাধারণ জনগণের তুলনায় তিনগুণ বেশি।

সেনেগালের রাজধানী ডাকারের উপকূল থেকে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) কাঠের তৈরি একটি মাছ ধরা নৌকা বা ‘পিরোগ’-এ থাকা ১১২ জন অভিবাসীকে আটক করেছে কর্তৃপক্ষ।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!